ভিক্ষুকের স্বপ্ন পূরণ করলেন প্রতিমন্ত্রী

প্রকাশিত: ২৬ অক্টোবর ২০২২, ০৭:৫৩ পিএম

রাজশাহীর চারঘাটের ভিক্ষুক জেলেমনি। তার অনেক ইচ্ছে ছিল শুধু একটি ফ্রিজ কেনার। গত সোমবার (২১ অক্টোবর) বাঘা শাহী মসজিদের অজুখানা ভিত্তিপ্রস্তর অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমকে জেলেমনি জানান তার ইচ্ছের কথা।এরপর গতকাল মঙ্গলবার (২৫ অক্টোবর) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর কেনা একটি ফ্রিজ মোজাহার আলী মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ মো. নছিম উদ্দিন জেলেমনির হাতে তুলে দেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়,  রাজশাহীর বাঘা উপজেলার মনিগ্রাম ইউনিয়নের পারসাওতা বিনোদপুর গ্রামের বাসিন্দা জেলেমনি (৮০)। স্বামীর মৃত্যুর পর অনেকটায় অসহায় হয়ে পড়েন তিনি। জীবন বাঁচাতে বেছে নেন ভিক্ষাবৃত্তি। আড়াই বছরের ছেলে সিদ্দিক মন্ডলকে রেখে জেলেমনির স্বামী মারা যান। তখন দেড় মাসের পেটে ছিলেন ছোট ছেলে নজরুল মন্ডল। এরপর থেকেই মানুষের বাড়িতে চেয়েচিন্তে জীবন চালান তিনি। ভিক্ষাবৃত্তি করেই দুই ছেলেকে বড় করেছেন। বড় ছেলে সিদ্দিক মন্ডল দিনমজুরির কাজ করেন এবং ছোট ছেলে নজরুল মন্ডল পেশায় একজন ভ্যানচালক। ছেলেদের সঙ্গে একখণ্ড জমিতে থাকেন ৮০ বছর বয়সী জেলেমনি।

তবে ছেলে আয় করলেও মা জেলেমনি এখনো ভিক্ষাবৃত্তিতেই যুক্ত। সকাল হলেই বেরিয়ে পড়েন ভিক্ষার কাজে। দিন শেষে আবার ফিরে আসেন তার টিনের জরাজীর্ণ ঘরে। ঘরে বিদ্যুৎ সংযোগ আছে। আছে একটি টেবিল ও একটি চৌকি।জেলেমনি স্থানীয়দের প্রায় বলেন, স্বপ্ন হচ্ছে একটি ফ্রিজ কেনার। যদি তার একটি ফ্রিজ থাকতো, তবে তিনি তার উপার্জনের টাকায় কেনা মাছ-মাংস বা অন্যান্য খাবার ফ্রিজে সংরক্ষণ করে রাখবেন এবং প্রয়োজন মতো বের করে খাবেন। অবশেষে বৃদ্ধা জেলেমনির সেই স্বপ্ন পূরণ করেছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। গত ২১ অক্টোবর বাঘা শাহী মসজিদের অজুখানা ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের কার্যক্রমে যোগ দেবার সময় পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ারের সঙ্গে দেখা করেন জেলেমনি। সেখানে প্রতিমন্ত্রীর কাছে তার স্বপ্নের কথা বলেন। তার কথা প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার মনোযোগ দিয়ে শোনার পর তিনি তার স্বপ্ন পূরণ করেন।

মনিগ্রাম ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি জানান, ছেলের কেনা জমিতেই আলাদা বাড়ি রয়েছে বৃদ্ধা জেলেমনির। তবে তাদের তেমন কোনো জায়গা-জমি নেই। তার দুই ছেলেই দিনমজুর।জেলেমনির বড় ছেলে সিদ্দিক মণ্ডল। মায়ের ভিক্ষাবৃত্তির বিষয়ে আপত্তি তুলে তিনি বলেন, ‘মাকে বারবার ভিক্ষা করতে নিষেধ করলেও তিনি আমাদের কথা শোনেন না। তার কথা নিজেই কর্ম করে খাবো।’বাঘা মোজাহার আলী মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ মো. নছিম উদ্দিন বলেন, ফ্রিজ পেয়ে তার চোখেমুখে তৃপ্তি আর আনন্দের ছাপ দেখেছি। কাপড়ের আঁচলে চোখের পানি মুছে প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের জন্য দোয়া করেছেন তিনি। প্রতিমন্ত্রীর নির্দেশনা পালন করতে পেরে নিজে কাছেই নিজেকে ভালো লাগছে।

বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে বৃদ্ধা জেলেমনি বলেন, ‘আমি শাহরিয়ারকে বলেছি, তুমি আমার বেটা। তুমি আমাকে একটা ফ্রিজ কিনে দাও। ফ্রিজে আমি ভিক্ষার টাকায় একটু একটু খাবার রাখবো আর একটু একটু বের করে খাবো। প্রতিমন্ত্রী আমার স্বপ্ন পূরণ করেছেন। আমি তার জন্য দুহাত তুলে আল্লাহর কাছে দোয়া করি। আল্লাহ যেন তাকে সুখে-শান্তিতে রাখে।’

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: