শেরপুরে গণমাধ্যমকর্মীদের বিরুদ্ধে এ কেমন বিষেদগার!

প্রকাশিত: ২৭ অক্টোবর ২০২২, ০২:৩৮ পিএম

প্রবাদে আছে ‘কাক হয়ে কাকের মাংস খায়না’। কিন্তু শেরপুরের গণমাধ্যম অঙ্গনে এ প্রবাদটি কেন যেন মিথ্যায় পর্যবসিত হয়ে আসছে। শেরপুর প্রেসক্লাবের নির্বাচনে একাধিকবার পরাজিত হয়ে আদিল মাহমুদ উজ্জল নামের এক গণমাধ্যমকর্মী প্রতিহিংসাপরায়ন হয়ে গণমাধ্যমকর্মীদের বিরুদ্ধে একের পর এক মিথ্যা ও ভিত্তিহীন অভিযোগ তুলে নানা মহলে বিভ্রান্তি সৃষ্টির অপপ্রয়াস চালাচ্ছেন। তারই ধারাবাহিকতায় এবার তিনি প্রেসক্লাবের দু দফায় নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক মো: মেরাজ উদ্দিনসহ সিনিয়র ১২ জন গণমাধ্যম কর্মীর বিরুদ্ধে শিক্ষকতা পেশার পাশাপাশি গণমাধ্যম অঙ্গনে জড়িত থাকায় দ্বৈত পেশার অভিযোগ তুলে শেরপুরের জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত আবেদন করেন।

একই সাথে তিনি তাদের বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহনের অযৌক্তিক দাবী তুলেন। পরে জেলা প্রশাসক সাহেলা আক্তারের নির্দেশে বিষয়টি তদন্ত করতে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো: রেজুয়ান ওই ১২ গণমাধ্যমকর্মীকে কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রদান করেন। এ বিষয়টি নিয়ে গণমাধ্যমকর্মী আদিল মাহমুদ উজ্জলসহ তার অনুসারী কতিপয় গণমাধ্যমকর্মী বিভ্রান্তিমূলক খবর পরিবেশনসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানা বিষোদগারে মেতে উঠেছে। এ নিয়ে শেরপুর জেলার গণমাধ্যমকর্মীদের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে।

সারাদেশেই এমপিওভূক্ত শিক্ষকরা যুগযুগ ধরে অনেকটা শখের বশেই বিভিন্ন গণমাধ্যমে লেখালেখি করে আসছেন। জেলা ও উপজেলা তথা মফস্বল পর্যায়ে বেতনবিহীন অবস্থায় বা কেউ কেউ সামান্য সম্মানীর বিনিময়ে লেখালেখি করে আসছেন। এসব শিক্ষকরা নিয়মিত তাদের দায়িত্ব পালন করার সময়কালীনের আগে বা পরে অবসরকালীন সময়ে লেখা-লেখি করে থাকেন। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রধানদের পক্ষ থেকে কোন অভিযোগ না থাকলেও দায়িত্ব পালনে ফাঁকি দেয়ার মিথ্যা অভিযোগ তুলেছেন ওই অভিযোগকারী। এছাড়া অভিযোগকারী সিনিয়র ১২ গণমাধ্যমকর্মীর বিরুদ্ধে বিভিন্ন অফিস-আদালতে হুমকি, ধমকিসহ নানা অপকর্মে জড়িত থাকার মিথ্যা ও কাল্পনিক অভিযোগও তুলেছেন। অথচ এসব গণমাধ্যমকর্মীর বিরুদ্ধে আজ অবধি কোন মহল থেকেই এ ধরনের অভিযোগ ওঠেনি।

জানা গেছে, শেরপুর সদর উপজেলার ফসিউল দাখিল মাদ্রাসার শিক্ষক ইন্ডিপেনডেন্ট টিভি ও দৈনিক ইনকিলাব পত্রিকার মো. মেরাজ উদ্দীন, আল জামিয়াতুল ইসলামীয়া ফাজিল মাদ্রাসার শিক্ষক ও সদর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান সাবিহা জামান শাপলা দৈনিক আমাদের সময় পত্রিকায়, জেলার নকলা উপজেলার বানের্শ্বদী দাখিল মাদ্রাসার শিক্ষক মো. মোশারফ হোসেন দৈনিক আলোকিত বাংলাদেশ পত্রিকা, কলাপাড়া দাখিল মাদ্রাসার শিক্ষক মো. হারুন অর রশিদ দৈনিক আজকের বসুন্ধরা পত্রিকায়, শাহরিয়ার দাখিল মাদ্রাসার শিক্ষক মোহাম্মদ হযরত আলী দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকায়, ঝিনাইগাতি উপজেলার ভটপুর আলিম মাদ্রাসার শিক্ষক মো. রফিকুল ইসলাম দ্যা নিউন্যাশন পত্রিকা, শেরপুর সদরের মডেল গার্লস ডিগ্রি কলেজের প্রভাষক মাসুদ হাসান বাদল দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিন পত্রিকা, নকলার চন্দ্রকোনা কলেজের প্রভাষক মহিউদ্দিন সোহেল এসএ টিভি দৈনিক খোলা কাগজ পত্রিকা, নকলার সরকারি হাজি জাল মাহমুদ কলেজের প্রভাষক ড. মোহাম্মদ আনিসুর রহমান আকন্দ দ্যা ডেইলি ইনডিপেনডেন্ট পত্রিকা, সরকারি হাজি জাল মাহমুদ কলেজের প্রভাষক আব্দুল মোত্তালিব সেলিম দৈনিক ভোরের কাগজ পত্রিকা, শেরপুর সদরের নিজাম উদ্দিন কলেজের প্রভাষক যথাক্রমে রীতেশ কর্মকার দৈনিক পল্লীকন্ঠ প্রতিদিন পত্রিকায় এবং মো. মোক্তারুজ্জামান দৈনিক স্বদেশ প্রতিদিন পত্রিকায় কর্মরত আছেন মর্মে গত ১৩ সেপ্টেম্বর জেলা প্রশাসক বরাবর আবেদন করে আদিল মাহমুদ উজ্জল।

অথচ ওই ১২ গণমাধ্যমকর্মীর মধ্যে হারুন অর রশিদ অনেক আগেই অবসর গ্রহণ করেছেন। তবে ওই গণমাধ্যমকর্মীদের কেউই গণমাধ্যম অঙ্গনে লাভজনক পদে জড়িত নন। সরকারের আর্থিক সংশ্লিষ্টতা আছে এমন প্রতিষ্ঠানেও কাজ করছেন না। শেরপুর তথা দেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলার কোন গণমাধ্যমকর্মীই লাভজনক কোন পদের সাথে জড়িত নন।

এ বিষয়ে সিনিয়র আইনজীবী ও প্রাইম ইউনিভার্সিটির শিক্ষক জুলফিক্কার আলী জানান, সংবিধানে লাভজনক পদের ব্যাখ্যা নেই। তা আছে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ ১৯৭২ (আরপিও) এর ১২ ধারায় স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ বা সংবিধিবদ্ধ সরকারী কর্তৃপক্ষ বা ৫০ শতাংশের বেশি সরকারি শেয়ার সম্বলিত কোম্পানীর চাকরি বা পদকে লাভজনক পদ বলা হয়েছে। অন্যদিকে ২০০১ সালে আদালতের এক রায়ে বলা হয়, যে পদে নিয়োগ ও পদচ্যুতির ক্ষমতা সরকারের হাতে, সে পদ লাভজনক পদ। গণমাধ্যমকর্মীদের নিয়োগ বা পদচ্যুতির ক্ষমতা সরকারের হাতে নেই। কাজেই মফস্বল পর্যায়ের গণমাধ্যমকর্মীরা কোন অবস্থাতেই লাভজনক পদে কর্মরত নেই। একইসাথে বেসরকারী শিক্ষকরা মিডিয়ায় লেখালেখি করতে পারবেন না, এমন নির্দেশনা বা প্রজ্ঞাপন শিক্ষা মন্ত্রনালয় বা জনপ্রশাসন মন্ত্রনালয় থেকে আদৌ প্রকাশ করা হয়নি।

আইনজীবী জুলফিক্কার আলী প্রশ্ন করে বলেন, শিক্ষা অফিসার কোন বিধি বলে ১২ গণমাধ্যমকর্মীকে কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রদান করেন। ওই ১২ গণমাধ্যমকর্মীদের মধ্যে ৬ জন শিক্ষকই প্রভাষক ও সহকারী অধ্যাপক পদমর্যাদার। যাদেরকে ওই শিক্ষা কর্মকর্তা নোটিশ দেয়ার এখতিয়ার রাখেন না।

তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, অভিযোগকারী আদিল মাহমুদ উজ্জল ইতিপূর্বে প্রেসক্লাবের বিভক্তি কর্মকান্ডে জড়িত থেকে ক্লাবের প্রায় ৫০ হাজার টাকা আত্মসাত করেন। যা পরবর্তীতে তিনি জেলার দায়িত্বশীল শীর্ষ মহলের উপস্থিতিতে ফেরত দিতেও বাধ্য হন। তিনি ইতিপূর্বে প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাবিহা জামান শাপলার বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ আনলেও তদন্তে তা ধুপে টিকেনি। বর্তমান সাধারণ সম্পাদক মো: মেরাজ উদ্দিনের বিরুদ্ধেও বিভিন্নস্থানে একাধিক মিথ্যা অভিযোগ দায়ের করেও সে তার উদ্দেশ্য সফল করতে পারেনি।

সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাবিহা জামান শাপলা বলেন, পূর্বের ন্যায় আবারো প্রেসক্লাবের ঐক্যকে বিনষ্ট করার জন্য আদিল মাহমুদ উজ্জল ষড়যন্ত্র শুরু করেছেন। তার কর্মকান্ডে এটাই প্রতিয়মান হচ্ছে। তবে এবার তাকে শৃঙ্খলা পরিপন্থী কর্মকান্ডে জড়িত থাকার দায়ে ব্যবস্তা গ্রহণ করার জন্য প্রেসক্লাব কর্মকর্তাদের কাছে দাবী জানাচ্ছি।

অভিযোগ প্রসঙ্গে শেরপুর প্রেসক্লাবের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক মো: মেরাজ উদ্দিন বলেন, আমি এখনো কারণ দর্শানো নোটিশ হাতে পাইনি। তবে দুইবার আদিল মাহমুদ উজ্জল আমার সাথে সাধারণ সম্পাদক পদে নির্বাচন করে হেরে নির্লজ্জভাবে ক্লাবের যুগ্মসম্পাদক হিসেবে দায়িত্বে আছেন। আবার ওই পদ ব্যবহার করে আমাদের বিরুদ্ধে নানা ষড়যন্ত্র করে আসছেন। এটা নতুন কিছু নয় এর আগেও আমার বিরুদ্ধে সে সরকারের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও আমার প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্নস্থানে অভিযোগ করেছে। ক্লাবের একাধিক কর্মকর্তা ও সদস্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেও তার উদ্দেশ্য সফল করতে পারেনি। তবে এবার তিনি যা করেছেন, সেটা ক্লাবের শৃঙ্খলা পরিপন্থী কাজ। তাই বিষয়টি ক্লাবের সভাপতি মো: শরিফুর রহমানের নিকট অভিযোগ করা হয়েছে। বিষয়টি তিনি দেখবেন বলে জানিয়েছেন।

এ ব্যাপারে শেরপুর জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো: রেজুয়ান সাংবাদিকদের বলেন, অভিযোগ দিয়ে অভিযোগকারী তার লোকজন নিয়ে আমাদেরকে নানাভাবে চাপ দিচ্ছিল। তাই জেলা প্রশাসকের নির্দেশে আমি কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছি। আমি কারোর বিরুদ্ধেই বিধি পরিপন্থী কোন কিছু করব না।

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: