নাই আর নাই এর মাঝে চলছে আখাউড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স

মোহাম্মদ আবির, আখাউড়া (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) থেকে: খুব বেশি ভালো নেই আখাউড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। টেকনিশিয়ান না থাকায় এক্সরে করা যাচ্ছে না। নাই জেনারেটর। অপারেশন থিয়েটার থাকলেও নাই যন্ত্রপাতি ও অ্যানেসথেসিয়া। এম্বুলেন্স আছে ড্রাইবার নাই। কনসালটেন্ট ও জুনিয়র কনসালটেন্টের ৪টি পদ থাকলেও পদায়ন নেই। এভাবে শুধু না-এর আবর্তে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স।
উপজেলার ৫ ইউনিয়ন ও এক পৌরসভার প্রায় ১ লক্ষ ৭০ হাজার জনসংখ্যার পাশাপাশি পার্শ্ববর্তী সদর ও বিজয়নগর উপজেলার আংশিক মানুষের একমাত্র ভরসারস্থল আখাউড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। কিন্তু নাই, নাই অবস্থার কারণে রোগীদের চিকিৎসা সেবার জন্য নির্ভর করতে হচ্ছে প্রাইভেট ক্লিনিকের ওপর। গুণতে হচ্ছে বাড়তি টাকা। পোহাতে হচ্ছে বিড়ম্বনা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নামে ৫০ শয্যার হলেও হাসপাতালটি চলছে ৩১ শয্যার লোকবল দিয়ে। প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে অদ্যাবধি ৫০ শয্যার এই হাসপাতালটিতে নেই কোন জেনারেটর। বিদ্যুতের এই অতিরিক্ত লোডশেডিংয়ের সময়ে জেনারেটর না থাকায় হাসপাতালে ভর্তি থেকে চিকিৎসা সেবা নেওয়া রোগীদের ভোগান্তির শেষ নেই।
একাধিক টেকনিশিয়ান পদ খালি থাকায় বন্ধ রয়েছে এক্স-রে সহ প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা। ফলে কাঙ্খিত চিকিৎসা সেবা বঞ্চিত হয়ে রোগীদের নিয়ে সদর হাসপাতালসহ জেলার বাইরে ছুটছে স্বজনরা।
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, জুনিয়র কনসালট্যান্ট মেডিসিন, সার্জারি অ্যানেসথেসিয়াসহ গাইনি চিকিৎসক পদটিও শূন্য। মিডওয়াইফারি (নরমাল ডেলিভারির জন্য) চারটি পদের মধ্যে তিনটিই শূন্য। এছাড়া দীর্ঘদিন মেডিকেল টেকনোলজিস্ট, রেডিওলজিস্ট এক্স-রে টেকনিশিয়ান পদগুলো খালি, স্বাস্থ্য সহকারী ৩০ টি পদের মধ্যে ৫টি পদ শূন্য, স্টোরকিপার, অফিস সহকারী (কম্পিউটার অপারেটর), ওয়ার্ডবয়সহ বিভিন্ন পদ শূন্য। এছাড়া স্বাস্থ্য পরিদর্শক দুটি পদ থাকলেও আছেন একজন। সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শক ৬ পদের মধ্যে আছে ৫ জন। কমিউনিটি ক্লিনিকের পদ ১৭ টি আছে ১৫ জন।নাইটগার্ড দুইজনের মাঝে আছে ১ জন।
গাইনি কনসালট্যান্টের একটি পদে কোন পদায়ন না থাকার ফলে মহিলাদের জটিল রোগের চিকিৎসা সেবা দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। জুনিয়র কনসালট্যান্ট সার্জারি ও জুনিয়র কনসালট্যান্ট, অ্যানেসথেসিয়া আর অপারেশন থিয়েটারের কোন যন্ত্রপাতি না থাকায় চালু করা যাচ্ছে না সার্জারি বিভাগ। টেকনিশিয়ান না থাকায় এক্সরে করা যাচ্ছে না। নেই আলট্রাসনোগ্রাম করার কোনো সুবিধা। এতে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে রোগ নির্ণয় করা সম্ভব হচ্ছে না। এমতাবস্থায় পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য রোগীদের হাতে স্লিপ ধরিয়ে দিয়ে প্রাইভেট ক্লিনিকে যেতে বলা হয়। হাসপাতালে চিকিৎসকদের চেম্বার দখল করে রাখে বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিরা। এ কারণে রোগীদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
আখাউড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নানান সমস্যা বিরাজ করছে। ফলে রোগীরা হাসপাতাল থেকে কাঙ্খিত সেবা বঞ্চিত হচ্ছেন।হাসপাতালের প্রবেশমুখেই বিভিন্ন ডায়াগনস্টিক সেন্টারের দালালদের দৌরাত্ম্য। গ্রাম থেকে আসা সহজ-সরল রোগীদের তারা বলে কয়ে নিয়ে চলে আসেন প্রাইভেট ক্লিনিকে। এ সব দালালের সঙ্গে হাসপাতালের ডাক্তারদের সখ্যতা রয়েছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, রোগীদের ভোগান্তি ও তাদের নানাভাবে হয়রানির চিত্র।
হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা নিতে আসা উপজেলার নয়াদিল গ্রামের হাবিব মিয়া বলেন, অসুস্থতার কারণে আমার স্ত্রীকে স্যালাইন দেওয়া অবস্থায় আল্ট্রাসোনোগ্রাম করার প্রয়োজন পরে। কিন্তু হাসপাতালে ব্যবস্থা না থাকায় স্যালাইন দেওয়া অবস্থায় ঝুঁকি নিয়ে বাইরে গিয়ে আল্ট্রাসোনোগ্রাম করতে হয়।
আরেক রোগী আজমপুর গ্রামের মুকুল মিয়া বলেন, আমার ছেলের হাত ভেঙ্গে যাওয়ায় হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসি। ডাক্তার আমাকে এক্সরে করাতে বলেন। কিন্তু আমি দরিদ্র মানুষ। হাসপাতালে এক্সরে করাতে না পেরে বহু কষ্ট করে টাকা জোগার করে এক্সরে করেছি। সরকার যদি হাসপাতালে এক্সরে করার ব্যবস্থা করতো তাহলে খুব উপকার হতো।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ মোঃ হিমেল খান বলেন, আখাউড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি ৫০ শয্যা বিশিষ্ট। এখানে বহিঃ বিভাগ, আন্ত:বিভাগ এবং জরুরী বিভাগে রোগীর সেবা দিয়ে যাচ্ছি। হাসপাতালে কিছু সমস্যা আছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, হাসপাতালে এম্বুলেন্সের ড্রাইভার নেই, একজন ড্রাইভার খুব দরকার। জনবলের অভাব আছে। এক্স রে মেশিন এবং টেকনিশিয়ান নাই। আমি মন্ত্রণালয়ের লিখেছি। স্থানীয় মন্ত্রী মহোদয়কেও জানিয়েছি। আশা করি এগুলো দ্রুত পেয়ে যাব। যদি পেয়ে যাই তাহলে আরও ভালো সেবা দিতে পারব।
শাকিল/সাএ
বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এডিটর ইন চিফ: আমিরুল ইসলাম আসাদ
বাড়ি#৩৫/১০, রোড#১১, শেখেরটেক, ঢাকা ১২০৭
ই-মেইলঃ [email protected]
ফোনঃ (০২) ৫৮১৫৭৭৪৪
নিউজ রুমঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯১
মফস্বল ডেস্কঃ ০১৫৫২৫৯২৫০২
বার্তা প্রধানঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯০
মার্কেটিং ও সেলসঃ ০৯৬১১১২০৬১২
ইমেইলঃ [email protected]

পাঠকের মন্তব্য: