১৯৩৯ সালে প্রতিষ্ঠিত সাভার পাবলিক লাইব্রেরি এখন আওয়ামী লীগ নেতার কার্যালয়
ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক এক নেতার বিরুদ্ধে দীর্ঘ এক যুগেরও বেশি সময় ধরে সাভারের পাবলিক লাইব্রেরি দখল করে দলীয় কার্যক্রম চালানোর অভিযোগ উঠেছে। নিজের রাজনৈতিক কার্যালয় বানানোর পাশাপাশি সেখানে দলীয় কিংবা সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের নিয়ে পালন করেন নানা কর্মসূচি। যার কারণে লাইব্রেরিতে বসে বই পড়ার পাঠক অনেকটাই কমেছে। তবুও দেশের বিভিন্ন জায়গায় হাজারো বইয়ের সংগ্রহ গড়ে পাঠকদের মনের ক্ষুধা মেটানোর পাশাপাশি বই পড়ার প্রবণতা বাড়াতে কাজ করছে পাবলিক লাইব্রেরিগুলো।
সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রাখাল চন্দ্র নামের এক ব্যক্তি ১৯৩৯ সালে লাইব্রেরিটি প্রতিষ্ঠা করেন। দীর্ঘদিন স্থানীয় পাঠক ও শিক্ষার্থীরা লাইব্রেরিটি ব্যবহার করেছেন। তবে আওয়ামী লীগের ঢাকা জেলার সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাসুদ চৌধুরী ওই লাইব্রেরির সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে বদলে যেতে থাকে চিত্র। সেখানে বসেই তিনি রাজনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনা শুরু করেন। অভিযোগ রয়েছে নিজের প্রয়োজনে তিনি লাইব্রেরি চালু ও বন্ধ রাখেন।
সাভার সরকারি কলেজের পাশে অবস্থিত ওই লাইব্রেরিতে গিয়ে দেখা যায়, মূল ফটকের ওপরে লাগানো রয়েছে পাবলিক লাইব্রেরি নামে বিশাল সাইনবোর্ড। ভেতরে দেয়াল ও শোকেসে সারি সারি বইয়ের দেখা মিললেও পাওয়া যায়নি কোনও পাঠক। তবে মাঝে মধ্যেই পাঠকের আসনগুলোতে বসে রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের সভা-সেমিনার ও আলোচনা করতে দেখা গেছে। কর্মসূচি শেষে সেখানে বসেই খাওয়া-দাওয়া করছেন নেতাকর্মীরা। লাইব্রেরির একটু ভেতরেই থাই গ্লাস দিয়ে করা হয়েছে নেতার অফিস কক্ষ। মাসুদ চৌধুরীর ব্যক্তিগত ও রাজনৈতিক চেম্বার হিসেবে এটি ব্যবহার করেন। সাভার সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী জিসান অভিযোগ করেন, কলেজের পাশেই অবস্থিত পাবলিক লাইব্রেরি। আমি একবার বই পড়তে সেখানে গিয়েছিলাম। ভেতরে অনুষ্ঠান চলায় আর প্রবেশ না করেই ফিরে আসি। এর পর আর কখনও যাওয়া হয়নি ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ছাত্রলীগের সাবেক এক নেতা বলেন, বিশাল সাইনবোর্ড আর সারি সারি বইয়ের মধ্যেই পাবলিক লাইব্রেরির কাজ সীমাবদ্ধ। এক সময় সেখানে অনেক শিক্ষার্থী বই পড়ার জন্য যাতায়াত করতো। তবে এখন আর সেই পরিবেশ নেই। সাধারণ শিক্ষার্থীরা নিরিবিলি পরিবেশে বই পড়তে চান। সেখানে প্রায়ই রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের যাতায়াত ও সভা-সেমিনার লেগেই থাকে। এ কারণে অনেকেই লাইব্রেরিতে যেতে ভয় পায়, অনেকে বিব্রত হয়। পাবলিক লাইব্রেরি এখন আওয়ামী লীগ নেতার রাজনৈতিক কার্যালয়ে পরিণত হয়েছে।
সাভারের অধরচন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রতন পিটার গোমেজ বলেন, পাবলিক লাইব্রেরি সবার জন্য উন্মুক্ত একটি স্থান। সেখানে গিয়ে সবাই বই পড়ার পাশাপাশি আলাপচারিতায় মেতে উঠবে, দেশ ও জাতি নিয়ে চিন্তা হবে, এমনটাই হওয়ার কথা। তবে তিনি রাজনৈতিক কার্যালয় হিসেবে ব্যবহারের বিষয়টি নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি।
সচেতন নাগরিক কমিটি সনাকের সদস্য ব্যারিস্টার ইমাম হাসান ভুইয়া বলেন, পাবলিক লাইব্রেরি রাজনৈতিক কার্যালয় হিসেবে ব্যবহার না করে সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া উচিত। এছাড়া শিক্ষার্থী ও তরুণ-তরুণীদের কাছে বই পড়তে উৎসাহিত করা প্রয়োজন। এতে করে কিশোর বা যে কোনও বয়সী মানুষ অবসর সময়ে বই পড়ে কাটালে আমাদের সমাজে অপরাধ প্রবণতাও কমবে। তাই ওই লাইব্রেরির পরিবেশ ফিরিয়ে আনার পাশাপাশি বই পড়ার প্রতি সবাইকে উৎসাহিত করার প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেন তিনি।
এসব বিষয়ে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাসুদ চৌধুরী বলেন, অভিযোগ তুলে আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। তবে মাঝে মধ্যে সভা সেমিনার করা হয় এটা ঠিক। দলিল লেখক সমিতির নির্বাচন, মহিলা সংস্থার কার্যক্রম, পৌর মেয়র নির্বাচনের সময় কয়েকদিন লাইব্রেরি ব্যবহার করা হয়েছে। জাতীয় নির্বাচনেও এটি তিন থেকে চার দিন ব্যবহার হয়েছে। এখানে সাভারের সব ধরনের নেতাকর্মীরাই আসেন। তবে এত সব আয়োজনের কারণে লাইব্রেরিটিতে পাঠের পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার তা মনে হয় না।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাভার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও পাবলিক লাইব্রেরির সভাপতি মাজহারুল ইসলাম বলেন, পাবলিক লাইব্রেরি অনেক পুরনো একটি ভবন। বিভিন্ন সময় মেরামত করে ভবনটি ব্যবহারের উপযোগী করা হয়েছে। সেখানে কোনও রাজনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনার তবিষয়টি আমি জানি না। এ রকম কিছু হলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এডিটর ইন চিফ: আমিরুল ইসলাম আসাদ
বাড়ি#৩৫/১০, রোড#১১, শেখেরটেক, ঢাকা ১২০৭
ই-মেইলঃ [email protected]
ফোনঃ (০২) ৫৮১৫৭৭৪৪
নিউজ রুমঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯১
মফস্বল ডেস্কঃ ০১৫৫২৫৯২৫০২
বার্তা প্রধানঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯০
মার্কেটিং ও সেলসঃ ০৯৬১১১২০৬১২
ইমেইলঃ [email protected]
পাঠকের মন্তব্য: