পানছড়িতে অনিয়ম দূর্নীতির মধ্য দিয়েই চলছে গুচ্ছগ্রামের রেশন বিতরণ

প্রকাশিত: ১২ নভেম্বর ২০২২, ০৯:৫৬ পিএম

খাগড়াছড়ির পানছড়ি উপজেলায় অনিয়মের মধ্য দিয়েই শুরু হয়েছে বাঙ্গালী গুচ্ছগ্রামের খাদ্যশস্য রেশন বিতরণ কার্যক্রম। রেশন বিতরণে দূর্নীতির অংশ হিসেবে প্রতি মূহুর্তেই কৌশল বদলাচ্ছে রেশন বিতরণকারী প্রতিনিধি এবং তদারকি কর্মকর্তারা। গম না থাকায় ১২ নভেম্বর পানছড়ি বাজার গুচ্ছগ্রাম ও পূর্ব দমদম কাউন্টার বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এ নিয়ে ক্রমেই ক্ষোভের দানা বাধতে শুরু করেছে পানছড়ির ১২টি গুচ্ছগ্রামে।

গত ১০ নভেম্বর থেকে পানছড়ির বিভিন্ন গুচ্ছগ্রামে খাদ্যশস্য বিতরণ শুরু করা হয়। তবে সেদিন এবং পরের দিন কোন তদারকি কর্মকর্তা বিতরণ কেন্দ্রে যাননি। তারা তাদের অফিসের পিয়নকে পাঠিয়ে দায়সারা দায়িত্ব পালন করেন। লোগাং গুচ্ছগ্রামের তদারকি কর্মকর্তা ও উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা নিমাই নাথ বলেন, 'আমি চিঠি পাইনি। আমার এক কলিগের মাধ্যমে আমি জেনেছি যে লোগাং গুচ্ছগ্রামে রেশন বিতরণ করা হচ্ছে। তাছাড়া এবার রেশন বিতরণের বিষয়ে আমাদের কোন মিটিং হয় নাই, গতবার হয়েছিল। আমি কৃষি বীজ নিতে বৃহস্পতিবার সকালে খাগড়াছড়িতে আসছি।' দমদম গুচ্ছগ্রামের তদারকি কর্মকর্তা ও সহকারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা এডিন চাকমা বলেন, 'দমদমে রেশন বিতরণ শুরু হয়েছে। বৃহস্পতিবার আমি জেলার একটা মিটিংয়ে ছিলাম। রেশন বিতরণ কেন্দ্রে আমার একজন পিয়নকে পাঠিয়েছি।'

পানছড়ি উপজেলায় ১২টি বাঙ্গালী গুচ্ছগ্রামে ৪১৩৫ টি রেশন কার্ড রয়েছে। এর অনুকূলে সরকার বিনামূল্যে প্রতিমাসে ৩৫.৯৫ কেজি চাউল এবং ৪৮.৭৫ কেজি গম হারে তিন মাস অন্তর অন্তর ১০৭.৮৫ কেজি চাউল এবং ১৪৬.২৫ কেজি গম বরাদ্দ দেয়। কিন্তু কার্ডধারীরা এ খাদ্যশস্য পুরোপুরি বুঝে পাচ্ছেননা। চাল কিছুটা বুঝে পেলেও গম চোঁখেও দেখেন না কার্ডধারীরা। খাদ্যশস্য বিতরণে দায়িত্বরত প্রতিনিধিরা জানান কাউন্টারে পর্যাপ্ত গম নেই তাই গমের পরিবর্তে টাকা নিতে হবে। অথচ জেলা-উপজেলা প্রশাসন চাল-গম বিতরণের জন্য চিঠি বিলি করেছেন। এভাবে প্রতি তিন মাস অন্তর অন্তর প্রায় এক থেকে দেড়কোটি টাকার দূর্নীতি হয় পানছড়ির ১২টি গুচ্ছগ্রামে।

কিছু কিছু কাউন্টারে ভিন্ন কৌশল অবলম্বন করেছেন বিতরণকারী প্রতিনিধিরা। প্রতি গুচ্ছগ্রামে বরাদ্দকৃত খাদ্যশস্য উত্তোলন করে বিতরণ কেন্দ্রে মজুদ করে তদারকি কর্মকর্তাদের অবহিত করার বাধ্যবাধকতা থাকলেও তা করা হচ্ছেনা। এক প্রকার তদারকি কর্মকর্তাদের না জানিয়ে গোপনে রেশন বিতরণ করছে বিতরণ প্রতিনিধিরা।

পানছড়ি গুচ্ছগ্রাম কেন্দ্রের খাদ্যশস্য বিতরণ প্রতিনিধি আসিফ করিম বলেন, 'রেশন বিতরণের পূর্বে তদারকি কর্মকর্তাকে জানানো হয়েছে এবং তিনি আসছেন।' এরপর তিনি আবার বলেন, 'উনি আসেননি কিন্তু একজন প্রতিনিধি পাঠিয়েছেন।' পানছড়ি বাজার গুচ্ছগ্রাম কেন্দ্রের তদারকি কর্মকর্তা ও উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা সুজিত মিত্র চাকমা বলেন, 'আমার কেন্দ্রের খাদ্যশস্য বিতরণ প্রতিনিধি হলো আসিফ করিম। শনিবার এখানে রেশন বিতরণ করা হচ্ছে এটা কিন্তু আমাকে জানানো হয়নি। শুক্রবারও আমাকে জানানো হয়নি। বন্ধের দিনে আমাকে না জানিয়ে কিভাবে রেশন বিতরণ করছে সেটাও আমি জানিনা।'

গুদাম থেকে কতপরিমাণ খাদ্যশস্য চাল-গম কাউন্টারগুলোতে পৌঁছানো হয়েছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে পানছড়ি খাদ্য গুদামের সহকারী উপ-খাদ্য পরিদর্শক মো. ইসমাইল হোসেন বলেন, 'আমি আপনাকে তথ্য দিতে পারব না। আপনি কাউন্টারে খোঁজ নেন। জেলার উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ থেকে অনুমতি নিয়ে আসেন। আমি আপনাকে তথ্য দিতে দায়বদ্ধ নই।' এ বিষয়ে খাগড়াছড়ি জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক সুমাইয়া নাজনীনকে কল করা হলে তিনি কল কেটে দেন।

পানছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুবাইয়া আফরোজ বলেন, 'আমার জানামতে পানছড়িতে গমের কোন সমস্যা নেই। গম না থাকলে কাউন্টার বন্ধ থাকবে। গম আনার পরে তা আবার বিতরণ করবে।'

তবে প্রতিবারই এ চাউল গম বিতরণে অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া যায়। গত জুলাই-সেপ্টম্বর মাসে গুচ্ছগ্রামে পচা গম বিতরণের অভিযোগ উঠেছিল। পরে দৈনিক মানবজমিন পত্রিকা ও জাতীয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল বিডি২৪লাইভ এ সংবাদ প্রকাশ হলে তড়িঘড়ি করে এসব পচা গম পানছড়ি থেকে গায়েব করে দেওয়া হয়। পরে সে রিপোর্টকে কেন্দ্র করে গুচ্ছগ্রামের ভুক্তভোগী রেশনকার্ডধারীরা বিক্ষোভ কর্মসূচির ঘোষণা দিলে উপজেলা প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে আর অনিয়ম হবেনা মর্মে আশ্বস্ত করে তা বাস্তবায়ন করতে দেওয়া হয়নি।

পরে রেশনকার্ডধারীদের পক্ষ থেকে রোকেয়া নামে একজন কার্ড হোল্ডার খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেন। এর প্রেক্ষিতে পানছড়ি উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে একটি শুনানির আয়োজন করা হয়। তবে স্মারকলিপি প্রদানকারী, সংবাদ প্রতিবেদক এবং কোন অভিযোগকারীকে ছাড়াই শুনানি সম্পন্ন করা হয়। এসব অভিযোগকে উপেক্ষা করে তথাকথিত প্রজেক্ট চেয়ারম্যানদের দিয়েই আবার গুচ্ছগ্রামের রেশন বিতরণ কার্যক্রম শুরু করা হয়।

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: