অন্তর্কলহে বিপর্যস্ত কক্সবাজার আ.লীগ, তৃণমূলে গণবিস্ফোরণের শঙ্কা!

প্রকাশিত: ১৬ নভেম্বর ২০২২, ১২:১৪ এএম

কক্সবাজার তৃণমূল আওয়ামী লীগে দ্বন্দ্ব চরমে। নিজস্ব ও ব্যক্তি বলয় তৈরি করতে গিয়ে এ দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েছেন নেতারা। বেশিরভাগ জায়গায় ওয়ার্ড থেকে ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের চেয়ে গুরুত্ব পাচ্ছে ভাইলীগ। এমপি, জেলা-উপজেলার নেতারা তৈরি করছেন নিজস্ব গ্রুপ। এই গ্রুপিংয়ের কারণে অনেক জায়গায় অপদস্থ হচ্ছেন দলের ত্যাগী ও পুরনো নেতাকর্মীরা। এতে সুযোগ নিচ্ছে বিরোধীপক্ষ। সমস্যা সমাধানে বার বার কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ টিম করে সফর করলেও ফল আসছে না। কেন্দ্রে ডেকে মিটিং করেও লাভ হচ্ছে না। সব নির্দেশনা, উপদেশ আর দেন-দরবার থেকে যাচ্ছে আনুষ্ঠানিকতায়। কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। অবশ্য এজন্য তৃণমূল থেকে কেন্দ্রীয় নেতাদের ওপর দায় চাপালেও, কেন্দ্রীয় নেতারা দোষারোপ করছেন তৃণমূলকেই।

এইসব নেতাদের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে কেন্দ্রীয় নেতাদের নামে চিঠির স্তূপ জমেছে বলে একাধিক সূত্রে জানা গেছে। চিঠির অধিকাংশই অভিযোগে জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন কমিটি গঠন নিয়ে নেতাদের স্বেচ্ছাচারিতার বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে। কিন্তু এসব অভিযোগ দেখার কেউ নেই। কিছু পড়ে থাকে কার্যালয়ে, আবার কিছু নেতার কাছে গেলেও প্রতিফলন হয় না বলে অভিযোগ রয়েছে। আর একের পর এক এসব অভিযোগ সুরাহা না হতে হতে দ্বন্দ্ব এক পর্যায়ে সংঘাতে রূপ নিতে পারে বলে ধারনা করছেন তৃণমূল আ.লীগের নেতাকর্মীরা।

জেলা ও সদর আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন নেতা জানান, জেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমানের ক্ষমতার অপব্যবহার, স্বেচ্ছাচারিতার কারণে সংগঠনের চেইন অব কমান্ড ভেঙে পড়েছে। বর্তমানে জেলা আওয়ামী লীগে সিন্ডিকেটের ধান্ধাবাজি ছাড়া কোনোরকমের রাজনীতির চর্চা নেই। তার পক্ষে চাটুকারিতা এবং অসাংগঠনিক কর্মকাণ্ডকে জায়েজ করা-ই এখন রাজনীতি। এসব কারণে সদরের ঝিলংজা ইউনিয়নের ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে গণবিস্ফোরণের আশঙ্কা করছে সংশ্লিষ্টরা।

জানা গেছে, গত ১২ নভেম্বর কক্সবাজার সদরের ঝিলংজা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিকী সম্মেলন অনুষ্টিত হয়। এতে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান কর্তৃক ব্যালট পেপার ছিনতাইয়ের অভিযোগ এনে টানা ২ঘন্টা যাবৎ প্রধান সড়ক অবরুদ্ধ করে রাখেন সম্মেলনের কাউন্সিলর ও নেতাকর্মীরা। পরে পুলিশ এসে আন্দোলনকারীদের সরিয়ে দিলে পথসভা, বিক্ষোভ সমাবেশ করে বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা। ফলে প্রধম অধিবেশন শেষে কমিটি ঘোষণা ছাড়াই পণ্ড হয়ে যায় কাউন্সিল। এরপর থেকে ওই কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করে সমস্ত কার্যক্রম স্থাগিত করে জেলা ও উপজেলা আ.লীগ।

সেদিন ঝিলংজা ইউনিয়ন আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক কুদরত উল্লাহ সিকদার অনুষ্টিত সম্মেলন ও কাউন্সিলে স্ট্রোকের অজুহাত দেখিয়ে অংশগ্রহণ করেন নি। অভিযোগ উঠেছে, কাউন্সিলে ভোট না পাওয়ার আশংকায় এ্যাম্বুলেন্সের ভেতরে শুয়ে কয়েকটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে ছড়িয়ে দিয়ে আত্মগোপনে চলে যায়। সম্মেলন ও কাউন্সিল স্থগিত হলে পরদিন ফিরে এসে বিভিন্নভাবে গর্জন দেয়। শুধু তা নয়, ফেইসবুকে তার ব্যাক্তিগত একাউন্টে ‘খেলা হবে’ বলেও স্ট্যাটাস দেন।

এই স্ট্যাটাসের পক্ষে-বিপক্ষে নানান মন্তব্য করছেন আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা। এই দ্বন্দ্ব বড় ধরনের সংঘাতে রূপ নিতে পারে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা। তারা দ্বন্দ্ব, কোন্দল ও দ্বিধাবিভক্ত এই জটিল আকার ধারণ করার আগে কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী দিদারুল আলম দিদার বলেন, কুদরত ঝিলংজা ইউনিয়ন আ.লীগের দীর্ঘ ৯ বছর সাধারণ সম্পাদকের দায়ীত্বে থাকাকালিন তার রাজনৈতিক ক্যারিয়ারে তেমন কোন সফলতা নেই। উল্টো জমি দখল-বেদখল, মাদক ব্যবসা, চাঁবাবাজি, পাহাড় কাটাসহ তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগের পাহাড় জমেছে। মাঠে তার জনপ্রিয়তা একেবারেই শূন্য; জানতে পেরে কক্সবাজারের তারকামানের একটি হোটেলে আত্মগোপনে থেকে স্ট্রোক করেছেন বলে প্রচারণা চালিয়ে জঘন্যতম প্রতারণা করেছেন।

দিদার আরোও বলেন, স্ট্রোকের ভান করে সাধারণ কাউন্সিলরদের সিম্প্রিতি আদায় করতে এমন ছলচাতুরীর আশ্রয় নিয়েছিলেন তিনি। সেদিনের সম্মেলন ও কাউন্সিল স্থগিত হলে ফিরে এসে ‘খেলা হবে’ বলে হুমকি দিচ্ছেন। তাহলে তিনি কোন খেলার কথা বলছেন আমার বোধগম্য নয়।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামী লীগের এক নেতা বলেন, আমরা দীর্ঘদিন ধরে শুনেছি ত্যাগীদের মূল্যায়ন করা হবে। এই কথা শুনতে শুনতে আমরা অভ্যস্ত হয়ে গেছি। নেতারা নিজেদের দল ভারী করার জন্য প্রতিযোগিতা শুরু করেন। এই কারণে দলে নানা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হচ্ছে। বিএনপি-জামায়াতের লোকজন বিভিন্ন কমিটিতে সুকৌশলে জায়গা করে নিচ্ছে।

এদিকে সেদিন ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে কক্সবাজার সদর উপজেলা চেয়ারম্যান কাইসারুল হক জুয়েল উপস্থিত নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে ঘোষণা দিয়ে বলেন, ঝিলংজার ৯টি ওয়ার্ডের ভোটারদের উদ্দেশ্য ছিল উক্ত ইউনিয়নের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবে। কিন্তু দুঃখজনক ভাবে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তথাকথিত মেয়র মুজিবুর রহমান ভোটের ব্যালট পেপার ছিনতাই করে নিয়ে যায়। মেয়র মুজিবুর রহমানের ব্যালট ছিনতাই এর কারণ ছিল তাহার বউয়ের বড় ভাই বা সম্বন্ধী মিজানুর রহমান হেলালকে সভাপতি করবে। যখন সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে পারছিল না তখন ভোটের ব্যালট পেপার নিয়ে পালিয়েছেন। এর চেয়ে দুঃখ জনক ও বিশ্রী কি হতে পারে? মেয়র মুজিবুর রহমান পৌরসভার মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন ভোট চুরি করে। একইভাবে ঝিলংজা ইউনিয়নের চেয়ারম্যানও নির্বাচিত হয়েছিল ভোট ছিনতাই করে। শুধু তাই নয়- তিনি ইতিপূর্বে দুর্নীতির দায়ে একাধিকবার মামলার আসামি হয়েছে। জুয়েল ঘটনা স্থল থেকে উপস্থিত নেতাকর্মীদের সাথে নিয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মেয়র মুজিবুর রহমানকে অবাঞ্চিত ঘোষণা করেন।

জুয়েলের বক্তৃতার মধ্যখানে দর্শকদের স্লোগান ছিল মুজিবু ভাইয়ের গালে গালে জুতা মারো তালে তালে। বক্তব্য শেষ অংশে জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু বলে বক্তব্যের সমাপ্তি ঘোষণা করেন জুয়েল। বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে একই ধরণের বক্তব্য দেন ঝিলংজা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান টিপু সুলতানও।

সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ন আহবায়ক টিপু সোলতান বলেন, আমরাও চাই কাউন্সিলরগণ ভোটের মাধ্যমে তাদের নেতা নির্বাচিত করুক। কিন্তু রহস্যজনক কারণে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ভোট করতে চাচ্ছেন না এবং ব্যালট পেপার ছিনতাই করেছেন। তাই নেতাকর্মীরা ক্ষুব্দ প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছেন।

সদর উপজেলা সাংগঠনিক টিমের সদস্য সচিব, জেলা আ.লীগের সাংস্কৃতিক সম্পাদক এড. তাপস রক্ষিত বলেন, বর্তমানে ঝিলংজা ইউনিয়ন কমিটির সমস্ত কার্যক্রম স্থগিত করে এইসব বিষয় কেন্দ্রীকে জানানো হয়েছে। কেন্দ্র যে সিদ্ধান্ত দেবেন সে মোতাবেক পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করা হবে।

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: