নোয়াখালীতে জাঁকজমক হয়ে উঠেছে জেলা বইমেলা-২২

প্রকাশিত: ১৬ নভেম্বর ২০২২, ১১:১৮ পিএম

মুসলমানদের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ পবিত্র আল-কোরআনের মাধ্যমে মানুষের প্রতি সৃষ্টিকর্তা মহান আল্লাহর প্রথম নির্দেশ- "পড়"। পড়ার সবচেয়ে প্রাচীন, জনপ্রিয় ও গ্রহণযোগ্য মাধ্যম হচ্ছে বই। বই জ্ঞানের আধার। পৃথিবীর সকল জ্ঞান বইয়ের পাতায় ঘুমিয়ে থাকে। কোনো পাঠক যখন বইয়ের পাতা খোলে তখন ঘুমন্ত জ্ঞান জেগে ওঠে, কথা বলতে শুরু করে পাঠকের সাথে। জ্ঞানের আলো তখন পাঠককে আলোকিত করে, পাঠকের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে বিশ্ব চরাচরে।

মনীষী লিও টলস্টয় বলেছেন, পৃথিবীতে মানুষের তিনটি জিনিস প্রয়োজন, বই, বই, বই। এফ টরুপার বলেছেন, একখানি ভালো বই শ্রেষ্ঠ বন্ধু, আজ এবং আগামীকালের জন্য। বন্ধুত্ব মানবজীবনে দুঃখ ও আনন্দের কারণ দুইই হতে পারে। কিন্তু একখানি ভালো বই এমন বন্ধু যা কখনো প্রতারণা করে না। তাই কবি ওমর খৈয়াম বেহেস্তের সরঞ্জামাদির তালিকা করতে গিয়েও বইকে রেখেছেন।

আর রবীন্দ্রনাথ বলেছেন, ভালো বই আত্মশুদ্ধির শ্রেষ্ঠ উপায়। জ্ঞানের বাহন হিসেবে বই বিশ্বের সবচেয়ে প্রাচীন মাধ্যম। জ্ঞানের প্রসারে বইয়ের বিস্তারের প্রয়োজনীয়তা প্রাচীনকাল থেকেই অনুভূত ছিল। কিন্তু মুদ্রণযন্ত্র আবিষ্কারের আগে বইয়ের বিস্তার তেমনভাবে ঘটেনি। কেননা হাতে লিখে বইয়ের প্রচার কষ্টসাধ্য ছিল। পঞ্চদশ শতকে জার্মানির গুটেনবার্গ মুদ্রণযন্ত্র আবিষ্কার করলে বইয়ের জগতে বিপ্লব সাধিত হয়। গুটেনবার্গ নিজের আবিষ্কৃত ছাপাখানায় ছাপা বই বিক্রির জন্য ফ্রাঙ্কফুর্ট শহরে নিয়ে আসতেন। তার দেখাদেখি স্থানীয় অন্যান্য বই বিক্রেতাও তাদের প্রকাশিত বই নিয়ে সেখানে বসতে শুরু করেন। সেসকল বই কিনতে বিভিন্ন শহর থেকে ক্রেতারাও আসতে শুরু করে। আর এভাবেই বিশ্বে বই মেলার প্রচলন শুরু হয়।

বইমেলা মানেই যে বই হইহই করে বিক্রি হবে তেমন নয়। বরং বিভিন্ন স্টল দেওয়া অনেক প্রকাশকের অভিজ্ঞতা কথা বলে একে ক্রেতার সংখ্যা কম, তার উপরে লোকজন এসে বই নিয়ে নাড়াচাড়া করে ফিরে যান।কিন্তু প্রকৃত বইপ্রেমীদের চিত্র ভিন্ন।তারা তাদের লেখকদের বই পড়ছেন কিনছেন।মেলায় আগত দর্শনার্থীদের অধিকাংশই তরুণ-তরুণী। তাদের পছন্দের শীর্ষে বিজ্ঞানভিত্তিক বই, উপন্যাস ও কবিতার বই। শিশুদের পছন্দ কার্টুন, ভূতের ও ছড়ার বই। এছাড়াও আঁক-আঁকির বইও কিনতে দেখা গেছে।নোয়াখালী জেলা প্রশাসনের ব্যবস্থাপনায় সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের পৃষ্ঠপোষকতায়, জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র আয়োজিত জেলা শিল্পকলা একাডেমি মাঠ প্রাঙ্গণে জেলা বই মেলা-২০২২ চলছে।কেনা-বেচায় বেশ জমে উঠেছে মেলাটি। ষষ্ঠ দিনেও ভিড় করছে ক্রেতারা।

প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যায় মেলামঞ্চে হয় বই নিয়ে আলোচনা। এ আলোচনায় শিক্ষক, আইনজীবী, সাংবাদিক, চিকিৎসক, সাংস্কৃতিক কর্মী ও বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরাসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষও অংশ নেন।

সোশ্যাল মিডিয়ার রমরমার যুগে নোয়াখালী এ বই মেলায় তরুণ প্রজন্মের কাছে বই এর চাহিদা ক্রমশ বাড়ছে। এ বই মেলায় আজ সন্ধ্যায় লেখক পাঠক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জেলা প্রশাসক দেওয়ান মাহবুবুর রহমান। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) ইসরাত সাদমীন মিল্কি,অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মিল্টন রায়।এছাড়াও অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত কবি ও সাংবাদিক জামাল হোসেন বিষাদ, সংগঠক ও সমাজকর্মী মুনীম ফয়সাল, এসএইচবিও’র সভাপতি ফাহিদা সুলতানা, নোয়াখালী সাইবার ওয়ারিয়র্স প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি সাইদুর রহমান রায়হান, আমরা গোলাপ ও সচেতন নোয়াখালীবাসীসহ বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের কর্ণধাররা।

এ বিষয়ে নোয়াখালী জেলা প্রশাসক দেওয়ান মাহবুবুর রহমান বিডি২৪লাইভকে বলেন, বইপ্রেমীদের পাশাপাশি জেলার লিটল ম্যাগাজিন ও ছোট মাপের প্রকাশনা সংস্থাগুলোকে উৎসাহী করতেই বইমেলার আয়োজন। বইমেলা কিন্তু বইয়ের মেলা, পাঠকের মেলা, লেখকের মেলা, প্রকাশকের মেলা, জ্ঞানের মেলা, প্রাণের মেলা। বই জ্ঞানের প্রতীক, বই আনন্দের প্রতীক। বইমেলার অন্যতম বৈশিষ্ট হচ্ছে যে তা আমাদের মনে করিয়ে দেয় চিন্তার ক্ষেত্রে কত বৈচিত্র্য থাকতে পারে।পাঠাগারে, এমনকি বইয়ের দোকানেও সাধারণত বই সাজানো হয় বিষয় ধরে।কিন্ত বইমেলায় প্রকাশকদের স্টলে কত বিচিত্র রকমের বই পাশাপাশি জায়গা করে নেয়। লেখকদের মনের কথা, গবেষণার ফলাফল কত ভিন্ন ভিন্ন ভাবে প্রকাশিত হতে পারে সেটা আমাদের চোখের সামনে হাজির হয় বইমেলায়। বই মেলায় গেলে পাশাপাশি সাজানো বইয়ের দিকে তাকালে সহজেই চোখে পড়ার কথা, তা হল সহিষ্ণুতা। পরে অতিথিরা অংশগ্রহণকারী লেখক এবং পাঠকদের হাতে সৌজন্য উপহার হিসেবে বিভিন্ন বই তুলে দেন।

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: