ধানক্ষেত থেকে সাবেক ইউপি সদস্যের লাশ উদ্ধার

প্রকাশিত: ১৭ নভেম্বর ২০২২, ০৫:৫১ পিএম

পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলায় আব্দুল বারেক (৬০) নামে এক সাবেক ইউপি সদস্যের রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে। তার বাড়ি উপজেলার ময়দানদিঘী ইউনিয়নের সোনাপাড়া গ্রামে। সে ওই গ্রামের মৃত হাশিরউদ্দিনের ছেলে। তিনি ময়দানদিঘী ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক ইউপি সদস্য ছিলেন। নিজ বাড়ি থেকে বারেক বুধবার বিকেল চারটার দিকে স্থানীয় নতুন বাজারে যাওয়ার উদ্দেশ্যে বের হওয়ার ১৭ ঘন্টা পর বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে আটটার দিকে বাড়ির পাশেই ধান কেটে নেওয়া ক্ষেতেই তার মরদেহ দেখা যায়। বৃহস্পতিবার বেলা ১১ টার দিকে তার লাশ উদ্ধার করেন পুলিশ। প্রাথমিক সুরুত হাল শেষে লাশ ময়নাতদন্তের জন্য পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়।

তবে মৃত্যু নিয়ে স্থানীয় প্রতিবেশী ও পরিবারের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। এটি স্বাভাবিক মৃত্যু হিসেবে মেনে নিতে পারছেনা পরিবারের সদস্য ও স্থানীয়রা। রহস্যজনক মৃত্যু বলছেন অনেকেই। খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে দুই স্ত্রীর স্বামী ছিলেন আব্দুল বারেক। বড় স্ত্রী রওশন আরা (৪৭) ও ছোট স্ত্রী মোছা. কুলসুম। দুই স্ত্রীর সাথে দাম্পত্য জীবনে দুই ছেলে দুই মেয়ের জন্ম দেন বারেক। বড় স্ত্রীর একটি মেয়ে আর ছোট স্ত্রীর দুই মেয়ে এক ছেলে। প্রায় দেড় যুগ থেকে ছোট স্ত্রীর সাথে সংসার করছিল আব্দুল বারেক। মাঝে মাঝে দুই স্ত্রীর কারনে দাম্পত্য জীবনে কলহ ছিল।

নিহতের পরিবারের সদস্যদের সাথে কথা বলে জানায় বুধবার(১৬ নভেম্বর) বিকেলে চারটার দিকে কাদেরপুর বাজারে যাওয়ার উদ্দেশ্যে আসরের নামাজ পড়ে বাড়ি থেকে বের হয় সাইকেল বারেক। এরপর সারারাত বাসায় ফিরেনি। তার মোবাইল ফোনে বার বার কল করে বন্ধ পাওয়া যায়। ধারনা করা হচ্ছিল কোন আত্মীয় স্বজন বা মেলা দেখতে গিয়েছিল। তবে তাকে হত্যা করা হয়েছে বলেও অভিযোগ পরিবারের। পরিবারের সদস্যরা বলছেন এটি স্বাভাবিক মৃত্যু নয় কারন নিহতের ব্যবহৃত সাইকেল স্থানীয় নতুন বাজারে পাওয়া যায় অপরদিকে মৃতদেহ ধানক্ষেতে। সকালে বাড়ির পাশের ধানক্ষেতে হামিদা খাতুন বারেকের লাশ দেখতে পায়। হামিদা স্থানীয় প্রতিবেশি বাবুল কে খবর দেয়। এরপর বাবুল ও নিহতের পরিবারের সদস্যরা ধানক্ষেতে দেখতে পায় বারেকের মরদেহ ধানক্ষেতে পড়ে আছে। পরে পুলিশে খবর দিলে বোদা থানা পুলিশ গিয়ে বারেকের মরদেহ উদ্ধার করেন।

নিহতের ছোট স্ত্রী কুলসুম সাংবাদিকদের জানান আমি আমার স্বামীর স্বাভাবিক মৃত্যু হয়নি। কারন স্বাভাবিক ভাবেই সে বাসা থেকে সাইকেল নিয়ে বের হয়েছিল। বের হওয়ার সময় বলেছিল কাদেরপুর বাজারে যাবেন। রাতে আমরা তার মোবাইল বন্ধ পাই। সকাল আনুমানিক সাড়ে আটটার দিকে বাড়ির পাশের ধানক্ষেতে লাশ দেখতে পেয়েছি। আমার স্বামীর ব্যবহৃত সাইকেলটিও লাশের পাশে নেই। কাটা ধানক্ষেতে খড় বিছিয়ে দিয়ে তার লাশ রেখে দেওয়া হয়েছে। আর সাইকেলটি নাকি নতুন বাজারে রয়েছে। তাহলে এই মৃত্যুটি আমরা কিভাবে মেনে নিবো।

বড় স্ত্রী রওশন আরা জানান, আমার স্বামীর কোন রোগ বালাই ছিলনা। তার তেমন কোন শত্রুও ছিলনা তবে গত সপ্তাহে ভেলাপুকুরি গ্রামের দু:সম্পর্কের ভাগিনা নাসিরউদ্দিনের সাথে জমিজমা নিয়ে ঝগড়া হয়েছিল। এটুকুই জানি।

নিহত আব্দুল বারেকের ছোট ছেলে রাজু ইসলাম বলেন, আমার বাবা বুধবার সন্ধ্যায় বাসা থেকে বের হয়ে রাত ১০টা পর্যন্ত না ফেরায় তাকে কল করে মোবাইল বন্ধ পাই। আমরা মনে করেছিলাম তিনি পাশের গ্রামে পালাগান শুনতে গেছেন। পরে সকালে আমাদের বাড়ির পাশের একটি ধানক্ষেত থেকে তার মরদেহ দেখতে পাই। জানিনা কে আমার বাবাকে মেরে ফেলেছে। আমি আমার বাবার হত্যার বিচার চাই।

এদিকে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন পঞ্চগড়ের পুলিশ সুপার এসএস সিরাজুল হুদা, সহকারী পুলিশ সুপার (দেবীগঞ্জ সার্কেল) রুনা লায়লা, বোদা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সুজয় রায়। যারা এ ঘটনার সাথে জড়িত পুলিশ যেন তাদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসে। তাদের যেন দৃষ্টান্তমুলক শাস্তি হয়।

পঞ্চগড়ের পুলিশ সুপার এসএস সিরাজুল হুদা বলেন, সাবেক এই ইউপি সদস্যর মরদেহের সুরতহালে আমরা তেমন কোন আলামত পাইনি। ঘটনার রহস্য উন্মোচনে কাজ করছে পুলিশ। বোদা থানায় অপমৃত্যু (ইউডি) মামলা দায়ের হয়েছে। মামলার প্রস্তুতি চলছে। এ ঘটনার সাথে জড়িতদের দ্রুত খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনা হবে।

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: