সার বলে মাটি বিক্রি করতেন ডিলার

প্রকাশিত: ১৮ নভেম্বর ২০২২, ১২:৩৩ এএম

আব্দুল বাশির, চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে: ডিলারের কাছে জিংক সালফেট সার কিনে জমিতে প্রয়োগ করার পর দেখা যায়। তা কোন কাজে আসছে না। এমনকি জিংক সালফেট সার প্রয়োগের একদিন পরই তা গলে মাটির সাথে মিশে যায়। দীর্ঘদিন এমন ঘটনা ঘটলে সন্দেহ হয় কৃষকদের মনে। কয়েকজন কৃষকদের একই অবস্থা হলে যাচাই-বাছাই করে তা সিংক সালফেট নয়, সেগুলো মাটি বলে প্রমাণ পাওয়া যায়। এরপর কৃষকেরা শরণাপন্ন হয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নিকট।

চাঁপাইনবাবগঞ্জের ভোলাহাটে জিংক সালফেট সারের নামে মাটি মিশিয়ে বিক্রি করার দায়ে এক ডিলারকে ৬ মাসের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। বুধবার (১৬ নভেম্বর) সন্ধ্যায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে এই কারাদণ্ড দেয়া হয়। ভোলাহাট উপজেলার দলদলী ইউনিয়নের মুশরীভূজা-জামতলা বাজারের মেসার্স ভাই ভাই রকমারী ষ্টোরে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়।

ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন-ভোলাহাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিচারক উম্মে তাবাসসুম। মেসার্স ভাই ভাই রকমারী ষ্টোরের মালিক ও সার ডিলার আলহাজ্ব মো. দূরুল হোদার ছেলে বিক্রেতা মো. আখতারুলকে এই কারাদণ্ড প্রদান করা হয়।

স্থানীয় কৃষক আব্দুল গনি বলেন, ভোলাহাট কৃষিপ্রধান এলাকা। এখানে আম, ধানসহ বিভিন্ন ফসল উৎপাদন করেন কৃষকেরা। জিংক সালফেট সারের নামে তাতে মাটি মিশিয়ে বিক্রি করত দুরুল হোদা। কিন্তু কৃষকরা প্রতারিত হয়ে বাধ্য হয়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও কৃষি বিভাগকে জানিয়েছে। ধানে সার দেয়ার পর কোন কাজ হচ্ছিল না দেখেই এই সন্দেহ হয় আমাদের।

স্থানীয় যুবক জাহাঙ্গীর আলম জানান, গত ১৫-২০ বছর আগেও একই অভিযোগে তার শাস্তি হয়েছিল। দীর্ঘদিন ধরেই কৃষকদের সাথে দুরুল হোদা এমন প্রতারণা করে আসছিল। এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে উপজেলা প্রশাসন ও কৃষি বিভাগের নিকট তার ডিলারশীপ বাতিল করার অনুরোধ করা হয়েছে।

বুধবার (১৬ নভেম্বর) বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে সার ক্রেতা শ্রী ভাদু কর্ম্মকার সার কেনার পর সারের প্যাকেট খুলে দেখতে পান, সারের পরিবর্তে প্যাকেটে মাটি ভর্তি। এক পর্যায়ে আলহাজ্ব দূরুল হোদার ছেলে আকতারুল ইসলাম ও কর্মচারীর সাথে কথা কাটাকাটি হয়। পরে স্থানীয় জনসাধারণ ক্ষীপ্ত হয়ে দোকানে বসা আকতারুল ও কর্মচারীর উপর চড়াও হয়। পরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এসে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে কৃষক ও স্থানীয় জনতার প্রতি আহবান জানান।

দলদলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মোজাম্মেল হক চুটু মোবাইল ফোনে জানান, ডিলার আলহাজ্ব দূরুল হোদা দীর্ঘদিন ধরে এই অবৈধ ব্যবসা চালিয়ে আসছিলেন। ২০-২৫ বছর এ ধরনের ঘটনা ঘটিয়ে ছিল। বুধবারও জনগণকে ঠকিয়ে সার বলে মাটি বিক্রি করে হাতেনাতে ধরা খেয়েছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিচারক উম্মে তাবাসসুম মোবাইল ফোনে বলেন, কৃষকদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে ৬ মাসের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। ঘটনাস্থলে এই জালিয়াতি প্রমাণিত হওয়ায় ও কৃষকদের দাবির প্রেক্ষিতে সভা করে তার সার ডিলারশীপ বাতিলের জন্য সুপারিশ করা হবে।

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: