খাগড়াছড়িতে দেশের প্রথম অ্যাম্ফিথিয়েটার, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সংস্কৃতির বিকাশ ঘটবে

প্রকৃতির রাণী পার্বত্য খাগড়াছড়ি জেলা। এ জেলার অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র আলুটিলায় নির্মিত হয়েছে দেশের প্রথম এ্যাম্ফিথিয়েটার। চলতি বছরের গত জুলাই মাসে খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসক প্রতাপ চন্দ্র বিশ্বাস নিজস্ব পরিকল্পনায় প্রায় দেড় কোটি টাকা ব্যয়ে এ এ্যাম্ফিথিয়েটার নির্মাণ করেন। এ এ্যাম্ফিথিয়েটারকে ঘিরে পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর বাসিন্দাদের বিভিন্ন সংস্কৃতি সম্পর্কে জানতে পারবে পাহাড় ও সমতলের বাসিন্দারা।
এ লক্ষ্যে শুক্রবার ও শনিবার বিকেলে জেলা প্রশাসন এবং ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ইন্সটিটিউটের যৌথ উদ্যোগে আলুটিলায় প্রথম বানিজ্যিক শো অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর চাকমা সম্প্রদায়ের কাল্পনিক গীতিনাট্য ‘রাধামন ধনপুদি’ উপভোগ করেছেন পর্যটকরা। এরপর ত্রিপুরা, মারমাসহ অন্যান্য সম্প্রদায়ের শো অনুষ্ঠিত হবে এ এ্যাম্ফিথিয়েটারে। পর্যায়ক্রমে এ ধারা অব্যাহত থাকবে।
এখন থেকে প্রতি সপ্তাহে দুইদিন শুক্র ও শনিবার বিকেল সাড়ে ৩টায় ভিন্ন ভিন্ন সংস্কৃতিতে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীগুলোর নিজস্ব সংস্কৃতি নিয়ে শো করা হবে। এতে সমতল থেকে আলুটিলায় ঘুরতে আসা হাজার হাজার পর্যটকরা পাহাড়ে বসবাসরত ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সংস্কৃতি সম্পর্কে জানতে পারবে।
এ্যাম্ফিথিয়েটার নামটি প্রাচীন গ্রীক উপসর্গ এম্ফি থেকে এসেছে। যার অর্থ চারপাশের, আর থিয়েটার অর্থ দেখার জায়গা। প্রথম খ্রিস্টপূর্ব ৮০ এর পরে প্রথম রোমান এ্যাম্ফিথিয়েটারটি পম্পেই নগরীতে নির্মিত হয়েছিল। কলোসিয়াম ইতালীয় কলোসিও হল রোমান ফোরামের ঠিক পূর্বে ইতালির রোম শহরের কেন্দ্রে একটি ডিম্বাকৃতি অ্যাম্ফিথিয়েটার। এটি এখন পর্যন্ত নির্মিত বৃহত্তম প্রাচীন অ্যাম্ফিথিয়েটার এবং অনেক বয়স হওয়া সত্ত্বেও আজও এটি বিশ্বের বৃহত্তম অ্যাম্ফিথিয়েটার। এটি প্রথম দিকে বিনোদনের জন্য ব্যবহৃত হলেও পরে আবাসন, দুর্গ, একটি কোয়ারি এবং একটি খ্রিস্টান উপাসনালয়ের উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হয়েছিল। পরে এটি বিশ্বের ৭টি আশ্চর্যের একটি হিসেবে তালিকাভুক্ত হয়।
খাগড়াছড়ি ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠী ইনস্টিটিউটের পরিচালক জীতেন চাকমা বলেন, পাহাড়ি জনগোষ্ঠীকে নিয়ে সমতলের একটা দূরত্ব রয়েছে। এই এ্যাম্ফিথিয়েটারের মাধ্যমে সমতল ও পাহাড়ে বসবাসরত বাঙ্গালী ও ক্ষুদ্র জাতিসত্তার সাথে সহজে দূরত্ব কমিয়ে আনা সম্ভব। এছাড়াও এ শো এর মাধ্যমে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর শিল্পীরা এ থেকে আর্থিক প্রণোদনা লাভ করবে এবং তাদের মাঝে সংস্কৃতির চর্চা বৃদ্ধি পাবে।’
খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসক প্রতাপ চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, ‘খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসন কর্তৃক পরিচালিত আলুটিলা পর্যটন পার্কের নন্দন কানন সৃষ্টির সময়ে পাহাড়ের প্রাকৃতিক একটি কার্ভ দেখে অ্যাম্ফিথিয়েটার নির্মাণের চিন্তা আসে। সেই বিশ্ব ঐতিহ্যের অনুরুপ ছোঁয়া পেতে আলুটিলা পর্যটন পার্কে একটি পাহাড়ের খাঁজ এ পাহাড়ের প্রাকৃতিক বক্রতার সাথে মিল পাই। তারপর কোনোরুপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য নষ্ট না করে ১০০০ আসন বিশিষ্ট একটি অ্যাম্ফিথিয়েটার নির্মাণ করি।’
তিনি আরও বলেন, ‘খাগড়াছড়ি তে ঘুরতে আসা অসংখ্য দেশি-বিদেশী পর্যটক এই অ্যাম্ফিথিয়েটার এর মঞ্চে পাহাড়ে বসবাসকারী ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠির ভিন্ন ভিন্ন বৈশিষ্ট্য মন্ডিত নৃত্য-গীত উপভোগ করবে। বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক বৈচিত্রের সাথে সবার পরিচয় হবে। এর ফলে একদিকে যেমন এই ধরনের সাংস্কৃতিক চর্চা বাড়বে অন্যদিকে পাহাড় ও সমতলের মাঝে এক অদৃশ্য সেতু বন্ধন তৈরি করবে।’
পার্বত্য চট্টগ্রামে মোট ১১টি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী জাতিসত্তার বসবাস রয়েছে। এর মধ্যে খাগড়াছড়িতে চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা এবং সাওঁতাল রয়েছে। এছাড়াও বান্দরবান ও রাঙ্গামাটিতে মুরং, লুসাই, খুমি, বোম, খেয়াং, চাক, পাংখো ও তংচংগ্যা, কুকি (ম্রো) জনগোষ্ঠীও রয়েছে। মজার বিষয় হলো পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত প্রতিটি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর আলাদা আলাদা স্বাতন্ত্র্য ও বৈশিষ্ট্য রয়েছে। তাদের ভাষা, তাদের খাবার, পোশাক, বর্ণমালা, জীবন স্টাইল সবকিছুই ভিন্ন ভিন্ন। তাদের প্রত্যেক জাতির রয়েছে আলাদা নৃত্য ও গীত। এ অ্যাম্ফিথিয়েটারের মাধ্যমে পর্যটক তথা সমতলের বাসিন্দারা তা সহজে জানতে পারবে।
সালাউদ্দিন/সাএ
বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এডিটর ইন চিফ: আমিরুল ইসলাম আসাদ
বাড়ি#৩৫/১০, রোড#১১, শেখেরটেক, ঢাকা ১২০৭
ই-মেইলঃ [email protected]
ফোনঃ (০২) ৫৮১৫৭৭৪৪
নিউজ রুমঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯১
মফস্বল ডেস্কঃ ০১৫৫২৫৯২৫০২
বার্তা প্রধানঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯০
মার্কেটিং ও সেলসঃ ০৯৬১১১২০৬১২
ইমেইলঃ [email protected]

পাঠকের মন্তব্য: