এতিম নিয়ে ব্যবসা: তিন বছরে ১২ লাখের বেশি সরকারি অর্থ আত্মসাৎ!

ইমরান হোসেন, সাতক্ষীরা থেকে: ভূয়া এতিম দেখিয়ে বছরের পর বছর সরকারি অর্থ আত্মসাৎ করার অভিযোগ উঠেছে সাতক্ষীরার তালা সদরের আল ফারুক শিশু সদন এতিমখানা কতৃপক্ষ্যের বিরুদ্ধে। সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, আল ফারুক শিশু সদন মাদ্রসায় কোন এতিম নেই। সরকারি খাতায় ৩৬ জনের নাম থাকলেও বাস্তবে রয়েছে মাত্র ৫ জন শিশু। এই পাঁচজনের প্রত্যের বাবা-মা আছেন বলেও স্বীকার করেছে শিশুরা। এদিকে সমাজসেবা অফিস থেকে প্রতি ছয় মাস পর পর ২০ জন এতিমের ক্যাপিটেশন উত্তোলন করছেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
একজন এতিমকে মাসে দুই হাজার করে টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। ৬ মাসে ১২ হাজার করে বছরে দুইবারে মোট ২৪ হাজার টাকা বরাদ্দ আসে। এর মধ্যে খাবার বাবদ দেয়া হয় এক হাজার ৬০০ টাকা, পোশাকের জন্য ২০০ টাকা, ওষুধ ও অন্যান্য খরচ বাবদও সমান বরাদ্দ দেয়া হয়।
সমাজসেবা অধিদপ্তরের বক্তব্য অনুযায়ী ইতিপূর্বে বিষয়টি নিয়ে কয়েকবার শোকজ করেছেন তারা। গত তিন বছরে সবমিলিয়ে ১২ লাখ টাকার বেশি উত্তোলন করেছেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। সরজমিনে গিয়ে পাঁচজন বাচ্চা পাওয়া গেলেও কর্তৃপক্ষের দাবি সেখানে ৩৬ জন এতিম রয়েছে। তবে এই ৩৬ জন এতিম বাচ্চা কোথায় রয়েছে সেটার সঠিক জবাব দিতে পারেনি তারা।
স্থানীয়রা জানান, এতিমখানা শুরু থেকে খেয়াল করেছি এখানে কোন এতিম নেই। এতিমদের জন্য বরাদ্দকৃত সরকারি ক্যাপিটেশনের টাকা নেওয়ার জন্য নামে মাত্র পাঁচ জন এতিম দেখিয়ে এই টাকা উত্তোলন করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বিষয়টি নিয়ে ইতিপূর্বে সমাজসেবা অধিদপ্তর থেকে শোকজ করেছিল তাদেরকে। এখানে গণমাধ্যম কর্মীসহ সংশ্লিষ্ট সরকারি দপ্তরের লোকজন পরিদর্শন করতে গেলে পার্শ্ববর্তী একটি মাদ্রাসা থেকে বাচ্চাদের ভাড়া করে নিয়ে আসে।
সাবেক সভাপতি মগবুল হোসনে জানান, দুই বছর দায়িত্বে ছিলাম ঠিকঠাক মত দায়িত্ব পালন করেছি। সে সময়ে ৩৬ জন এতিম ছিলো। বর্তমান অবস্থা জানা নেই। সরকারি ক্যাপিটেশন টাকা মোট ৫ বার উত্তোলন করেছি। সব মিলিয়ে সাড়ে ৯ লাখ টাকার মত উত্তোলন করেছেন তিনি
ভুয়া এতিম প্রসঙ্গে তিনি বলেন, চারিদিকে এতিম সংকট থাকায় এভাবে চলতে হয়। প্রতিষ্ঠান তো চালু রাখতে হবে সেই জায়গা থেকে এতিম না থাকলেও প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠানের মত থেকে যাবে।
বর্তমান সভাপতি খন্দকার মোয়াজ্জেম হোসেন(রঞ্জু) জানান, ছয় মাস হলো ক্ষমতায় এসেছি। আগে এখানে কি হয়েছে জানিনা। তবে বর্তমানে ৩৬ জন এতিম রয়েছে। তাদের নিয়মিত খেতে দেওয়া হয়। তাছাড়া সকল সুযোগ সুবিধা দেওয়া হয়। সরকারি ক্যাপিটেশনের টাকা একবার উত্তোলন করেছি আর আগামী ডিসেম্বর মাসে একবার উত্তোলন করবো। সরকার থেকে প্রতি ছয় মাস অন্তর দুই লাখ চল্লিশ হাজার টাকা দেওয়া হয় এই সামান্য টাকায় এতগুলো এতিমকে খাওয়ানোসহ অন্যান্য খরচ বহন করা কষ্টকর।
সরোমজিনে যেয়ে পাঁচ জন এতিম পেলে তখন তিনি বলেন, অন্যরা পড়তে গেছে বিভিন্ন মাদ্রসায়। তারা আসে আবার যায়,এভাবে চলে। ভূয়া এতিম দেখিয়ে অর্থ আত্নাসাৎ বিষয়ে তিনি বলেন, এতিম না থাকলে কোথায় পাবো? আপনি এতিম দিতে পারলে দেন।
তালা সমাজ সেবা অফিসার সুমনা শারমিন জানান, কিছুদিন আগে তাদের শোকোজ করা হয়েছিলো। বিষয়টি নিয়ে ইতোমধ্যে বারবার নজরদারি করা হচ্ছে। বাস্তবে সেখানে ৫ জন বাচ্ছা থাকলেও তারা খাতা কলমে ভূয়া এতিম দেখিয়ে সরকারি টাকা উত্তোলন করেন।
তিনি আরও জানান, দীর্ঘ বছর যাবৎ এতিমদের জন্য বরাদ্দকৃত ক্যাপিটেশনের টাকা কাগজ-কলমে ভূয়া এতিম দেখিয়ে তারা উত্তোলন করে আসছে। বাস্তবে পরিদর্শন করতে গেলে পার্শ্ববর্তী মাদ্রাসা থেকে বাচ্চাদের খেতে দেওয়ার কথা বলে তাদের ডেকে নিয়ে আসে। এভাবেই চলছে তাদের কার্যক্রম।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার প্রশান্ত কুমার বিশ্বাস জানান, বাস্তবে এতিম পাওয়া খুব কষ্টকর তাই যাদের মা কিংবা বাবা অন্যতরে বিবাহ করেছে সে সকল বাচ্চাদের এখানে রাখার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। তাছাড়া ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট উপজেলা সকল ইউপি চেয়ারম্যান কে বলা হয়েছে তাদের সহ এলাকায় এতিম থাকলে এই মাদ্রাসায় পৌঁছে দেওয়ার জন্য।
বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এডিটর ইন চিফ: আমিরুল ইসলাম আসাদ
বাড়ি#৩৫/১০, রোড#১১, শেখেরটেক, ঢাকা ১২০৭
ই-মেইলঃ [email protected]
ফোনঃ (০২) ৫৮১৫৭৭৪৪
নিউজ রুমঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯১
মফস্বল ডেস্কঃ ০১৫৫২৫৯২৫০২
বার্তা প্রধানঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯০
মার্কেটিং ও সেলসঃ ০৯৬১১১২০৬১২
ইমেইলঃ [email protected]

পাঠকের মন্তব্য: