ফুলগাজিতে নিয়মের তোয়াক্কা না করে সাবেক ছাত্রলীগ নেতার অবৈধ বালু উত্তোলন

কামরুল হাসান নিরব, ফেনী থেকে: ফেনীর ফুলগাজী উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শামীম মজুমদারের দৌরাত্ম্য থামছেই না। দায়িত্বে থাকাকালীন পদ বাণিজ্য, চাঁদাবাজি সহ শত অভিযোগ তার বিরুদ্ধে। পদ বঞ্চিত হয়েও যেন ক্ষমতার কমতি নেই তার।
জানা গেছে, চলতি বছরে ফেনী জেলা প্রশাসন থেকে মুহুরি নদীর ফুলগাজী অংশের বালু উত্তোলনের ইজারা নিয়েছেন তিনি। কিন্তু ইজারা নিয়েই সরকারি নিয়ম নীতির অপব্যবহার করছেন বলেও শত শত অভিযোগ এসেছে। নিয়ম অনুযায়ী মুহুরি নদীর প্রবাহমান জলধারা থেকে বালু উত্তোলনের কথা থাকলেও তিনি তা অমান্য করে আশপাশের অংশ থেকে আধুনিক এস্কেভেটর ও ড্রেজার মেশিন দিয়ে মাটি খনন করে বিক্রয় করছেন।
এছাড়া নদীর পাশে জেগে ওঠা চর কেটে বিক্রি করছেন। শুধু সরকারি খাস জায়গাই নয়, অনেকের ব্যক্তিগত জায়গাও কেটে বিক্রি করারও অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এতে করে একদিকে নদীর গতিপথ পরিবর্তন হচ্ছে অন্যদিকে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ওই এলাকার বাসিন্দারা। দীর্ঘদিনের রাজনীতির প্রভাবের কারণে ভয় কেউ মুখ খুলছে না তার বিরুদ্ধে।
এস্কেভেটর ও ড্রেজার মেশিন দিয়ে নদী থেকে অবৈধভাবে বালুর নামে মাটি কাটায় ফলে হুমকির মুখে পড়েছে উপজেলার নদী তীরবর্তী গ্রামগুলো। প্রশাসনের নাকের ডগায় এমন রমরমা ব্যবসা চললেও এ ব্যাপারে প্রশাসন নীরব ভূমিকা পালন করছে বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ।
সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ফুলগাজী সদরের উত্তর বরইয়া গ্রামের মুহুরি নদীর অংশে মতি মেম্বারের টেক নামক স্থানে ৫/৬ জনের মালিকানাধিন জায়গা রাতের অন্ধকারে কেটে বিক্রি করে ফেলেছেন। দক্ষিণ বরইয়া নাপিত কোনা নামক স্থানে মুহুরি নদীর পূর্বপাড়ে বিশাল চর কেটে বিক্রি করেছেন।
ভুক্তভোগীরা বলছেন, প্রতিদিন রাত ১১ টা থেকে ভোর ৩ টা পর্যন্ত চলে এই কর্মযজ্ঞ। যা এখনো প্রতিরাতে চলমান। এসব জমির ৫/৬ জন মালিক শামীমের ভয়ে তাদের নাম প্রকাশ করছেন না। অন্যদিকে সদরের বণিক পাড়ার কালীমন্দির এলাকায় মহুরি নদীর পূর্ব পাড় থেকেও বালির নামে মাটি উত্তোলন করছেন তিনি। এছাড়াও ফুলগাজী বাজারের উত্তর পশ্চিম অংশে কিসমত ঘনিয়া মোড়া এলাকায় অবৈধভাবে নদীর পাশের একরের পর একর জমি আধুনিক এস্কেভেটর ও ড্রেজার মেশিন দিয়ে কেটে বিক্রি করেছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গনিয়া মোড়া গ্রামের ভুক্তভোগী জানান, আমার জমির অনেক অংশই কেটে ফেলেছে, পরে সেখানে বালি না থাকায় মুক্তি পেয়েছি। একই এলাকার জমির মালিক দৌলতপুরের বাসিন্দা তাঁর জমি কেটে বিক্রি করারও অভিযোগ জানিয়েছেন। ফুলগাজী সদরের দেড়পাড়াতেও রয়েছে এধরনের একাধিক অভিযোগ।
ভুক্তভোগীদের পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নিকট অভিযোগ করা হলেও রহস্যজনক কারনে নিরব ভূমিকা পালন করে আসছে প্রশাসন।
এলাকাবাসী ও ক্ষতিগ্রস্ত স্থানীয়রা জানিয়েছেন, নদীপাড়ের জমিগুলোতে ক্ষেত খামার ও ফসল আবাদ করে কোন রকম জীবিকা নির্বাহ করি। কিন্তু গত ৫/৬ মাস ধরে আমাদের জায়গায় ড্রেজার মেশিনের পাইপ ডুকিয়ে বোরিং করে বালু তুলে নিচ্ছে শামীম। ফলে নদীতে বিশাল ভাঙন দেখা দেয়। ক্রমান্বয়ে মানুষের জায়গা জমি নদী গর্বে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। এসব বিষয় স্থানীয় উপজেলা প্রশাসন দেখেও নিরব ভূমিকা পালন করছে বলে ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেন।
উল্লেখিত জায়গার মালিকগণ বালু উত্তোলনে বাঁধা দিলে তাদেরকে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দেওয়া হয়। এই কারণে তাঁরা ভয়ে মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছেনা।
সরকারদলীয় প্রভাবশালী হওয়ায় তাদের সাথে কথা বলতে সাহস পাচ্ছে না এসব অসহায় মানুষ। তারা জানান, এই এলাকায় কখনো ভ্রাম্যমান আদালতের টিমকে চোখে দেখিনি। এ যেন এক তান্ডব লিলায় মেতে উঠেছে নদী খেকোরা।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে ফুলগাজী উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শামীম মজুমদার জানান, আমি ফুলগাজী উপজেলার মুুহুরী নদীর সম্পূর্ণ অংশ বালু উত্তোলনের জন্য ইজারা নিয়েছি। অবৈধভাবে কোথাও থেকে বালু উত্তোলন করছি না। একটি মহল আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে আসছে।
এ বিষয়ে ফুলগাজী উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) আল আমিন জানান, উনি জলাধারার বাইরে থেকে মাটি কাটছে এমন অভিযোগ পেয়েছি। রাতে মাটি কাটার বিষয়টি জানিনা তবে এটুকু জানি নদী থেকে বালু তোলার বৈধতার সুযোগে এদিক ওদিক থেকেও মাটি কেটে বিক্রি করছেন। তবে ভুক্তভোগীদের পক্ষ থেকে সুনির্দিষ্ট কোন অভিযোগ পাইনি। আপনারা সুনির্দিষ্ট তথ্য দিলে আমাদের সিনিয়র স্যারদেরকে জানিয়ে ইজারার নিয়ম ভঙ্গের দায়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আশরাফুন নাহার জানান, ইজারার নিয়ম ভঙ্গ করে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের একটি অভিযোগ পেয়ে ঘটনাস্থলে সার্ভেয়ার পাঠিয়েছিলাম। তিনি পরিমাপ করে বালু উত্তোলনের স্থান নির্ধারণ করে দিয়েছেন। অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বা মাটি কাটার বিষয়ে কোনো অভিযোগ পাইনি, অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
শাকিল/সাএ
বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এডিটর ইন চিফ: আমিরুল ইসলাম আসাদ
বাড়ি#৩৫/১০, রোড#১১, শেখেরটেক, ঢাকা ১২০৭
ই-মেইলঃ [email protected]
ফোনঃ (০২) ৫৮১৫৭৭৪৪
নিউজ রুমঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯১
মফস্বল ডেস্কঃ ০১৫৫২৫৯২৫০২
বার্তা প্রধানঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯০
মার্কেটিং ও সেলসঃ ০৯৬১১১২০৬১২
ইমেইলঃ [email protected]

পাঠকের মন্তব্য: