প্রবাসে বসেই এনআইডি হাতে পাবে প্রবাসীরা

ছবি: প্রতিনিধি
দেশের অর্থনীতি যাদের হাতে সেই প্রবাসীদের প্রবাসে গিয়ে ভোটার করার পরিকল্পনা নিয়েছিল কেএম নূরুল হুদা কমিশন। কিন্তু করোনার কারণে প্রবাসীদের এ ভোটার কার্যক্রম মুখ থুবরে পড়লেও নতুন করে আবার এ কার্যক্রম শুরু করতে যাচ্ছে কাজী হাবিবুল আউয়াল কমিশন। এতে নতুনভাবে স্বপ্ন দেখছে প্রবাসীরা।
নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোঃ আহসান হাবিব খান (অবঃ) বিডি২৪লাইভকে বলেন, প্রবাসী ভোটারদের জাতীয় পরিচয়পত্রের সেবা প্রদান করে তাঁদের দুর্ভোগ লাঘবের ব্যপারে একাধিকবার আলোচনা করেছি। গত কমিশনও প্রবাসে গিয়ে প্রবাসীদের ভোটার করার বিষয়ে পরিকল্পনা করলেও করোনার কারণে সেটার সুফল কোনো প্রবাসী পায়নি।
নির্বাচন কমিশনের ‘জাতীয় পরিচয়পত্র, ভোটার তালিকা এবং নির্বাচন ব্যবস্থাপনা তথ্য প্রযুক্তির প্রয়োগ কমিটি’ এ দুর্ভোগ কমাতে আবারও প্রকল্পটি নিয়ে যথাশীঘ্রই সভা করে একটা সিদ্ধান্তে উপনিত হবে। যাতে করে প্রবাসীদের হাতে জাতীয় পরিচয়পত্র/স্মার্টকার্ড তুলে দেয়া যায়
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দেশের অভ্যন্তরে জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধনেও নাগরিকদের নানা বিড়ম্বনার মধ্যে পড়তে হচ্ছে। জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন বা জাতীয় পরিচয়পত্র পেতে সবরকম বিড়ম্বনা লাঘব কল্পে এবং জাতীয় পরিচয় পত্র/স্মার্টকার্ড সহজকরন করার লক্ষে ‘জাতীয় পরিচয়পত্র, ভোটার তালিকা এবং নির্বাচন ব্যবস্থাপনা তথ্য প্রযুক্তির প্রয়োগ কমিটি’ এর সম্প্রতি অনুষ্ঠিত সভায় জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালককে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাথে পাসপোর্ট সংক্রান্ত, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সাথে সনদ সংক্রান্ত, সশস্ত্র বাহিনীদের সঙ্গে তাদের সদস্যদের বয়স সংক্রান্ত, মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ের সাথে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্ম তারিখ, নাম ইত্যাদি সংক্রান্ত সবার সাথে দ্বিপাক্ষিক সভা করে একটি সুপারিশনামা কমিশনের অনুমোদনের জন্য উপস্থাপনের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। এছাড়াও যেহেতু ভূমি কেনা-বেচার ক্ষেত্রে জাতীয় পরিচয়পত্র প্রয়োজন হচ্ছে বিধায় তিনি ভূমি মন্ত্রণালয়ের সাথেও এ সংক্রান্ত একটি সভা করবে। উল্লেখ্য সকল দ্বিপাক্ষিক সভা জানুয়ারী’ ২০২৩ মধ্য সম্পন্ন করা হবে।
জ্যেষ্ঠ এই নির্বাচন কমিশনার দেশবাসী ও প্রবাসে যারা বসবাস করছেন তাদের বার্তা দিয়ে বলেন, দেশের নাগরিকরা যাতে কোনো রকম বিড়ম্বনার মধ্যে না পড়ে তা নিয়ে প্রতিনিয়ত ইসি কাজ করে যাচ্ছে। জাতীয় পরিচয়পত্র নিয়ে আমাদের যে নতুন চিন্তা বা পরিকল্পনা হাতে নিয়েছি তা বাস্তবায়নে প্রবাসী নাগরিকসহ দেশের সকল মানুষের দুর্ভোগ লাঘব হবে বলে আমরা সবাই মনে করি।
ইসি কর্মকর্তারা জানান, আমরা প্রবাসীদের ভোটার করা বা সংশোধন সব সময় অগ্রাধিকার দিয়ে থাকি। কারন তাদের প্রেরণকৃত অর্থ দ্বারা আমাদের দেশের অর্থনীতির চাকা সচল থাকে। তারা না থাকলে আমাদের অর্থনীতিও থাকবে না। করোনার কারণে প্রবাসীদের এ সেবা বন্ধ হলেও এটি নিয়ে আবার কাজ শুরু করেছে কমিশন।
ইসি কর্মকর্তারা বলেন, আমরা প্রবাসীদের অর্থ দিয়ে আমাদের অর্থনীতিকে বাঁচিয়ে রাখি। উনারা যাতে এনআইডি না থাকার কারণে সমস্যার সম্মুখীন না হয়, এজন্য পুনরায় আমার প্রবাসে গিয়ে তাদের ভোটার করার পরিকল্পনা করছি এতে করে তাদের আর ভোটার বা এনআইডি পেতে দেশে আসতে হবে না।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, কেএম নূরুল হুদা কমিশনের সময় প্রবাসে গিয়ে প্রবাসীদের ভোটার করার উদ্য্যেগ নেয়া হয়। সে সময় নির্বাচন কমিশনার এবং ইসি কর্মকর্তারা সরকারের কোটি কোটি টাকা খরচ করে দেশ-বিদেশে সেমিনার করেছেন এবং বিদেশ ঘুরেছেন। তাঁদের সময়কালে একজনকেও প্রবাসে গিয়ে ভোটার করতে পারেনি ইসি। অনেকে আবেদন করলেও তার কোনো সমাধান দিতে পারেনি। এ কারণে যেমন সরকারের টাকা অপচয় হয়েছে। তেমনি প্রবাসীরা তাদের কাঙ্ক্ষিত সেবা পায়নি।
ইসি কর্মকর্তারা জানান, প্রবাসে গিয়ে ভোটার হওয়ার কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর থেকে অনলাইনে ২ হাজার ৫৫৩ জন আবেদন করেছেন। আগের কমিশন তাদের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি। ফলে প্রবাসীদের স্বপ্ন সহজে পূরণ হচ্ছে না।
প্রবাসী মো. রাসেল হোসেন দীর্ঘ ১৪ বছরের বেশি সময় ধরে দুবাইয়ে একটি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত। তিনি দেশত্যাগের আগে এনআইডি করেননি। এখন বয়স ৩৬ বছর পেরুলেও পরিচয়হীন তিনি। পরিচয়পত্র না থাকায় কর্মক্ষেত্রে প্রতিদিন নানা ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হোন। মো.রাসেল হোসেন বলেন, আমি দীর্ঘদিন ধরে দুবাইয়ে কর্মরত। আমি বিদেশে আসার আগে এনআইডি করতে পারিনি। পরে দেশে না যাওয়ার কারণে এনআইডি কার্ডও করতে পারিনি। যখন আমি শুনলাম প্রবাসে বসে আমি এনআইডি করতে পারবো তখন অনেক আশা মনে জেগেছিল। কিন্তু করোনার কারণে নাকি তা আর হয়নি।আবার যদি শুরু করে তাহলে আমাদের চেয়ে বেশি খুশি আর কেউ হবে না
আরেক প্রবাসী বলেন, মালেশিয়াতে কার্যক্রম উদ্বোধন হওয়ার কথা শুনে অনেক খুশি কিন্তু পরবর্তীতে ভোটারের জন্য তথ্য পূরণ করতে গিয়ে দেখলাম, আমার যে মোবাইল নম্বর, সেটা দিয়ে রেজিস্ট্রেশনের কার্যক্রমই শুরু করা যাচ্ছে না। একই অবস্থা আমার পরিচিত কয়েকজন প্রবাসীরও। ফলে আদৌ এনআইডি পাব কি না সেটি নিয়ে সংশয়ে পড়েছিলাম।এখন শুনতেছি আবার শুরু হবে দেখি কি হয় সরকার আমাদের জন্য কি করে।
এনআইডির কর্মকর্তারা বলছেন, বিশ্বের ৪০টি দেশে মোট ১ কোটি ৪০ লাখ ৪৬ হাজার ৫৩৪ বাংলাদেশি রয়েছেন এনআইডি ছাড়া। তাদের এনআইডি দেয়ার কার্যক্রম বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় মেশিন নিয়ে সেসব দেশে যেতে হবে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের। অনলাইনে আবেদন করলেও প্রবাসীদের তথ্য যাচাই-বাছাইয়ের পর সেটি ঠিক থাকলে তাদের ফিঙ্গার প্রিন্ট ও আইরিশ নেয়ার প্রয়োজন হবে। ২০২০ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০২৫ সালের নভেম্বর মেয়াদে ‘আইডেন্টিফিকেশন সিস্টেম ফর এনহ্যান্সিং একসেস টু সার্ভিসেস
(আইডিয়া) দ্বিতীয় পর্যায়’ প্রকল্প হাতে নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। প্রকল্পের আওতায় প্রবাসে নিবন্ধন টিম পাঠানো ও বাংলাদেশি নাগরিকদের নিবন্ধন সংক্রান্ত ব্যয় হিসেবে ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ পেলেও তা থেকে মাত্র ৪ শতাংশ (৪ কোটি) টাকা ব্যয় করতে পেরেছিলো প্রকল্পে নিয়োজিত থাকা কর্মকর্তারা। কিন্তু পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমতি না পাওয়া পরবর্তীতে কাজ শুরু করা না গেলে যায়নি, সেই টাকাও আর ব্যয় করা যায়নি।
এদিকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে ইসি চিঠি দেবে বলে জানা গেছে। গত মঙ্গলবার (২৯ নভেম্বর) এনআইডি প্রকল্প নিয়ে বৈঠক করেছে ইসি। সেখানে এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।
জানা যায়, ২০১৭ সালের জেলা প্রশাসক সম্মেলনে মুক্ত আলোচনায় প্রবাসীদের ভোট দেয়ার সুযোগ দিতে তাদের এনআইডির বিষয়টি উঠে আসে। সেখানে বলা হয়, ‘দেশের প্রায় ৯০ লাখ নাগরিক (বর্তমানে ১ কোটি ৪০ লাখের বেশি) বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কাজ করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা আয় করছেন এবং দেশের অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখছেন। বিভিন্ন কারণে তাদের অনেকে এনআইডি প্রস্তুত করতে পারেননি। এনআইডি প্রস্তুতির ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত উপস্থিতি আবশ্যক। এটি প্রাপ্তি বা সংশোধনের জন্য প্রবাসীদের বাংলাদেশে আসতে হয়। ফলে তারা ভোগান্তির সম্মুখীন হন। তাই বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসের মাধ্যমে প্রবাসীদের জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদান, সশোধন ও স্মার্টকার্ড দেয়ার সুযোগ সৃষ্টি করা যেতে পারে।
সে সময় প্রস্তাবটি পরীক্ষা-নিরীক্ষাপূর্বক যথাযথ ব্যবস্থা নিতে প্রধানমন্ত্রী অনুমোদন দেন। পরে সে বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে ২০১৭ সালের ১৬ আগস্ট প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিবকে চিঠি দেয় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।
এরই পরিপ্রেক্ষিতে প্রবাসীদের এনআইডি দেয়ার বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে ওই বছরের ১৯ সেপ্টেম্বর প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে চিঠি দেয়া হয়। এরপর ২০১৮ সালের ১৯ এপ্রিল প্রবাসী বাংলাদেশিদের এনআইডি প্রদান ও ভোটাধিকার সংক্রান্ত একটি সেমিনারের আয়োজন করা হয়। সেখানে রাজনীতিক ও সুশীল সমাজের ব্যক্তিরা তাদের মতামত দেন। পরে ২০১৯ সালের ৫ নভেম্বর নতুন ওয়েবসাইট উদ্বোধনের মাধ্যমে মালয়েশিয়ায় অবস্থানরত বাংলাদেশিদের এনআইডি নিবন্ধন কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ। এরপর সংযুক্ত আরব আমিরাতেও এ কার্যক্রম উদ্বোধন করা হয়। তৃতীয় দেশ হিসেবে যুক্তরাজ্যে প্রবাসীদের এনআইডি দেয়ার কার্যক্রম উদ্বোধন করেছিলেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নূরুল হুদা। এরপর আর কোনো দেশে কার্যক্রম উদ্বোধন করা হয়নি।
প্রবাসীদের পরিচয় নিবন্ধনের জন্য চালু করা পোর্টালে ইসির দেয়া সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী দুই হাজার ৫৫৩টি আবেদন পড়েছে। এর মধ্যে মালয়েশিয়া থেকে ২৩৯টি, সৌদি আরব থেকে ৯১২টি, সিঙ্গাপুর থেকে ১৫১টি, সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে ৭৪১টি ও যুক্তরাজ্য থেকে ৪৮৫টি, মালদ্বীপ থেকে ছিল ২৫টি।
ইমদাদ/সাএ
বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এডিটর ইন চিফ: আমিরুল ইসলাম আসাদ
বাড়ি#৩৫/১০, রোড#১১, শেখেরটেক, ঢাকা ১২০৭
ই-মেইলঃ [email protected]
ফোনঃ (০২) ৫৮১৫৭৭৪৪
নিউজ রুমঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯১
মফস্বল ডেস্কঃ ০১৫৫২৫৯২৫০২
বার্তা প্রধানঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯০
মার্কেটিং ও সেলসঃ ০৯৬১১১২০৬১২
ইমেইলঃ [email protected]

পাঠকের মন্তব্য: