লাশ চুরি ঠেকাতে কবরের পাশে পাহারায় স্বজনরা

প্রকাশিত: ১৩ ডিসেম্বর ২০২২, ১০:২২ পিএম

শেরপুর সদর উপজেলার চরশেরপুর ইউনিয়নের কান্দাপাড়া গ্রামের মাছ ব্যবসায়ী লিটন মিয়া হিটলারের লাশ কবর থেকে উত্তোলন করেছে পুলিশ ও ম্যাজিষ্ট্রেট। লাশ চুরির ভয়ে মামলার দেড় মাস পর্যন্ত কবরস্থান পাহাড়া দেয় স্বজনরা। আদালতের নির্দেশে মঙ্গলবার (১৩ ডিসেম্বর) বেলা ১১টায় ওই লাশ উত্তোলন করা হয়। এ ঘটনার বিচার দাবী করেছে স্থানীয়রা।

সুত্রে জানা গেছে, শেরপুর সদর উপজেলার চরশেরপুর ইউনিয়নের কান্দাপাড়া গ্রামের নিজ বাড়ী থেকে গত ২ অক্টোবর রাতে লিটন মিয়া হিটলারকে ডেকে নিয়ে যায় শহিদুল ইসলাম শুভ ও তার সহযোগীরা। এর পরদিন সকালে স্থানীয় মসজিদের সামনে হিটলারের মরদেহ পাওয়া যায়। অভিযুক্ত আসামীরাই হিটলারের স্ট্রোক করে মৃত্যু হয়েছে এমন কথা বলে তড়িঘরি করে দাফন করে হিটলারের মরদেহ। পরবর্তীতে খবর মিলে জমি নিয়ে বিরোধের কারণেই পাশ্ববর্তী শহিদুল ইসলাম শুভরা হিটলারকে হত্যা করে এখানে মসজিদের সামনে ফেলে রাখে।

এরপর হিটলারের ভাতিজা আবির ইসলাম শহিদুল ইসলাম শুভসহ ৭ জনকে আসামী করে গত ৩০ অক্টোবর আদালতে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। শেরপুর সদর থানা পুলিশকে তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহনের নির্দেশ দেয় আদালত। আদালতে মামলা করার পর থেকেই হিটলারের কবরস্থান থেকে লাশ চুরি হয়ে যেতে পারে এমন ভয়ে গত দেড় মাস ধরে হিটলারের স্বজনরা পাহাড়া দেয় হিটলারের কবরস্থান। এ ঘটনায় পুলিশের আবেদনের প্রেক্ষিতে আদালত হিটলারের লাশ উত্তোলন করে ময়না তদন্ত ও সুরতহাল রিপোর্ট করার নির্দেশ দেয়।

এ নির্দেশের প্রেক্ষিতে পুলিশ ও নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেটের উপস্থিতিতে মঙ্গলবার কবর থেকে হিটলারের লাশ উত্তোলন করা হয়। এসময় এলাকার হাজারো মানুষ উপিস্থত হয়ে এঘটনার সুষ্ঠু ও দৃষ্টান্তমূলক বিচার দাবী করেন। লাশের ময়না তদন্ত করে প্রাপ্ত রিপোর্টের আলোকেই প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করবে বলে জানান পুলিশ।

এদিকে, হিটলার তিন কন্যা সন্তান রেখে মারা যায়। স্ত্রী তাছলিমা বেগম অতিকষ্টে দিনাতিপাত করছে সন্তানদের নিয়ে। আর ছোট মেয়ে ফারজিনা আক্তার এখনো বাবা ফিরে আসবে এমন আশায় কবরস্থানে গিয়ে বসে থাকে প্রতিনিয়ত। তাই স্বজনদের দাবী এ হত্যাকান্ডের দায়ী ব্যক্তিদের যেন কঠিন শাস্তি হয়।

নিহতের স্ত্রী তাছলিমা বেগম বলেন, আমার স্বামীরে ডেকে নিয়ে আসামীরা ফেরে ফেলেছে। আমাদের মামলা করবার দেয় নাই। পরে ভয়ভীতি দেখায় আমরা যাতে মামলা না করি।

মামলার বাদী ও নিহতের বড় বাইয়ের ছেলে আবির ইসলাম বলেন, আমার চাচাকে জমি নিয়ে বিরোধের কারণেই শুভ ও মতিনরা ডেকে নিয়ে ঘরে উঠিয়ে খুন করে মসজিদের সামনে ফেলাই রাখছিল। আবার ওরাই বলছিল, স্ট্রোক করে মারা গেছে। আমরা ঢাকা থাকি প্রথমে বুঝতে পারি নাই। পরে জানতে পারি ওরা আমার চাচাকে খুন করেছে। তাই আমরা মামলা করেছি। মামলার পর থেকেই তারা আমার চাচার লাশ চুরি করবে, এমন হুমকি দেয়ায় আমরা আমার চাচার কবরস্থান পাহাড়া দিয়েছি। আমি আমার চাচার হত্যাকারীদের বিচার চাই।

এ ব্যাপারে শেরপুর সদর থানার উপ-পুলিশ পরিদর্শক ও তদন্ত কর্মকতা আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ সাংবাদিকদের বলেন, আমরা আদালতের নির্দেশে কবর থেকে লাশ তুলেছি। ময়না তদন্ত ও সুরতহাল রিপোর্ট পাওয়ার পর প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: