নিয়োগ অনুমোদন রেজ্যুলেশনে শিক্ষক প্রতিনিধির সই জাল

প্রকাশিত: ২৯ ডিসেম্বর ২০২২, ০৩:০২ পিএম

বনি ইয়ামিন, রাঙ্গাবালী (পটুয়াখালী) থেকে: নিয়মবহির্ভূতভাবে পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার ছোটবাইশদিয়া ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসার সুপার মো. আলমগীর হোসেন এর বিরুদ্ধে নিয়োগ-বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। নিয়োগে স্বজনপ্রীতি ও অনৈতিকভাবে আর্থিক লেনদেন করা হয়েছে। মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটি সভাপতি সাথে সখ্যতা করে সৃষ্ট ও শূন্যপদে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়েছে। নিয়োগ দেয়া ৩ পদে ১৫ লাখ টাকা ঘুষ বিনিময় করা হয়েছে, আদালতে করা নালিশী মামলায় এমন অভিযোগ উল্লেখ রয়েছে। গোপনে নিয়োগ কার্যক্রম করে ম্যানেজিং কমিটির এক সভায় সকলকে নিয়োগপ্রাপ্তদের বিষয় জানানো হয়; পরিচয় গোপন রেখে একাধিক সূত্র জানিয়েছে।

এছাড়াও নিয়োগ অনুমোদন রেজ্যুলেশনে শিক্ষক প্রতিনিধি মো. কবির হুসাইনের সই জাল করা হয়েছে। চাকুরীতে স্বামী মামুনের মত না থাকায় স্ত্রী হাফছা বেগমের আয়া পদের জন্য দেওয়া টাকা মাদ্রাসার সুপারের কাছে ফেরত চেয়েছেন মুঠোফোনে; দুই দফা এমন কথা বলার কল রেকর্ড পাওয়া গেছে। যেখানে সভাপতির সাথে যোগাযোগ করতে বলেন সুপার। টাকা গচ্ছিত রয়েছে; সভাপতি তারিখ দিবে তারিখ মতো টাকা নিয়ে যাবেন বলেও শোনা যায় ফাঁস হওয়া কল রেকর্ডে। মনগড়া নিয়োগের বিষয়ে জেলা প্রসাশকসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে চিঠি চালাচালি করা হলেও কোন সুরহা না মেলায় চারজন বাদী হয়ে চলতি বছরের অক্টোবর মাসে গলাচিপা সহকারী জজ আদালতে ১৩ জনকে বিবাদী করে নালিশী মামলা করেন। এর আগে নিয়োগকারীদের বেতন ভাতা অনুমোদন না হওয়া ও তাহাদের নিয়োগ বাতিল করার জন্য জেলা শিক্ষা অফিসারকে “লিগ্যাল নোটিশ” দেয়া হয়।

জানা গেছে, ২০১৮ সালের সর্বশেষ জনবল কাঠামো অনুযায়ী সরকারি বিধি মোতাবেক ছোটবাইশদিয়া ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসার সৃষ্টপদে একজন আয়া ও একজন নিরাপত্তা কর্মী আবশ্যক দেখিয়ে ২০২০ সালে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ। এরপরে প্রার্থীদের আবেদন জমা পরে। নিয়োগ প্রক্রিয়ার কথা বলে চাকুরীপ্রত্যাশী চারজনের কাছ থেকে ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা নেয় মাদ্রাসার সুপার মো. আলমগীর হোসেন। সে সময় করোনা প্রাদুর্ভাবের কারনে নিয়োগটি স্থগিত করা হয়। পরবর্তী নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির জন্য আবেদনকারীদের অপেক্ষা করতে বলে সুপার। কিন্তু যারা আবেদন করেছিলেন তাঁদের আবেদনের সুযোগ না রেখে এবং আবেদনের সঙ্গে পে-অর্ডারের টাকা ফেরত না দিয়েই চলতি বছরের ১২ জুন পুনঃরায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিটি জাতীয় ও স্থানীয় দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশ করে। যেখানে পরিচ্ছন্নতাকর্মীর শূন্যপদ উল্লেখ করা হয়।

অভিযোগকারীরা বলেন, ছোটবাইশদিয়া ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসায় একজন আয়া ও একজন নিরাপত্তাকর্মী পদে লোক নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে প্রতিষ্ঠানের সুপার। বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর চাকুরীর জন্য ভিন্ন ভিন্ন ভাবে সুপারের সাথে যোগাযোগ করে প্রকাশিতপদে আবেদন করেন- মো. আবু তাহের, মোসা. তিসা আক্তার, মো. দেলোয়ার ও মো. আশিক। পরে নিয়োগ সংক্রান্ত খরচের কথা বলে পদপ্রত্যাশী এই চারজনের কাছ থেকে আলাদাভাবে ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা নেয় সুপার আলমগীর। কিন্তু অদৃশ্যশক্তি কারণে নিয়োগ প্রক্রিয়া আর এগোয়নি। নানা অজুহাত ও করোনা প্রাদুর্ভাব দেখিয়ে প্রকাশিত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি বাতিল করে দেয় কর্তৃপক্ষ। পরবর্তী নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের জন্য অপেক্ষা করতে বলা হয় ওই আবেদনকারীদের। এরপরে একদিন লোকমুখে জানতে পারেন মাদ্রাসায় তাদরে অপেক্ষারতপদে নিয়োগ হয়েছে এবং মিষ্টি বিতরণ করা হচ্ছে। এরপরে সুপারের কাছে টাকা ফেরত চাইলে টালবাহানা করেন। অবৈধ নিয়োগের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে অভিযোগ দিলেও কোন সুরহা মেলেনি। তাই নিয়োগ কা-ে জড়িত ১৩ জনের বিরুদ্ধে আমরা চারজন বাদী হয়ে আদালতে নালিশী মামলা করেছি।

মামলা নথি ঘেঁটে দেখা যায়, বাদীপক্ষকে কোন কিছু বুঝিতে বা জানিতে না দিয়ে অজ্ঞাতে ও অসাক্ষাতে গোপনে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিয়া নিরাপত্তা কর্মী পদে মো. সৈকত, পরিচ্ছন্নতা কর্মী পদে মো. সুজন ও আয়া পদে হাফছা বেগমকে নিয়োগ প্রদানের জন্য তাহাদের কাছ থেকে ১৫ লাখ টাকা ঘুষ বিনিময়ে নিয়োগ বোর্ডের অধিকাংশ সদস্যকে কিছু বুঝিতে না দিয়ে পরিচালনা কমিটি সভাপতি ও মাদ্রাসা সুপারসহ কয়েকজন অবৈধভাবে লাভবান হইয়া অবৈধ নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে। এবং আগের বিজ্ঞপ্তি কার্যক্রম বিধি মোতাবেক পে-অর্ডারসহ আবেদন করলেও তাহাদের নিকট হইতে নিয়োগ সংক্রন্ত খরচের জন্য ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা নেয়া হয়। কিন্তু তাহাদের কোন প্রবেশপত্র কিংবা নোটিশ প্রদান করা হয় নাই।

পরিচালনা পরিষদের বিদ্যুৎসাহী মো. রওশন মৃধা জানান, ব্যাক্তিগতভাবে সুপার ও সভাপতির মাধ্যমে নিয়োগ হয়ে গেছে। আমি কিছুই জানিনা। যখন ঝামেলা বাঁধছে তখন আমার সই দিতে বলছে, নিয়োগে এত বড় ঘটনা ঘটে গেল কিছুই জানিনা। হঠাৎ কিসের জন্য সই দিব। এই নিয়োগে সম্পূর্ণ অনিয়ম করা হয়েছে। অভিভাবক সদস্য আব্দুর রউফ জানালেন, নিয়োগ হওয়ার পরে আমাদের মিটিং হইছে সেখানে আমাদের থেকে দস্তখাত (সই) নিছে।

নিয়োগে লেনদেনের ব্যাপারে জানতে প্রতিষ্ঠান পরিচালনা কমিটি সভাপতি আবু হানিফ হাওলাদার সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে লেনদেনের কথা অস্বীকার করে বলেন, নিয়োগের ব্যাপারে এমপি নিজেও জানে সব।

ছোটবাইশদিয়া ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসার সুপার মো. আলমগীর হোসেন বলেন, ‘এই নিয়োগ কাজ পরিচালনা হয়েছে। এখানে আমি কারো কাছ থেকে মোটা অংক তো ভাল কথা, নূন্যতম টাকা আমি কারো কাছ থেকে আনি নাই। তবে নিয়োগ কার্যক্রম পরিচালনা করার জন্য সভাপতি আমাকে ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকা দিয়েছে। এই টাকা দিয়ে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সকল কাজ সম্পূর্ণ করেছি। আমাকে এই টাকা দিছে আমি এইটুক জানি।’

এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মোহাম্মদ সালেক মূহিদ বলেন, ‘গত ১ তারিখে আনুষ্ঠানিকভাবে ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দায়িত্ব পেয়েছি। বিষয়টি আমার জানা ছিল না। আপনার কাছ থেকে জানলাম। এ বিষয় খবরাখবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিব।’

লিগ্যাল নোটিশ ব্যাপারে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মুহা: মুজিবুর রহমান বলেন, নোটিশের জবাব দেয়ার জন্য প্রতিষ্ঠান প্রধানকে বলে দিয়েছি। নিয়োগ প্রসঙ্গে ব্যস্ততা দেখিয়ে শেষ পর্যন্ত মন্তব্য দেননি এ কর্মকর্তা।

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: