প্রচ্ছদ / জেলার খবর / বিস্তারিত

মোঃ শাকিল শেখ

সাভার করেসপন্ডেন্ট

ধামরাইয়ে সমন্বিত চাষে লাভবান মৌচাষি, চলতি মৌসুমে সংগ্রহ ৭টন মধু

   
প্রকাশিত: ১০:২৮ অপরাহ্ণ, ১০ জানুয়ারি ২০২৩

ঢাকার ধামরাই উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে এখন সরিষার হলুদ ফুলের অপরূপ দৃশ্য। আর এমন দৃশ্য দেখে মনে হবে যেন বিছিয়ে রেখা হয়েছে হলুদ চাদর। পাশাপাশি ক্ষেতজুড়ে মৌমাছিদের হল্লা। প্রায় প্রতিটি সরিষা ক্ষেত থেকেই চলছে মধু আহরণের ধূম। এতে সমন্বিত এই চাষে সরিষাচাষি ও মৌচাষি উভয়ই লাভবান হচ্ছেন।

চলতি মৌসুমে উপজেলাটির ১৬টি ইউনিয়নের ৬ হাজার ২০০ হেক্টর সরিষার আবাদি ক্ষেত থেকে প্রায় অর্ধকোটি টাকার মধু উৎপাদন হবে বলে আশা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার। আর পরাগায়নের ফলে সরিষার ফলনও বাড়বে বলে জানান তিনি।

মঙ্গলবার (১০ জানুয়ারি) বিকালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, প্রতিবছর শীতের এই সময়ে সরিষা ফুল থেকে মধু সংগ্রহে ধামরাইতে ছুটে আসেন দেশের বিভিন্ন জেলার মৌয়ালরা। এবারও রাজবাড়ী, টাংগাইল, খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরাসহ বিভিন্ন জেলা থেকে মধু সংগ্রহ করছেন প্রায় শ’খানেক মৌয়াল। প্রত্যেকের রয়েছে ৫০টি থেকে শতাধিক বাক্স। ক্ষেতের পাশে সেগুলো বসিয়ে মৌমাছিদের ছেড়ে দেয়া হয় মধু সংগ্রহে। এরপর সপ্তাহে অন্তত একদিন বাক্স থেকে মধু বের করেন তারা। প্রতিটি বক্স থেকে পাওয়া যায় ২ থেকে ৩ কেজি মধু। এভাবে এক মৌসুমে মধু পাওয়া যায় অন্তত ৫ থেকে ৬ বার।

রাজবাড়ী জেলার মৌচাষী সিদ্দিক মিয়া এবার ৫০টি মৌমাছির বক্স পেতেছেন ধামরাইয়ের কুল্লা ইউনিয়নের আড়ালিয়া গ্রামের সরিষাচাষী হামিদ আলীর সরিষা ক্ষেতের পাশে।

তিনি বলেন, আমার বক্স আছে ৫০ পিসের মতো। এই বক্সগুলোতে অস্ট্রেলিয়ার মেলিফিয়া প্রজাতির মৌমাছি দিয়ে মধু সংগ্রহ করা হয়। একেকটি বক্সে প্রায় লক্ষাধিক মৌমাছি থাকে। এখন পর্যন্ত আমার ৫০ হাজার টাকার মতো মধু বিক্রি হয়েছে আশা করি আরো লাখ খানেক টাকার মধু বিক্রি করতে পারবো। ফুল থেকে মৌমাছিদের মধু সংগ্রহের সময় পরাগায়নের ফলে বেড়ে যায় সরিষার ফলনও। এতে এতে মৌয়ালদের পাশাপাশি লাভবান হচ্ছেন সরিষা চাষিরাও।

এ বিষয়ে সরিষা চাষী হামিদ মিয়া বলেন, প্রতি বছরই আমার ক্ষেতে মৌয়ালরা বক্স বসায়। সরিষা ক্ষেত থেকে মধু আহরণ করলে পরাগায়ন হয়। এতে উৎপাদন বাড়ে। তাই তিনি ও আশপাশের জমির মালিকেরা মৌচাষিদের উৎসাহিত করছেন।

তিনি আরো জানান,এবার আমি ৩বিঘা জমিতে সরিষা বুনেছি আশাকরি আল্লাহর রহমতে এবারও অনেক ভালো ফলন হবে। এতে আগের ফসলের লসের টাকা কিছুটা হলেও উঠে আসবে।

এদিকে খাঁটি মধু পেতে এসব ক্ষেতের পাশে বসানো বক্সের মৌয়ালদের কাছে ছুটে আসেন অনেকে। খুচরা পর্যায়ে প্রতিকেজি মধু বিক্রি করেন ৪শ’ থেকে ৫শ’ টাকা দরে।

এ সময় মধু কিনতে আসা সুমন আহমেদ নামে এক ক্রেতার সাথে কথা হলে তিনি জানান, রাজধানীর মিরপুর থেকে বাইকে করে স্ত্রীকে নিয়ে পাশের একটি থিমপার্কে ঘুরতে এসেছিলেন তিনি। পথিমধ্যে সরিষা ক্ষেতের পাশে মধুর বক্স দেখতে পেয়ে বাইক থামিয়ে ২কেজি মধু কিনে নিলেন। তার মতে চোখের সামনে এমন খাঁটি এত কমদামে কিনতে পেরে বেশ খুশি তিনি।

পাশেই স্কুল ব্যাগ কাধে মাহমুদ নামে ক্লাস সিক্সের এক শিক্ষার্থী এসেছে মধু নিতে তার সাথে কথা বলতেই জানালো, বাসায় তার বৃদ্ধ দাদীর খুব কাশি হয়েছে তাই মা ২০০টাকা দিয়ে বলেছে স্কুল থেকে ফেরার পথে দাদীর জন্য আধাকেজি মধু নিয়ে যেতে। তাই সে এসেছে এখান থেকে মধু নিতে।

মৌচাষকে পেশা হিসেবে নিয়ে অনেকে হয়ে উঠছেন স্বাবলম্বী। বাড়ছে গ্রামীণ অর্থনীতির পরিসরও। চলতি মৌসুমে ধামরাই থেকে প্রায় ৬ থেকে ৭টন মধু সংগ্রহ করবেন মৌচাষিরা। অন্যদিকে, ফুল থেকে মধু সংগ্রহের ফলে সরিষার ফলনও বাড়বে প্রায় ৮ হাজার মেট্রিক টন। এমনটাই আশাবাদ উপজেলা কৃষি বিভাগের।

এ ব্যাপারে ধামরাই উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আরিফুল হাসান বলেন, এ বছর ধামরাই উপজেলায় ৬ হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ করেছেন কৃষকরা। পাশাপাশি এসব ক্ষেতে প্রায় ৫ শতাধিক মৌমাছির বক্স স্থাপন করেছেন মৌয়ালরা। মৌমাছি মূলত সরিষার ফুলে উড়ে উড়ে বসে মধু সংগ্রহ করে। এতে সরিষা ফুলে সহজে পরাগায়ন ঘটে। তাই সরিষা ক্ষেতের পাশে মৌ চাষের বাক্স স্থাপন করলে সরিষার ফলন অন্তত ২০ শতাংশ বাড়ে। পাশাপাশি মৌচাষিরা মধু আহরণ করে লাভবান হন।

সালাউদ্দিন/সাএ

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: