টানা এক সপ্তাহ শৈত্যপ্রবাহের কবলে চুয়াডাঙ্গা

প্রকাশিত: ১১ জানুয়ারি ২০২৩, ১১:৫৯ এএম

মিজানুর রহমান, চুয়াডাঙ্গা থেকে: টানা এক সপ্তাহ শৈত্যপ্রবাহ চলছে এ জেলায়। গত ৫ জানুয়ারী বৃহস্পতিবার থেকে চুয়াডাঙ্গার উপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে শৈত্য প্রবাহ। প্রতিদিন সন্ধ্যা থেকে দুপুর পর্যন্ত ঘন কুয়াশায় ঢেকে থাকছে এবং হিমেল বাতাস বয়ে যাওয়ার কারণে তীব্র শীতের অনুভূতি স্বাভাবিক জীবন বাধাগ্রস্ত করে দিচ্ছে। চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে প্রতিনিয়ত বাড়ছে শীতজনিত রোগীর সংখ্যা।

গত কয়েকদিন ধরে শীতের তীব্রতা বাড়ায় শীত থেকে রক্ষা পেতে সাধ্যের মধ্যে পছন্দের পোশাক কিনতে ক্রেতারা ভিড় জমাচ্ছেন শহরের অভিজাত মার্কেটসহ ফুটপাতের দোকানগুলোতে।

চুয়াডাঙ্গার শহরের সমবায় নিউমার্কেট, আব্দুল্লাহসিটি, প্রিন্সপ্লাজা, পুরাতন গলির মার্কেট সহ বিভিন্ন মার্কেট এবং ফুটপাত মার্কেটগুলোতে ঘুরে দেখা গেছে গরম কাপড়ের চাহিদা অনেক বেশি। ক্রেতাদের মনোযোগ আকর্ষণে হরেক রকম বাহারী পোশাকের পসরা সাজিয়ে বসেছেন দোকানিরা।

প্রতিদিন বিকাল থেকে রাত পর্যন্ত ফুটপাতের দোকানগুলোতে নিম্ন আয়ের মানুষের পাশাপাশি উচ্চবিত্তরাও রাস্তার পাশের এসব দোকানে ভিড় জমাচ্ছেন। অভিজাত মার্কেটগুলোতে সোয়েটারের দাম বেশি হলেও ফুটপাতের দোকানে একটি সোয়াটারের দাম ১৫০ থেকে ২৫০ টাকা, বাচ্চাদের কাপড় ৬০ থেকে শুরু করে ২৫০ টাকা পর্যন্ত, মাফলার ৫০ থেকে ১৫০ টকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। সাধ্যের মধ্যে থেকেই পছন্দের শীতের পোশাকটি বেছে নিতে চেষ্টা করছে নিম্নবিত্ত দরিদ্র মানুষরা।

কয়েকজন ক্রেতা জানান, শীত বাড়লেই পরিবারের সবার জন্যে শীতের পোশাক ক্রয় করা লাগে। অভিজাত মার্কেটগুলোতে পোশাকের যে দাম তাতে আমাদের পক্ষে ক্রয় করা সম্ভব হয় না। তাই অল্প টাকায় বেশি পোশাক কিনতে ফুটপাতের দোকান গুলো থেকেই কিনতে হয়।

ফুটপাতের কয়েকজন শীতবস্ত্র বিক্রেতা জানান, এখানে সব বয়সী মানুষের পোশাক বিক্রয় হচ্ছে। আমরা দীর্ঘদিন ধরে ব্যবসা করে আসছি। শীত বেশি পড়লে ব্যবসা অনেক ভালো হয় এবং শীত কম হলে বেচা কেনা কম হয়। বড়দের জ্যাকেট, সোয়েটার, কোট, বাচ্চাদের কাপড় পাওয়া যায়, সেগুলোর দাম তুলনামূলক একটু কম হয়। কোনো পোশাকের মূল্য নির্দিষ্ট করা থাকে না। দরকশাকশির মাধ্যমে কিনতে হয়। পোশাকের দাম একটু বেশি করে চাওয়া হয়।

চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রকিবুল হাসান বলেন, বুধবার (১১ জানুয়ারী) সকাল ৯ টায় চুয়াডাঙ্গায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস এসময় বাতাসের আদ্রতা ছিলো ৯৩ শতাংশ। মঙ্গলবার (১০ জানুয়ারী) সকাল ৯ টায় চুয়াডাঙ্গায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৮ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস এসময় বাতাসের আদ্রতা ছিলো ৮৫ শতাংশ। সোমবার (৯ জানুয়ারী) সকাল ৯ টায় চুয়াডাঙ্গায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস এসময় বাতাসের আদ্রতা ছিলো ৮৫ শতাংশ। রবিবার (৮ জানুয়ারী) সকাল ৯ টায় চুয়াডাঙ্গায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৭ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস এসময় বাতাসের আদ্রতা ছিলো ৯৫ শতাংশ, যা এই মৌসুমেরও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। শনিবার (৭ জানুয়ারী) সকাল ৯ টায় দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৮ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয় চুয়াডাঙ্গায় এ সময় বাতাসের আদ্রতা ছিলো ৯৫ শতাংশ, এর আগে শুক্রবার (৬ জানুয়ারী) সকাল ৯ টায় চুয়াডাঙ্গার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা এবং বাতাসের আদ্রতা ছিলো ৯৮ শতাংশ। বৃহস্পতিবার (৫ জানুয়ারী) সকাল ৬ টায় রেকর্ড করা হয় ৯ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং বাতাসের আদ্রতা ছিলো ৯৭ শতাংশ।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, গত ৩ দিনে ডায়রিয়া ওয়ার্ডে ৮৭ জন এবং শিশু ওয়ার্ডে ৬৭ জন রোগী ভর্তি হয়েছে। এছাড়া প্রতিদিন প্রায় ৪শ শিশু আউটডোরে চিকিৎসা নিয়েছে। শীতজনিত কারণে নিউমোনিয়া রোগীর সংখ্যা বাড়ছে।

চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. আসাদুর রহমান মালিক খোকন বলেন, ‘এই শীতে ঠান্ডাজনিত রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। তীব্র শীতে হিমেল বাতাসের কারণে বেশি নিউমোনিয়া ও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে। এসব রোগিদেরকে চিকিৎসা, সবাইকে সচেতন থাকা এবং টাটকা ও গরম খাবার খাওয়ানোর পরামর্শ প্রদান করা হচ্ছে’।

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: