হারিয়ে যাচ্ছে সেচ যন্ত্র 'জাঁত', দেখা মিলেছে ভোলাহাটে

প্রকাশিত: ১৮ জানুয়ারি ২০২৩, ১২:৩০ এএম

বাংলাদেশ কৃষি প্রধান দেশ। আর এই অঞ্চলের মানুষ কৃষি পেশার উপর নির্ভরশীল। এই অঞ্চলের প্রতিটি উপজেলার গ্রামের প্রায় মাঝখান দিয়ে একে বেকে বয়ে চলেছে নদী-নালা ও ডোবা। বর্তমান সময়ে কৃষিতে আধুনিক যন্ত্রপাতির ব্যবহার দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। আধুনিক যন্ত্রপাতির কারণে হারিয়ে যাচ্ছে পুরাতন বা অতি প্রাচীন বেশ কিছু কৃষি কাজে ব্যবহৃত যন্ত্রাংশ। এর মধ্যে ফসলে পানি সেচের আদি যন্ত্র ছিল 'জাঁত'। অঞ্চল ভেদে এর বিভিন্ন নাম থাকলেও রাজশাহী অঞ্চলের কৃষকরা একে 'জাঁত' বলে চেনেন। এক কালে এই 'জাঁতের' ব্যবহার ছিল প্রায় প্রতিটি কৃষকের ঘরে ঘরে।

যান্ত্রিকতার যুগে মেশিন স্টার্ট দিলে অথবা বৈদ্যুতিক সুইচ অন করলেই পানি ওঠে আসে। শুধু পানি উত্তোলনই নয়। আধুনিক কৃষি কাজের ষাট-সত্তর ভাগ হচ্ছে যন্ত্র দিয়ে। যন্ত্রের ব্যবহারে কৃষক হয়ে পড়েছে আরাম প্রিয়। তারপরও মাঝে মধ্যে চোখে পড়ে কৃষি কাজে ব্যবহৃত আদি যন্ত্রপাতির।

কৃষি কাজে আদি দেশীয় এসব যন্ত্রপাতি ব্যবহারকারী কৃষকরা জানান, অভাবের কারণে নয়, শখের বসে এবং আদি ঐতিহ্যকে ধরে রাখার জন্যই তারা এসব যন্ত্রের ব্যবহার চালু রেখেছেন।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার ভোলাহাট উপজেলার দলদলী ইউনিয়নের কালহন বিলে 'জাঁতে' পানি দিতে। তার কাছে 'জাঁতে' সেচ দেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'জাঁতে' সেচ দেওয়া খুব মজার কাজ। দুইটি বাঁশের শক্ত খুঁটি মাটিতে পুঁতে তার সঙ্গে লম্বা অন্য একটি বাঁশ বেঁধে দিতে হয়। এক অংশে জাঁতের মাথা অন্য অংশে মাটির ভরা (ওজন) তুলে দিয়ে পানিতে চুবিয়ে তুললে এক সঙ্গে অনেক পানি উঠে আসে। এ ভাবে পানি তুললে দ্রুত সেচের কাজ হয়।

কালহন বিলের পাহারাদার সহিমুদ্দিনের কাছে জাঁতের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এ জাঁত কৃষি কাজ কওে, পানি সেঁচে দেই। জাঁতগুলো ব্রিটিশ আমল থেকে বাপ-দাদার আমল থেকে দেখে আসছি। অন্য জায়গায় না দেখা গেলেও ভোলাহাটের এই বিলে বেশ কয়েকটা জাঁত দেখতে পাচ্ছি।’

পঁচাত্তোর বয়সী জমিতে কাজ করা ও 'জাঁত' দিয়ে সেচ দেওয়া কৃষক ফাইজুদ্দিনের সাথে কথা বলে তিনি বলেন, ‘আমি যতদিন ধরে এই বিলের ১৬ কাঁঠা জমিতে ধান লাগায় । ততদিন ধরে এ 'জাঁতে' পানি তুলে দিই। 'জাঁতে' পানি তুলে বিছন(বীজতলা) মানুষ করি ও ধান আবাদ করি। মেশিনে পানি দেন না কেন? এখন তো যান্ত্রিক যুগ- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘এখানে এখন পর্যন্ত মেশিন আনা হয়নি। আগে আমার বাপ দাদারা এ 'জাঁতে' পানি দিয়ে আবাদ করত। আমরাও এখন তাই করি। 'জাঁতে' পানি তুলে দেওয়া কষ্ট হলেও এখন অভ্যাসে পরিণত হয়ে গেছে।’

সচেতন মহল মনে করে, ‘আধুনিক যন্ত্র সভ্যতা আমাদের জন্য আশীর্বাদ। কিন্তু গ্রামীণ ঐতিহ্যের ধারক ও বাহক আমাদের পূর্বপুরুষের তৈরি কৃষি যন্ত্রপাতি সভ্য সমাজ ও অনাগত জাতির চেনার জন্য চালু রাখা প্রয়োজন।’

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: