খরচ বেড়েছে বোরো আবাদে, বিপাকে কৃষক শ্রমিক

প্রকাশিত: ২০ জানুয়ারি ২০২৩, ০১:০৭ পিএম

জ্বালানি তেলের দাম, বিদ্যুৎবিল, বাড়ায় খরচ বেড়েছে বোরো আবাদে। এতে বিপাকে পড়েছে কৃষক ও শ্রমিক। আবার তীব্র শীতে বোরো আবাদে চরম বেকায়দায় কৃষক, শ্রমিক। কৃষক বলছে, জ্বালানি তেলের দামও বিদ্যুৎবিল বাড়ায় হালচাষ, সেচও শ্রমিকের মুজুরি বেড়েছে। এদিকে, শ্রমিকরা বলছে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়ার তুলনায় শ্রমিকদের মুজুরি বাড়েনি। তাই, শ্রমিকের কাজ করে সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছে তারা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত বছর বোরো মৌসুমে এক বিঘা জমিতে তিন চাষে খরচ ছিল ১ হাজার ২০০ টাকা। এই বছর বোরো মৌসুমে এক বিঘা জমিতে তিন চাষে খরচ হচ্ছে ১ হাজার ৪০০ থেকে ১ হাজার ৭০০ টাকা। গত বছর বুরো মৌসুমে এক বিঘা জমিতে সেচ খরচ ছিল ১ হাজার ৪০০ টাকা। এই বছর বোরো মৌসুমে এক বিঘা জমিতে সেচ খরচ হচ্ছে ১ হাজার ৬০০ থেকে ২ হাজার টাকা।

একই সাথে বিঘা প্রতি চারা রোপন খরচ বেড়েছে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা করে। জেলার গৌরীপুর উপজেলা রামগোপালপুর গ্রামের কৃষক আল আমিন ২ একর দুই ২০শতক জমি আবাদ করছেন। তিনি বলেন, শুধু হালচাষ, সেচের খরচ না। ধান চাষ করতে গেলে কিটনাশক দিতে হয়। যে কিটনাশক গত মৌসুমে ১০০ টাকা ছিল। সেই কিটনাশকে দাম বেড়ে ২০০ থেকে ২৫০ টাকা হয়েছে। আমরা সাধারণ মানুষ ক্ষেতে খামারে কাজ করেই দিন গেল। কোনদিন লাভের মুখ দেখিনি।
একই গ্রামের আরেক কৃষক মোসলেম উদ্দিন। তিনি গত বছর দুই একর জমিতে বোরো আবাদ করলেও এবার খরচ বাড়ায় কিছুটা কমিয়ে এসেছেন।

তিনি বলেন, বিদ্যুৎবিল, সেচ খরচ, হালচাষ খরচ, শ্রমিক খরচ, সার ও কিটনাশক খরচসহ সবই বেড়েছে। কিন্তু, ধানের দাম তো তেমন পাই না। তাই, ধান চাষ এবছর কিছুটা কমিয়েছি। সরকার যদি আমাদের সহায়তার হাত বাড়ায় তাহলে ভাল হতো।

ময়মনসিংহ সদরের মরাকুড়ি গ্রামের কৃষক লিয়াকত আলী ফকির চলতি মৌসুমে এক একর জমি বোরো আবাদের জন্য প্রস্তত করছেন। এর জন্য বীজতলার চারাও তৈরি করেছেন। তবে তীব্র শীত ও ঘন কুয়াশার কারণে চারা রোপণ করতে পারছেন না।

তিনি বলেন, তীব্র শীত ও ঘন কুয়াশায় ঘর থেকে বের হওয়া যাচ্ছে না। এ কারণে বোরো মাঠ প্রস্তুত করা কঠিন হয়ে পড়ছে। তীব্র শীত না থাকলে ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে বোরোর চারা রোপণ শুরু করা যেতো। সময় মতো রোপণ করতে না পারায় বীজতলার চারা নষ্ট হতে বসেছে। এবার ঠিকমতো ফসল ঘরে তুলতে পারবো কিনা তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি।

চর ঈশ্বরদিয়া মেরী আগলা কান্দাপাড়া এলাকার এবাদুল মিয়া। তারা মোট ৬ জন নিয়ে একটি দল। ৫৫০ টাকা করে সারাদিনে ৮ কাঠা (৮০ শতাংশ) জমিতে বোরো ধানের চারা রোপন করেছন।

এবাদুল মিয়া বলেন, সেই ভোরে ঘুম থেকে উঠে তীব্র শীতে কাদা-পানিতে কাজ শুরু করি।একেবারে সন্ধ্যা পর্যন্ত। বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পন্যের যে দাম। তাতে সারাদিন কাজ করে ৫৫০ টাকা কাঠা শ্রমিকের কাজ করে সংসার চলে না। তারপরেও পেটের দায়ে করতে হয়।

একই উপজেলার চর লক্ষীপুর গ্রামের কৃষক মিয়াজ উদ্দিন মাস্টার বলেন, গত বুরো মৌসুমে সকালের নাস্তা ও দুপুরে ভাত খাওয়াসহ দৈনিক ৪০০ টাকা মুজুরি দিতে হতো। নাস্তা ও ভাত খাওয়া ছাড়া দিতে ৫০০ টাকা। এই তা ১০০ থেকে ১২০ টাকা বেড়েছে। বেশি না দিলে শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না।

তিনি আরও বলেন, আমাদের এখানে ১০ শতাংশে ১ কাঠার হিসাব করা হয়। গত বছর এক কাঠা জমির হালচাষ ছিল ৪০০ টাকা। এই বছর তা বেড়ে ৫০০ থেকে ৫২০ টাকা দিতে হচ্ছে। এদিকে, বিদ্যুৎ বিল বাড়ায় কাঠাপ্রতি সেচ খরচ এই বছর আরও ১০০ টাকা বাড়ছে।

ওই উপজেলার চর ঈশ্বরদিয়া গ্রামের কৃষক মজিবুর রহমান বলেন, আমি এই বছর দুই একর জমিতে বোরো আবাদ করছি। এবছর হালচাষ, শ্রমিক ও সেচ খরচ কাঠাপ্রতি ১০০ থেকে ১২০ টাকা বেড়েছে। এভাবে প্রতি মৌসুমে খরচ বাড়তেই থাকলে আমাদের মত কৃষকেে ধান চাষ করা কঠিন হয়ে পড়বে।

জেলার তারাকান্দা উপজেলার কাশিগঞ্জ থেকে কাজ করতে ৭ জন এসেছেন সদর উপজেলার চর ঈশ্বরদিয়া গ্রামে। ৫০০ টাকা কাঠা করে সারাদিনে ৮ কাঠা জমির ধান লাগাতে পারছেন।

ওই দলের সাহাবুল ইসলাম নামে এক শ্রমিক বলেন, এই শীতে ভোররাত ৪ টার দিকে ঘুম উঠে প্রায় ২০ কিলোমিটার এসে ৫০০ টাকা করে কাজ করতে হয়। আসা যাওয়া করতেই ১০০ টাকার মত খরচ হয়ে যায়। বাজারের যে অবস্থা, বাকী টাকা দিয়ে সংসার চালানো খুব কঠিন।

ময়মনসিংহ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মতিউজ্জামান গণমাধ্যমকে বলেন, চলতি মৌসুমে জেলায় মোট দুই লাখ ৬২ হাজার ৫৫০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এই পর্যন্ত ৬৬ হাজার ৬১০ হেক্টর জমিতে চারা রোপণ করা হয়েছে। এখনো প্রায় ৭৫ শতাংশ ধান রোপনের কাজ বাকি আছে। বাকী সময়ের মাঝে চারা রোপনের কাজ শেষ হবে আশা করছি। আমরা কৃষকদের প্রয়োজনীয় চাহিতা মেটানোর চেষ্টা করছি।

আবদুল কাদির

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: