প্রচ্ছদ / জেলার খবর / বিস্তারিত

সন্তানের স্কুলে ভর্তি বাতিল, শিক্ষককে পেটালেন বিএনপি নেতা

   
প্রকাশিত: ১২:০০ পূর্বাহ্ণ, ২৩ জানুয়ারি ২০২৩

কুড়িগ্রাম জেলা বিএনপির ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক মাসুদ রানার নেতৃত্বে কুড়িগ্রাম সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে সিনিয়র শিক্ষক আব্দুল হাই সিদ্দিকীকে মারপিটের ঘটনা ঘটেছে। আজ রোববার (২২ জানুয়ারি) কুড়িগ্রাম সদর থানার অফিসার খান মো. শাহরিয়ার এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। এ ব্যাপারে জীবনের নিরাপত্তা এবং বিচার চেয়ে কুড়িগ্রাম সদর থানায় চারজনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও কয়েকজনের নামে অভিযোগপত্র দাখিল করেছেন আহত শিক্ষক আব্দুল হাই সিদ্দিকী।

অভিযুক্ত ব্যাক্তিরা হলেন, জেলা বিএনপির সহ ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক ও জেলা ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাসুদ রানা এবং তার সঙ্গী রুমন মিয়া, আমিনুর রহমান ও বিদ্যুৎ। অভিযোগে ও অনুসন্ধানে জানা যায়, ভর্তি সংক্রান্ত বিষয়ে তথ্য-উপাত্ত নিতে এসে এক পর্যায়ে কুড়িগ্রাম সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক মো. আব্দুল হাই সিদ্দিকীর ওপর চড়াও হয়ে তাকে মারপিট করেন কুড়িগ্রাম বিএনপির সহ-ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক এবং জেলা ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. মাসুদ রানা। তিনি ভর্তি বাতিল এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক হিসাবে রোববার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জিয়াসমিন আরা হকের অফিস কক্ষে এ ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটান। এ সময় তার সঙ্গে আরও কয়েকজন ছিলেন।

পরবর্তীতে সিসি ক্যামেরায় ধারণ করা এ দৃশ্য সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে জেলাজুড়ে শুরু হয় সমালোচনার ঝড়। ঘটনার পর নির্যাতিত শিক্ষক বাদী হয়ে চারজনের নাম উল্লেখ করে এবং কিছু অজ্ঞাতনামার বিরুদ্ধে কুড়িগ্রাম সদর থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। আহত শিক্ষক মো. আব্দুল হাই সিদ্দিকী জানান, পিয়নের মুখে প্রধান শিক্ষকের কক্ষে হট্টগোলের খবর পেয়ে সেখানে যাই। কিছু অভিভাবক তাদের সন্তানের ভর্তি বাতিল বিষয়ে তর্ক-বিতর্কে লিপ্ত হয়।

আমি তাদের সঙ্গে কথা বলতে গেলে কুড়িগ্রাম মোল্লাপাড়ার ব্যবসায়ী আব্দুল আজিজ মিয়ার ছেলে জেলা বিএনপি নেতা মাসুদ রানা প্রথমে আমার ওপর চড়াও হয়। এরপর ধাক্কাতে ধাক্কাতে প্রধান শিক্ষকের রুমের এক কোনায় নিয়ে যায়। এক পর্যায়ে সবাই মিলে কিল ঘুষি মেরে শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত করে। বর্তমানে আমি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছি ও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।

অভিযুক্ত বিএনপি নেতা মাসুদ রানা জানান, আমার সন্তানকে গত ১৮ ডিসেম্বর স্কুলে ভর্তি করাই। ২৮ ডিসেম্বর স্কুলের নোটিশ বোর্ডের মাধ্যমে জানতে পারি আমার সন্তানসহ ৪২ জন শিক্ষার্থীর ভর্তি বাতিল করা হয়েছে। সে ব্যাপারে কয়েকজন অভিভাবকসহ প্রধান শিক্ষককে দরখাস্ত দিয়ে কপি গ্রহণ করি। এ সময় কথা বলার এক পর্যায়ে একজন শিক্ষক উত্তেজিত হয়ে পড়লে তার সঙ্গে আমার কথা কাটাকাটি হয়। আমি তাকে লাঞ্ছিত করি নাই।

সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জিয়াসমিন আরা হক ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেন । তিনি  জানান, স্কুলে ভর্তির বিষয়ে অভিভাবকগণ শিক্ষার্থীদের নামে একাধিক আবেদন করায় ঢাকায় মন্ত্রণালয় থেকে ৪২ জন শিক্ষার্থীর ভর্তি বাতিল করে দেওয়া হয়। এ নিয়ে কিছু অভিভাবক কথা বলতে গিয়ে আমার সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন। এরই প্রতিবাদ করায় সিনিয়র সহকারী শিক্ষক আব্দুল হাই সিদ্দিকীর ওপর চড়াও হন অভিভাবক মাসুদ রানা।

তিনি অকথ্য ভাষায় কথা বলতে বলতে তাকে ধাক্কাতে ধাক্কাতে এক কোনায় নিয়ে যান এবং কিলঘুষি মেরে আহত করে। এ ব্যাপারে মাসুদ রানাসহ কয়েকজনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও কয়েকজনের নামে কুড়িগ্রাম সদর থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়। আমরা এর সুষ্ঠু বিচার চাই। কুড়িগ্রাম সদর থানার অফিসার খান মো. শাহরিয়ার বলেন, এ ঘটনায় অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

রেজানুল/সা.এ

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: