মহেশখালীতে প্যারাবন দখলে নিতে প্রভাবশীরা ঐক্যবদ্ধ

প্রকাশিত: ২৫ জানুয়ারি ২০২৩, ০৭:৫২ পিএম

কক্সবাজারের মহেশখালীর হোয়ানক ইউনিয়নের অমবশ্যাখালী মৌজা ও বগাচতর ঘোনার পশ্চিম পাশে চলছে প্যারাবন নিধনের মহোৎসব। স্থানীয়ভাবে দলীয় বিভেদ থাকলেও প্যারাবন কেটে চিংড়ি প্রজেক্ট নির্মাণে সবাই ঐক্যবদ্ধ। এরই মধ্যে বনবিভাগ ও পুলিশ অভিযান চালিয়ে প্যারাবন নিধন বন্ধ করলেও ফের বেপরোয়া প্যারাবন নিধনকারিরা। এতে উদ্বিগ্ন আশপাশের লবণ ও চিংড়ি ঘেরের চাষিরা।

হরিয়ারছড়া গ্রামের খলিলুর রহমান জানান, অমবশ্যাখালী মৌজায় ভাঙ্গার মুখে একটি প্রবাহমান খাল বন্ধ করে প্রজেক্ট নির্মাণের কাজ এগিয়ে চলেছে। এছাড়া বিপুল সংখ্যক গাছ কেটে প্যারাবন উজাড় করে দেওয়া হয়েছে। ওই খাল দিয়ে প্রতিদিন লবণ বোঝাই ট্রলার চলাচল করে। এই খাল বন্ধ হলে ৩/৪টি চিংড়ি প্রজেক্ট থেকে লবণ বিক্রি করা দুরহ হয়ে পড়বে। বনবিভাগ একবার ভেঙ্গে দিলে পরের দিন আবার বাঁধের কাজ শুরু করে। বড় মহেশখালীর বড়ডেইল গ্রামের আবদুল গফুর, পানিছড়ার সিকদার, আবদু ছালাম এর নেতেৃত্বে ১০/১২ জনের সিন্ডিকেট এই দখলবাজে জড়িত। তারা প্রভাবশালী হওয়ায় কোন কিছু তোয়াক্কাই করছেন না। স্থানীয় আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জামায়াত নেতাকর্মীরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে এই দখলবাজিতে মহাব্যস্ত।

খলিলুর রহমান আরও জানান, অমবশ্যাখালী মৌজার ও বগাচতর ঘোনার পশ্চিমের প্যারাবনের কারণে অন্তত অর্ধশত চিংড়ি ঘের প্রাকৃতিক দূর্যোগের সময় রক্ষা পায়। কিন্তু এখন যেভাবে নিধন করা হচ্ছে, এতে দূর্যোগকালে সবকটি চিংড়ি ঘের বিলীন হয়ে যাবে। অপরদিকে বগাচতর ঘোনার পশ্চিমে প্যারাবন নিধন মহোৎসব চালাচ্ছে একাধিক প্রভাবশালী।

হোয়ানক হোয়ানক ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মির কাসেম জানিয়েছেন, মতিন, আবদুল হক, নাজু, কক্সবাজারের এরশাদসহ কয়েকজন প্রভাবশালী নেতা প্যারাবন নিধনে জড়িত রয়েছে। আজ কিংবা কালকে ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ তেকে একটি রেজুলেশন করে তা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক বরাবরে প্রেরণ করা হবে। ইতোমধ্যে প্যারাবন কেটে দুইটি প্রজেক্ট নির্মাণ করা হয়েছে।

স্থানীয় লোকজন জানান, বনবিভাগের লোকজন এসে ঘুরে যাওয়ার পর আবার গাছ কাটা শুরু হয়। এদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হলে এসব থামানো যাবে না। এই এলাকাটি উপকূলের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপুর্ণ। এরই মধ্যে প্রায় ৫০ একর পর্যন্ত প্যারাবন কেটে উজাড় করা হয়েছে। ওই এলাকার পাশে আনসার ক্যাম্প থাকলেও তারা নিরব দর্শকের ভুমিকা পালন করছে। কেউ অবহিত করলেও কোন প্রকার বাধা সৃষ্টি করছে না।

মহেশখালী উপজেলা বনবিভাগের রেঞ্জ কর্মকর্তা আনিসুর রহমান জানিয়েছেন, খাল বন্ধ করে প্রজেক্ট নির্মাণকারীদের চিহ্নিত করা হয়েছে। এছাড়া বগাচতর ঘোনার পশ্চিম পার্শ্বে ও অমবশ্যাখালী মৌজায় যারা প্যারাবন কাটছে তাদেরও চিহ্নিত করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হচ্ছে। দুই এলাকায় দুইটি স্কেবেটার নষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। আমরা একাধিকবার অভিযান চালালেও প্যারাবন নিধন বন্ধ করা যাচ্ছে না। দিনে অভিযান চালালেও রাতে আবার গাছ কাটা শুরু করে।

এব্যাপারে মহেশখালী থানার অফিসার ইনচার্জ প্রণব চৌধুরী জানিয়েছেন, বনবিভাগকে সহযোগিতা করতে এই দুই এলাকায় দিনব্যাপী অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। এলাকার আইনশৃংখলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে আমরা বদ্ধপরিকর। এই বনখেকোদের দ্রুত আইনের আওতায় আনা হবে।

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: