ছিনতাইয়ে হিটার হৃদয়ের নেতৃত্বে বিডিএসকে গ্যাং

প্রকাশিত: ২৯ জানুয়ারি ২০২৩, ০২:৩৭ পিএম

ঢাকার আদাবরের অন্যতম সন্ত্রাসী গ্রুপ বিডিএসকে গ্যাংয়ের প্রধান হৃদয় ওরফে হিটার হৃদয়সহ সক্রিয় ৮ সদস্যকে দেশি ও বিদেশি অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)। গতকাল শনিবার (২৮ জানুয়ারি) রাতে র‌্যাব-৪ এর একটি দল গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ফরিদপুর, রাজধানীর সদরঘাট লঞ্চ স্টেশন, মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধ এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে তাদের গ্রেপ্তার করে।

গ্রেফতারকৃতরা হলেন, বিডিএসকে গ্রুপের লিডার শ্রীনাথ মন্ডল ওরফে হৃদয় ওরফে হিটার হৃদয় (২২), রবিন ইসলাম ওরফে এসএমসি রবিন (২০), মো. রাসেল ওরফে কালো রাসেল (২৫), আলামিন ওরফে ডিশ আলামিন (২১), নোমান ওরফে ঘাড় ত্যাড়া নোমান (২১), আশিক ওরফে হিরো আশিক (১৯), জোবায়ের ইসলাম ওরফে চিকনা জোবায়ের (১৯) ও সুমন ওরফে বাইট্টা সুমন (২০)।তাদের দেওয়া তথ্য মতে, মোহাম্মদপুরে তাদের আস্তানায় অভিযান চালিয়ে একটি বিদেশি পিস্তল, ২টি চাপাতি, একটি রামদা, একটি চাইনিজ কুড়াল, ৪টি চাকু (বড় ও ছোট), ২টি হাঁসুয়া, একটি কাঁচি ও একটি লোহার রড উদ্ধার করা হয়।

আজ রোববার (২৯ জানুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজার র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইং পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন। তিনি জানান, গত ৭ জানুয়ারি রাত ৮টার দিকে রাজধানীর আদাবর থানাধীন তিন রাস্তার মোড় এলাকায় একজনকে জখম করে তার কাছে থাকা মোবাইল ও নগদ অর্থ ছিনতাইকারীরা নিয়ে যায়। পরে ভুক্তভোগীকে স্থানীয়রা উদ্ধার করে একটি হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যায়। কিছুদিন আগে একই এলাকার এক কলেজ শিক্ষার্থীর নিকট থেকেও একই কায়দায় ছিনতাইকারীরা মোটা অংকের অর্থ ছিনিয়ে নিয়ে যায়। র‌্যাব ঘটনার তদন্তে সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে। যেখানে দেখা যায়, ৮-১০ জনের একটি গ্যাং ছিনতাইয়ের সঙ্গে জড়িত।

পরবর্তীতে এসব ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে র‌্যাব গোয়েন্দা কার্যক্রম চালিয়ে জানতে পারে, ব্রেভ ডেঞ্জার স্ট্রং কিং (বিডিএসকে) গ্রুপের প্রধান হিটার হৃদয়ের নেতৃত্বে ছিনতাইয়ের ঘটনাগুলো সংঘটিত হয়েছে। পরে র‌্যাব অভিযান চালিয়ে করে গত রাতে আটজনকে আইনের আওতায় আনে।গ্রেপ্তারদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, তারা বিডিএসকে গ্যাংয়ের সক্রিয় সদস্য। তাদের গ্রুপে প্রায় ২০/২৫ জন সদস্য রয়েছে। গ্যাং লিডার হিটার হৃদয়ের নেতৃত্বে বিগত ২/৩ বছর পূর্বে গ্যাংটি গঠন করা হয়। গ্রুপের সদস্যরা আগে সবুজ বাংলা গ্রুপ, টপ টেন গ্রুপ ও ভাই বন্ধু গ্রুপের অন্তর্ভুক্ত ছিল।

অভিযুক্তরা মোহাম্মদপুর, আদাবর, বেড়িবাঁধ ও ঢাকা উদ্যান এলাকায় চুরি-ডাকাতি, চাঁদাবাজি, ছিনতাইসহ অন্যান্য সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিল দাবি করে কমান্ডার মঈন বলেন, তারা বিভিন্ন সময় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ঢাকা উদ্যান, আদাবর, শ্যামলী, মোহাম্মদপুরসহ পার্শ্ববর্তী এলাকায় মারামারিসহ বিভিন্ন ধরনের সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনা করত।এছাড়াও তারা মাদক সেবনসহ সংশ্লিষ্ট এলাকায় মাদক ব্যবসার সাথেও জড়িত ছিল। এই গ্যাংয়ের সদস্যরা রাস্তাঘাটে ইভটিজিং, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অপ্রীতিকর ভিডিও শেয়ারসহ বিভিন্ন কুরুচিপূর্ণ কার্যক্রমের সঙ্গেও জড়িত। গ্রেপ্তাররা ছিনতাইয়ের ঘটনার সাথে তাদের জড়িত থাকার বিষয়ে তথ্য দিয়েছে।

র‍্যাব কর্মকর্তা আরো জানান, গ্রেপ্তারদের অধিকাংশের নামে মাদক, চুরি-ছিনতাই, ডাকাতি, চাঁদাবাজি ও মারামারিসহ রাজধানীর বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা রয়েছে।গ্রেপ্তার গ্যাং লিডার হিটার হৃদয় সম্পর্কে কমান্ডার মঈন বলেন, বিগত ২-৩ বছর যাবত বিডিএসকে গ্যাংয়ের নেতৃত্ব দিয়ে আসছে। তিনি স্থানীয় একটি স্কুল হতে ৩য় শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেন। তিনি গ্রুপটি পরিচালনার পাশাপাশি বিভিন্ন সময়ে লেগুনার হেলপার হিসেবে কাজ করেছেন। গ্যাং গ্রুপের সদস্যদের মাধ্যমে তিনি মোহাম্মদপুর, আদাবর ও বেড়িবাধ এলাকায় চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, মাদক ব্যবসা পরিচালনা, আধিপত্য বিস্তারসহ বিভিন্ন ধরনের সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনা করতেন।

এছাড়া অভিযুক্তরা রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় তারা বেপরোয়া ছিল কি-না জানতে চাইলে কমান্ডার মঈন বলেন, তারা বিভিন্ন সময় ব্যক্তি স্বার্থ উদ্ধারেও ভাড়াটে সন্ত্রাসী হিসেবে কাজ করেছে। তবে রাজনৈতিক ছত্রছায়ার তথ্য পাইনি। তবে প্রত্যেকেই একাধিক মামলার আসামি। এরমধ্যে পাঁচজনই একাধিকবার কারাভোগ করে পুনরায় একই অপরাধ কর্মে জড়িয়েছেন।

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: