স্বপ্ন পূরণে পাখির পাশে ফরিদপুরের ডিসি

অদম্য মেধাবী ও খর্বাকৃতির মোসা: নাইমা সুলতানা পাখিকে (২২) ল্যাপটপ উপহার দিলেন ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক মোঃ কামরুল আহসান তালুকদার। মঙ্গলবার (৩১ জানুয়ারি) মোসা: নাঈমা সুলতানা পাখিকে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান এবং একটি ল্যাপটপ উপহার দেন। এছাড়াও পড়ালেখার পাশাপাশি তার পরিবারের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দেন জেলা প্রশাসক।
এ বিষয়ে মোসা: নাঈমা সুলতানা পাখি বলেন, আমি প্রথমে ধন্যবাদ জানাই ছায়ানীড় পরিবার নামক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনকে। সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক মহোদয়ের প্রতি আমি এবং আমার পরিবার আজীবন কৃতজ্ঞ থাকবো। সকলে আমার জন্য দোয়া করবেন, আমি যেন আমার ও আমার পরিবারের স্বপ্ন ও আশা পূরণ করতে পারি।
এর সত্যতা নিশ্চিত করে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) লিটন ঢালী বলেন, গত ২৮ জানুয়ারি “স্বপ্ন ছুঁতে চান পাখি, প্রয়োজন একটি কম্পিউটার” শিরোনামে সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন জেলা প্রশাসকের নজরে আসে। পরে তিনি পাখিকে তার কার্যালয়ে ডেকে একটি ল্যাপটপ উপহার দেন। এ সময় তার লেখাপড়ার এবং শারীরিক খোঁজ খবর নেন ভবিষ্যতে তাদের পরিবারের পাশে থাকারও প্রতিশ্রুতি দেন।
এ বিষয়ে ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক কামরুল আহসান তালুকদার বলেন, মানুষ মানুষের জন্য জীবন জীবনের জন্য। সংবাদ মাধ্যমে জানতে পারি অদম্য মেধাবী ছাত্রী পাখির স্বপ্ন ছুঁতে প্রয়োজন একটি কম্পিউটার। সে অনুযায়ী তার স্বপ্ন পূরণে পাশে থাকতে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে একটি ল্যাপটপ উপহার দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও ভালো সব কাজে জেলা প্রশাসন সকলের পাশে থাকে, আগামীতেও থাকবে বলে তিনি জানান।
মোসা: নাইমা সুলতানা পাখি একজন খর্বাকৃতির মানুষ। বয়স ২২ বছর। উচ্চতা মাত্র ২৯ ইঞ্চি। ওজন ২০ কেজি। অভাব অনটনের সংসার তাদের। তবুও বড় হওয়ার স্বপ্ন পূরণে প্রতিনিয়ত করছেন জীবনযুদ্ধ। বিভিন্ন বাধা পেরিয়ে চালিয়ে যাচ্ছেন নিজের পড়াশোনা। যুক্ত আছেন বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ডেও। ফরিদপুর সদর উপজেলার শহরতলীর কানাইপুর ইউনিয়নের উলুকান্দা গ্রামের নাদের মাতুব্বর ও সাহিদা বেগম দম্পতির তিন মেয়ের মধ্যে পাখি সবার বড়। গ্রামের স্কুল থেকে এসএসসি পাস করেছেন পাখি। বর্তমানে ফরিদপুর সারদা সুন্দরী মহিলা কলেজের অনার্স (বাংলা) দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী। বাবা নাদের মাতুব্বর একসময় পাট-ভুষী মালের ব্যবসা করতেন। ১২ বছর আগে ব্রেন স্ট্রোক করে ঘরবন্দি হয়ে পড়েছেন তিনি। পাখির মেজো বোন হাফসা আক্তার নার্সিংয়ের ছাত্রী, ছোট বোন সামিয়া সুলতানা নবম শ্রেণিতে পড়ে। সংসারে আয় করার মতো কেউ নেই। বাবার জমানো কিছু টাকা আর কৃষি জমি বর্গা দিয়ে কোনোমতে চলে তাদের পরিবার।
নাঈমা সুলতানা পাখি বলেন, সংসারে রোজগারের মতো কেউ নেই। পড়াশোনা তো দূরে থাক ঠিকমতো সংসারই তো চলে না। পদে পদে বাধা। এরপরও কষ্টের মধ্য দিয়ে পড়া চালিয়ে যাচ্ছি। মানুষ ছোট হলেও আমার স্বপ্নটা বড়। চাই লেখাপড়া করে যোগ্যতা অনুযায়ী সরকারি একটা চাকরি করে পরিবারের হাল ধরতে। বাবা-মা, বোনদের মুখে হাসি ফোটাতে। কারও করুণা কিংবা ভিক্ষা করে নয়, মাথা উঁচু করে বাঁচতে, নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে সমাজের দৃষ্টান্ত হতে চায়। আমার পরিবার ছাড়াও দেশের কল্যাণে কাজ করতে চাই। আমি হাল ছাড়বো না। আত্মনির্ভরশীল হতে চাই। কিন্তু সমাজের প্রতিবন্ধী হয়ে থাকতে চাই না। পড়াশোনার পাশাপাশি কয়েকটি টেকনিক্যাল কোর্সও করেছি। এখন কম্পিউটার প্রশিক্ষণ নিচ্ছি। আজ জেলা প্রশাসক মহোদয় আমাকে নতুন একটি কম্পিউটার উপহার দিয়েছে আমি অনেক বেশি খুশী হয়েছি এবং মহান আল্লাহর নিকটে শুকরিয়া আদায় করে ডিসি স্যারের জন্য দোয়া কামনা করছি।
এদিকে ফরিদপুর সরকারি সারদা সুন্দরী মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর কাজী গোলাম মোস্তফা বলেন, পাখি অদম্য মেধাবী ছাত্রী। সে বাংলা বিভাগের অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী। সবার সহযোগিতা পেলে অনেক ভালো ফলাফল করবে।
কানাইপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফকির মো: বেলায়েত হোসেন বলেন, পাখির পরিবারের আর্থিক অবস্থা ভালো না। তার বাবা নাদের মাতুব্বর দীর্ঘদিন যাবৎ অসুস্থ হয়ে ঘরে শয্যাশায়ী। নিজেদের কিছু জমি বর্গা দেওয়া আছে। তা থেকে যা আসে তা দিয়েই কোনোমতে চলছে ওদের সংসার। বিভিন্ন সময়ে আমি তাদের সাহায্য সহযোগিতা করে থাকি এবং পরিবারের খোঁজ খবর নিতে চেষ্টা করি।
শাকিল/সাএ
বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এডিটর ইন চিফ: আমিরুল ইসলাম আসাদ
বাড়ি#৩৫/১০, রোড#১১, শেখেরটেক, ঢাকা ১২০৭
ই-মেইলঃ [email protected]
ফোনঃ (০২) ৫৮১৫৭৭৪৪
নিউজ রুমঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯১
মফস্বল ডেস্কঃ ০১৫৫২৫৯২৫০২
বার্তা প্রধানঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯০
মার্কেটিং ও সেলসঃ ০৯৬১১১২০৬১২
ইমেইলঃ [email protected]

পাঠকের মন্তব্য: