প্রচ্ছদ / জেলার খবর / বিস্তারিত

আব্দুল ওয়াদুদ

বগুড়া প্রতিনিধি

হিরো আলম আসলে দেখা মেলে ভোটারের, চলে গেলে মাঠ ফাঁকা

   
প্রকাশিত: ৬:৩৩ অপরাহ্ণ, ১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

বগুড়ার দুই উপ নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার পর যেন হয়ে উঠেছেন হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালা। নির্বাচনের গণসংযোগ থেকে শুরু করে তিনি যেখানেই যান সেখানেই সব শ্রেণী পেশার মানুষ তাকে দেখতে এবং তার সঙ্গে সেলফি তুলতে, তাকে ছুয়ে দেখতে ভীড় করেন তার আশেপাশে। হিরো আলম কোন এলাকায় এসেছেন লোখমুখে কথাটি ছড়িয়ে পড়লে মুহূর্তের মধ্যেই সেখানে ভীড় জমে যায়।

বগুড়ার উপনির্বাচনে বুধবার (১ ফেব্রুয়ারি) সকাল সাড়ে ৮টায় ভোটগ্রহণ শুরু হলেও ভোটের মাঠ ফাঁকা দেখা গেছে। দেখা মেলেনি ভোটরদের। কিন্তু যখন হিরো আলম ভোট দিতে উপস্থিত হয়। তখনই ভোটার ও উৎফুল্লজনতার ভীড় দেখা গেছে।

কেন্দ্র সদরের এরুলিয়া উচ্চ বিদ্যালয়। স্কুল মাঠে কেবলমাত্র কয়েকজন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য। আর কয়েকজন গণমাধ্যমকর্মী। ভোটের বুথগুলোর দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা মোটামুটি প্রস্তুত। ভোট শুরু হবে সকাল সাড়ে ৮টায়। এর আগেই এক এক করে স্থানীয় এবং জাতীয় পত্রিকা, টেলিভিশন এবং অনলাইন মিডিয়ার গণমাধ্যমকর্মীরা হাজির কেন্দ্রটিতে। সবার চোখ উপ-নির্বাচনের দুই আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী হিরো আলমের দিকে। হিরো আলমের নিউজ কাভারের জন্য বগুড়ার স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মী বাদেও ঢাকার বেশ কিছু গণমাধ্যম থেকে রিপোর্টার বগুড়ায় পাঠানো হয়েছে।

হিরো আলম গণমাধ্যমকর্মীদের অনেককেই কথা দিয়েছিলেন তিনি সকাল সাড়ে ৮ টাতেই কেন্দ্রে গিয়ে নিজের ভোট দেবেন। কিন্তু তাজ্জব! ৯টা বেজে গেলো হিরো আলমের দেখা নেই। হিরো আলমের একজন এজেন্টকে কয়েকজন গণমাধ্যমকর্মী বার বার জিজ্ঞেস করতে লাগলেন, তিনি কি করছেন? কখন আসবেন। ওই এজেন্ট বললেন ভাই রওনা দিয়েছেন। আসতেছেন। কিন্তু পৌনে এক ঘন্টাতেও দেখা নেই হিরো আলমের।

এর মধ্যে কেন্দ্রের বাইরে, স্কুল গেটের সামনে কয়েকজন সেলফিস্টিকসহ মোবাইল ওয়ালাদের জটলা দেখা গেলো। তারা পায়চারী করছেন। সবার চোখ রাস্তার দিকে। ভোট শুরু হয়েছে প্রায় ১ ঘন্টা হলো। কেন্দ্র পুরোটাই ফাঁকা। ভোটগ্রহণে নিয়োজিত ব্যক্তিরা ভোটারদের অপেক্ষা করছেন। হঠাৎ করেই কেউ একজন বলে উঠলো ‘হিরো আলম’ এসেছেন।

একটু এগিয়ে যেতেই দেখা গেলো মোবাইল এবং ক্যামেরাম্যানরা প্রতিযোগিতা দিয়ে এগিয়ে গেলেন রাস্তার দিকে। বগুড়া-সান্তাহার রোড। বেশ প্রশস্ত। সাদা রঙের একটা প্রাইভেটকার। আ‌গে থেকেই একঝাক মোবাইলধারী যুবক গাড়ীটিকে ঘিরে ধরেছে। পরে আরও এক ঝাঁক গাড়ির কাছে গেলেন। হিরো আলম গাড়ির দরজা খুলে বের হবেন, সেই জো নেই। এরপর ভীড় ঠেলে হিরো আলম শেষমেশ দরজা খুলে বের হতে পারলেন। কিন্তু সামনে এগোতে পারছিলেন না। গণমাধ্যমকর্মী এবং ফেসবুকার, ইউটিউবারদের চাপে। এসময় কয়েকজন ইউটিউবার তাকে পথিমধ্যেই ভোট নিয়ে বক্তব্য দিতে অনুরোধ করছিলেন।

গণমাধ্যমকর্মীদের মধ্য থেকে কর্কশ গলায় বলা হলো, বক্তব্য ভোট দেয়ার পর। হিরো আলম সেটাতে সায় দিলেন। হিরো আলম এগোতে চান। কিন্তু ভীড় সামলাতে কাহিল অবস্থা। উৎকণ্ঠায় হিরো আলম কোন দিকে যাবেন বুঝে উঠতে পারছিলেন না। এর মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর সদস্যরা পরিস্থিতি সামাল দিতে এগিয়ে এলেন। গণমাধ্যমকর্মীদের কেউ কেউ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর লোকজনদের অনুরোধ জানালেন, কেবলমাত্র যাদের নির্বাচন কেন্দ্রে প্রবেশের অনুমতি আছে। তাদের রেখে বাকিদের বের দিন। প্রবেশ করতে দেবেন না। এরপরেও কয়েকজন ইউটিউবার গোপনে  ভেতরে প্রবেশ করলেন বুথ পর্যন্ত। জানতে পেরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা তাদের তাচ্ছিল্যের সাথে বের করে দিলেন। হিরো আলম ভোট দিলেন পৌনে ১০টায়। সাড়ে ৯টায় কেন্দ্রে হাজির হয়ে ১৫ মিনিট ভীড় সামলিয়েছেন তিনি। এরপর তার বক্তব্য দেয়ার পালা।

মিডিয়াকর্মীরা তাকে ঘিরে ধরেছেন। মোবাইল ব্যবহারকারীদের চাপে টেলিভিশনের বড় বড় ক্যামেরা হিরো আলমকে ক্যামেরা বন্দি করতে পারছে না। ফলে সিদ্ধান্ত হলো হিরো আলমের কাছে দুই দফা বক্তব্য নেয়া হবে। আগেরবার যারা বক্তব্য নিয়েছে তারা পরের বার নিতে পারবে না। কথা হলো এই। কিন্তু পরের বারও কেউ কেউ তাদের মোবাইল ফোন ধরে বসে রাখলেন।

এদিকে ভোট শুরুর প্রায় দেড় ঘন্টা। তখনও ভোটের মাঠ ফাঁকা। কিন্তু হিরো আলমের চারপাশে অসংখ্য ভীড়। তার ইন্টারভিউ দেয়া এবং তাকে দেখতে ভীড় করেছেন সকলে। হিরো আলম বক্তব্য দিলেন। তিনি বললেন, ‘ভোট সুষ্ঠু হলে তিনিই জিতবেন’। এরপর ভীড় সামলে তিনি বগুড়া-সান্তাহার রোডে পৌছলেন। গাড়িতে উঠলেন। গাড়ি স্টার্ট নিলো। ধীরে ধীরে ফাঁকা হয়ে গেলো কেন্দ্রটি। পৌনে দুই ঘন্টাতে ওই স্কুলের দুটি কেন্দ্রের একটিতে ভোট পড়েছে ১৮টি এবং অন্যটিতে পড়েছে ১৫০টি।

সালাউদ্দিন/সাএ

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: