চুরি ঠেকাতে রসের হাঁড়িতে গাছির শিকল-তালা

প্রকাশিত: ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১১:৫২ পিএম

শীত আগমনের শুরুতেই খেজুর রস সংগ্রহে ব্যস্ত সময় পার করেন গাজিরা। তবে প্রতিনিয়ত রস চুরি তাদের এই কাজকে ব্যাহত করে। আর তাইতো এসময় নিজের গাছ থেকে রস সংগ্রহের পাশাপাশি  চুরি ঠেকাতে নানা পন্থা ও অবলম্বন করে থাকেন তারা। এমনই একজন গাছি বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার ফুলশ্রী গ্রামের দীপক মজুমদার। সম্প্রতি তার খেজুর গাছগুলো থেকে রস চুরি ঠেকাতে এক অভিনব পন্থা অবলম্বন করেছেন এই গাছি। খেজুর রসের হাঁড়ি শিকল দিয়ে তালাবদ্ধ করেছেন তিনি ।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গ্রামের ১৭টি গাছ কাটছেন দীপক। বাবার কাছ থেকে খেজুর গাছ কাটা শিখেছেন। বাবার আমলে দেড়শ গাছ কাটতেন। বর্তমানে গ্রামের বিভিন্ন জায়গা ঘুরে ১৭টি গাছ কাটেন। সপ্তাহে তিন দিন গাছ কাটেন। দুই দিনের রস নেন গাছি। একদিন নেন গাছের মালিক। এভাবে দীর্ঘদিন ধরে খেজুর গাছ কাটছেন। স্বাধীনতা পরবর্তী আগৈলঝাড়ার পাঁচ ইউনিয়নে প্রচুর খেজুর গাছ ছিল জানিয়ে দীপক মজুমদার বলেন, ‘দিনে দিনে প্রত্যেক বাড়ির লোকসংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় গাছ কেটে সেখানে বসতি গড়া হয়েছে। এখন যে কয়েকটি খেজুর গাছ আছে, তাও রক্ষা করা যাচ্ছে না। এবার পুরো গ্রামে ১৭টি খেজুর গাছ পেয়েছি। গাছগুলো কেটে রস ও গুড় বিক্রি করছি।’

গাছে শিকল ও তালা দেয়ার বিষয়ে এই গাছি জানান, ‘প্রতিদিন ১৭টি গাছে চার থেকে পাঁচ হাঁড়ি রস হয়। গত কয়েকদিন ধরে দুটি খেজুর গাছের রস প্রতিদিন চুরি হচ্ছে। রসের সঙ্গে হাঁড়িও চুরি হয়ে যাচ্ছে। কোনোভাবে রক্ষা করা সম্ভব ছিল না। এজন্য বেশ কয়েকদিন কষ্ট করে পাহারা দিয়েছি। তাতেও লাভ হয়নি। পাহারা শেষ হলে আবারও চুরি হয়। এ কারণে এক মাস আগে ৬০০ টাকা খরচ করে দুই হাঁড়িতে লোহার শিকল ও তালা দিয়েছি। এরপর আর রস ও হাঁড়ি চুরি হয় না। বাকি ১৫টি গাছের রস চুরি না হওয়ায় তাতে তালা দিইনি।’

দীপক আরও জানান, ‘রসের চেয়েও দামি হচ্ছে কালো হাঁড়ি। কারণ এখন লাল রংয়ের হাঁড়িতে রস ধরলে অনেকে নিতে চায় না। ওই হাঁড়ি পূজার কাজে লাগে। এজন্য কালো হাঁড়ি কিনতে হয়। প্রতিটি হাঁড়ির দাম ৮০ টাকা। ওই দুটি গাছের জন্য আমাকে এ পর্যন্ত ২০টি হাঁড়ি কিনতে হয়েছে।’ রস ছাড়াও গুড় বিক্রি করেন দীপক। প্রতি কেজি ঝোলা গুড় ৫০০ টাকায় বিক্রি করেন। ক্রেতার সামনে গাছ থেকে রস নামিয়ে জাল দিয়ে গুড় বানিয়ে দেন। কেউ অগ্রিম টাকা দিয়ে যান। আবার কেউ মোবাইলে অর্ডার দেন। চাহিদা আছে। তবে সে অনুপাতে গাছ না থাকায় সবাইকে গুড় দিতে পারেন না বলে জানান এই গাছি।

লোহার শিকল ও তালা দেওয়ার পাশাপাশি নিপাহ ভাইরাসরোধে হাঁড়ির মুখে জাল পেঁচিয়ে রাখা হয়েছে বলেও জানিয়েছেন এই চাষী। দীপক বলেন, ‘গাছ থেকে রস নামানোর সময় আগে মানুষজন দেখলে মনে হতো রস নিতে এসেছেন। কিন্তু এখন হাঁড়িতে যে তালা মেরেছি, তা দেখতে আসছেন মানুষজন। আমার কিছুই করার ছিল না। রসের চেয়ে হাঁড়ি রক্ষায় এই কাজ করতে বাধ্য হয়েছি।’

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: