বরগুনা সরকারি কলেজের হোস্টেল দীর্ঘদিন পরিত্যক্ত, ভোগান্তিতে ছাত্ররা

প্রকাশিত: ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০৭:০৮ পিএম

বরগুনা সরকারি কলেজের জ্ঞান রঞ্জন ঘোষ ছাত্রাবাসটি দীর্ঘদিন থেকে বন্ধ থাকায় অবর্ণনীয় ভোগান্তিতে পড়েছেন ছাত্ররা। গত বছর থেকে হোস্টেল বন্ধ থাকায় ছাত্রদের পড়াশুনায় ক্ষতি হচ্ছে। ছাত্ররা অবিলম্বে কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছে হোস্টেল চালু করার দাবি জানিয়েছেন।

বুধবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) সকালে কলেজের ভিতরে গিয়ে দেখা যায় জরাজীর্ণ অবস্থায় পড়ে রয়েছে বয়েস হোস্টেলটি। ভিতরে টেবিল, খাট, বেঞ্চ সহ বিভিন্ন ইন্সট্রুমেন্ট- স্ট্রাকচার নোংরা অপরিচ্ছন্ন অবস্থায় পড়ে রয়েছে। প্রায় ৮ মাস পার হলেও হোস্টেল চালু করা হয়নি। এভাবে দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় হোস্টেলের ভিতরে ফ্যান, টেবিল, চেয়ারসহ বিভিন্ন ইন্সট্রুমেন্ট দেয়াল ভেঙে নিয়ে গেছে দুর্বৃত্তরা। হোস্টেলের ওইসব ছাত্ররা কেউ বন্ধুর ছাত্রাবাসে গেস্ট হিসেবে আছে। আবার অনেকে বাড়িতে অবস্থান করছে।

কলেজ সূত্রে জানা যায়, এবছরেও বরগুনা সরকারি কলেজের বিভিন্ন ডিপার্টমেন্টে অধ্যায়নরত আছে ৯৮০৭ জন শিক্ষার্থী। এদের মধ্যে ছাত্রের সংখ্যা ৫৬৮৫ জন। এবং শিক্ষক, শিক্ষিকা ও কর্মচারী মিলিয়ে ৩৬জন এই প্রতিষ্ঠানে কর্মরত রয়েছেন। এই প্রতিষ্ঠানের দুটি হোস্টেল রয়েছে। 'শেখ ফজিলাতুন্নেছা ছাত্রী নিবাস এবং 'জ্ঞানরঞ্জন ঘোষ ছাত্রাবাস' তবে ছাত্রী নিবাস চালু থাকলেও ছাত্র সংখ্যা বেশি হলেও চালু নেই ছাত্রাবাসটি।

কলেজের ‘জ্ঞান রঞ্জন ঘোষ’ বয়েস হোস্টেল ভবনটি প্রায় ১৭ বছর আগে নির্মাণ হয়। তারপর থেকেই এই ছাত্রাবাসটিতে ছাত্ররা লেখাপড়া করে আসছে। এই ছাত্রাবাসে থেকে প্রায় ১০০'শ ছাত্র পড়াশুনা করতেন। যেসব ছাত্র হোস্টেলে থেকে পড়াশুনা করতেন তাদের অধিকাংশই দূর-দূরান্ত থেকে আসা গ্রামের নিম্নবিত্ত পরিবারের সন্তান। বাইরের ছাত্রাবাসে থেকে পড়াশুনা করা তাদের পক্ষে সম্ভব নয়।

হঠাৎ গত দুই-তিন বছর থেকে ভবনটির বিভিন্ন জায়গা থেকে ওয়াল ও ছাদের প্লাস্টার খসে পড়ে এবং দরজা জানালা নষ্ট ও ঝুকিপূর্ণ হয়ে পড়ে ভবনটি। তাই আস্তে আস্তে হোস্টেলে ছাত্রের উপস্থিতি কমতে থাকে তারপরে গতবছরের মে মাসে নির্বাহী পরকৌশলী শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর থেকে ব্যবহারে অনুপযোগী ঘোষণা করা হলে ভবনটি বন্ধ হয়ে যায়। এখন ছাত্রাবাসটি মেরামত সংস্কার করার পরে আবার ব্যবহারযোগ্য হবে বলে জানিয়েছেন তারা।

অনার্স তৃতীয় বর্ষের হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের সাইফুল ইসলাম শাওন ও ইংলিশ ডিপার্টমেন্টের তৃতীয় বর্ষের মোঃ শিপনসহ বিভিন্ন ডিপার্টমেন্টর শিক্ষার্থীরা বলেন, আমরা গ্রামের কৃষক পরিবারের সন্তান। বাইরের ছাত্রাবাসে থেকে পড়াশুনা করা সম্ভব হয় না। আর কলেজ হোস্টেলে ৩০০০হাজার টাকায় বছর পার হয়ে যেত। সেখানে বাইরের ছাত্রাবাসে প্রতি মাসে সিট ভাড়া দিতে হয় নিন্ম হাজার টাকার উপরে। এ ছাড়াও অন্যান্যে খরচ দিয়ে প্রায় আড়াই থেকে তিন হাজার টাকা লেগে যায় প্রতি মাসে।

হোস্টেল সুপারিনটেনডেন্ট এবং ইংরেজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক হাফিজুল হক জানান, আমাদের কলেক থেকে মেরামত ও সংস্কারের জন্য চাহিদা দেওয়া হয়েছে। আশাকরি শিগগিরই হোস্টেলটি চালু করে দিবেন কর্তৃপক্ষ। আর দুইতলা বিশিষ্ট এ হোস্টেলে ১০০টি আসন সংখ্যা ছিল। ভবনের বিভিন্ন স্থান থেকে যখন ছাদের প্লাস্টার খসে পড়ে তখন থেকেই আস্তে আস্তে ছাত্র কমতে থাকে। ছাত্রশুন্য ভবনটি এখন অগোছালো জরাজীর্ণ অবস্থায় রয়েছে।

এবিষয়ে সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মোঃ মতিউর রহমান জানান, বরগুনা সরকারি কলেজ একটি ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠান এখানে লেখাপড়া করে দেশের বিভিন্ন স্থানে কর্মরত রয়েছেন শত শতে শিক্ষার্থী। আমাদের উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষ বেশিরভাগই গরিব অসহায় ও মধ্যবিত্ত তাই বাহিরে বাসা ভাড়া নিয়ে ম্যাচে থাকা সম্ভব নয় অনেকেই লেখাপড়ার জন্য কলেজের হোস্টেলে কম খরচে থেকে লেখাপড়া করতে চায়। আমাদের সরকারি কলেজের 'জ্ঞানরঞ্জন ঘোষ ছাত্রাবাসটি ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় সেটি শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর থেকে বন্ধ ঘোষণা করেছে। আমরা ভবন স্থাপনা সমূহের মেরামত সংরক্ষণ ও সম্প্রসারণ কাজের চাহিদা পাঠিয়েছি। আশা করি কর্তৃপক্ষ আমাদের দিকে সদয় হবেন।

শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের সহকারী প্রকৌশলী আখতারুজ্জামান বলেন, কলেজ কর্তৃপক্ষ ২০-২১ অর্থ বছরে ভবন স্থাপনা সমূহের মেরামত সংরক্ষণ ও সম্প্রসারণ কাজের চাহিদার জন্য আবেদন করেছেন। আমরা সেগুলো ঢাকায় পাঠিয়েছি। কেন্দ্র থেকে এস্টিমেট দিলে আমরা ডেন্ডারের মাধ্যমে হোস্টেলের কাজ শুরু হবে।

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: