বাম নেতাকে তুলে নিয়ে মুচলেকা রেখে ছেড়ে দিল পুলিশ

প্রকাশিত: ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১২:৩১ এএম

নারায়ণগঞ্জ জেলা গণসংহতি আন্দোলনের সমন্বয়কারী তরিকুল সুজনকে মুচলেকা রেখে ছেড়ে দিয়েছে পুলিশ। এর আগে চাষাঢ়া শহীদ মিনারে অবস্থানকে কেন্দ্র করে পুলিশের অশোভন আচরণের প্রতিবাদ করায় জেলা গণসংহতি আন্দোলনের সমন্বয়কারী তরিকুল সুজনকে আটক করার ঘটনা ঘটেছ। পরে উভয় পক্ষের ভুল বোঝাবুঝি স্বীকার করে দুঃখপ্রকাশ করেছে নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানা পুলিশ।

মঙ্গলবার (২১ ফেব্রুয়ারি) রাত পৌনে ১১ টায় নারায়ণগঞ্জ শহরের চাষাঢ়া কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এই ঘটনা ঘটে। এরপর গণসংহতি আন্দোলনের জেলা ও মহানগর নেতৃবৃন্দ রাতে থানায় গেলে রাত ১টার দিকে মুচলেকায় মুক্তি পান জেলা সমন্বয়কারী তরিকুল সুজন। এর আগে, শহীদ মিনারে অবস্থানকে কেন্দ্র করে সদর থানা পুলিশের টহল টিমের সাথে তর্ক বিতর্ক হয় তরিকুল সুজনের।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রাত সাড়ে ১০ টার দিকে তরিকুল সুজন ও স্থানীয় একজন গণমাধ্যমকর্মী শহীদ মিনারে দাঁড়িয়ে খাবার (হালিম) খাচ্ছিলেন। এসময় দুজন পুলিশ সদস্য এসে দ্রুত তাদের শহীদ মিনার প্রাঙ্গন ত্যাগ করতে বলেন। জবাবে সুজন বলেন, 'খাবার খাওয়া শেষ হলেই বেরিয়ে যাব'। কিন্তু পুলিশ সদস্য সেই কথা না শুনে উল্টো অশোভন আচরন করেন এবং হাতে থাকা বাশের লাঠি দিয়ে মারতে উদ্যত হন। এনিয়ে তর্ক বিতর্ক শুরু হলে টানা হেঁচড়া করে তরিকুল সুজনকে গাড়িতে তুলে। এসময় সাথে থাকা গণমাধ্যমকর্মী ঘটনার চিত্র ধারন করতে গেলে তাকেও হেনস্তা করা হয় এবং মুঠোফোন কেড়ে নেয়ার চেষ্টা করে পুলিশ। ছবি তুললে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দেয়ার হুমকি দেয়া হয়।

এরপর রাত সাড়ে ১১ টায় থানা হেফাজতে নেয়ার পর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার রুমে আলোচনায় বসে গণসংহতির নেতৃবৃন্দ ও পুলিশ সদস্যরা। প্রায় সোয়া এক ঘন্টা কথাবার্তা শেষে বিষয়টি ভুল বোঝাবুঝি স্বীকার করে পুলিশ সদস্যরা। পরে দুঃখপ্রকাশ করে মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেয়া হয় সুজনকে। একই সাথে ভুক্তভোগী গণমাধ্যম কর্মীর কাছেও দুঃখপ্রকাশ করে পুলিশ সদস্যরা।

গণসংহতি আন্দোলনের সমন্বয়কারী তরিকুল সুজন বলেন, 'পুলিশের দুজন সদস্য আমাদের খাওয়া বন্ধ করে দ্রুত বেরিয়ে যেতে বলে। একই সাথে আমরা সহ উপস্থিত সবার সাথেই অশোভন আচরন করছিলেন তারা। আমি এর প্রতিবাদ জানালে পুলিশ সদস্যরা বাশের লাঠি নিয়ে মারমুখী আচরন করে। আমি সেসময় বলি, 'রাষ্ট্রের নাগরিকের সাথে এই ধরণের আচরন তারা করতে পারে না।' এই মন্তব্যের পরে তারা আমাকে টানা হেঁচড়া করে গাড়িতে তুলে। পরে থানার ওসি বিষয়টি নিয়ে দুঃখ প্রকাশ করে। একই সাথে আমি পুলিশকে অনুরোধ করি, কোন নাগরিকের সাথে যেন এই ধরণের আচরন না করা হয়।'

একই সময়ে পুলিশের অসদাচরণের শিকার গণমাধ্যমকর্মী সোহেল রানা বলেন, 'ঘটনার শুরু হতেই আমি একটু দূরে সরে যাই। যেহেতু তরিকুল সুজন একজন রাজনৈতিক নেতা। কিন্তু পুলিশ সদস্য যখন বাশ নিয়ে মারতে উদ্যত হয় আমি তখন নিজের পরিচয় দিয়ে আপত্তি জানিয়ে বলি 'শহীদ মিনারে অবস্থান করার কারনে তো আপনি কাউকে মারতে পারেন না।' এরপর তারা আমার সাথে তর্ক না বাড়িয়ে তরিকুল সুজনকে গাড়িতে উঠায়। ঘটনার চিত্র ধারন করতে গেলে আমার মোবাইল ছিনিয় নেয়ার চেষ্টা করে এবং ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দেয়ার হুমকি দেয়।'

এই বিষয়ে সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আনিচুর রহমান মোল্লা বলেন, 'ঘটনাটি মূলত ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। আমরা আলাপ আলোচনা করে বিষয়টি মিমাংসা করেছি। আর সাম্প্রতিক সময়ে ছিনতাই বেড়ে যাওয়ায় শহরে বাড়তি নজর রাখা হচ্ছিলো। এর মধ্যেই অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা ঘটে গেছে। এই বিষয়টি আলোচনার মাধ্যমে সুরাহা করা হয়েছে।'

মুচলেকা রাখার প্রসঙ্গে বলেন, 'থানায় থাকাকালীন সময়ে ওই ব্যাক্তি সুস্থ ও স্বাভাবিক ছিলেন এই বিষয়টি নিশ্চিত রাখার জন্য মুচলেকা রাখা হয়েছে। এর বাইরে ভিন্ন কারন নেই।'

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: