২১ বছর পূর্বে বঙ্গবন্ধুর ছবি ভেঙে ফেলার অভিযোগ মাদ্রাসা সুপারের বিরুদ্ধে

প্রকাশিত: ১৩ মার্চ ২০২৩, ০৪:১৯ পিএম

২১ বছর আগে পটুয়াখালী সদর উপজেলার উত্তর বদরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বিএনপি সরকারের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার ছবি না থাকায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি সরিয়ে ফেলার অভিযোগ পাওয়া গেছে আঠারো গাছিয়া দাখিল মাদ্রাসার সুপার ও বিএনপি নেতা আবু সালেহ'র বিরুদ্ধে।

২০০২ সালের সেপ্টেম্বর মাসের ১৮ তারিখে তিনি ব্যক্তিগত ভাবে ওই বিদ্যালয় পরিদর্শন করেন। প্রধান শিক্ষকের কক্ষে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার ছবি না দেখে ক্ষিপ্ত হয়ে বঙ্গবন্ধু'র ছবি সাথে নিয়ে যায় তিনি। খালেদা জিয়ার ছবি না থাকা এবং বঙ্গবন্ধুর ছবি নিয়ে যাওয়ার বিষয় জানিয়ে হাতে লেখা একটি চিঠিও ওই বিদ্যালয়ে রেখে গিয়েছিলেন আবু সালেহ। সেই চিঠির সূত্র ধরে বিষয়টি নিয়ে অনুসন্ধান করেছে বিডি২৪ লাইভ.কম।

তবে এই অভিযোগ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন বলে দাবী করেছেন আঠারো গাছিয়া দাখিল মাদ্রাসার সুপার ও বিএনপি নেতা আবু সালেহ।

২০০২ সালের বদরপুর ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও পটুয়াখালী সদর উপজেলা বিএনপির দপ্তর সম্পাদক আবু সালেহ সাক্ষরিত সেই চিঠিতে লেখা ছিলো, অদ্য ১৩-০৯-০২ইং তারিখ রোজ বুধবার ১৩ নং উত্তর বদরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এসে শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি নিয়ে গেলাম। এবং খালেদা জিয়া তথা প্রধান মন্ত্রীর ছবি টানানো হয়নি সে বিষয়টি প্রত্যক্ষ করে গেলাম। বিষয়টি প্রধান শিক্ষক কে অবহিত করার জন্য অত্র বিদ্যালয়ের শিক্ষক জনাব মো. আলাউদ্দিন স্যারকে অনুরোধ করা হলো।

তৎকালীন সময়ের ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. হক মোল্লা ও ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীরা এ বিষয়ে জানান, তখন বিএনপি সরকার ক্ষমতায় ছিলো। একদিন বিদ্যালয় শ্রেণির কার্যক্রম শুরুর আগে হঠাৎ বিদ্যালয়ে উপস্থিত হয় আবু সালেহ। তখন বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. আলাউদ্দিন একটি শ্রেণি কক্ষে কিছু শিক্ষার্থীদের টিউশন দিচ্ছিলেন। আবু সালেহ বিদ্যালয়ে উপস্থিত হয়ে প্রধান শিক্ষকের কক্ষে প্রবেশ করেন। সেখানে বিএনপি সরকারের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার ছবি দেখতে না পেয়ে তিনি ক্ষুদ্ধ হয়।

এরপরে তিনি সেখানে থাকা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি সাথে নিয়ে চলে আসেন। ফেরার পথে তিনি প্রধানমন্ত্রী ছবি টানানো নেই বিষয়টি প্রত্যক্ষ করেছে এবং বঙ্গবন্ধুর ছবি নিয়ে যাচ্ছেন এ বিষয়টি প্রধান শিক্ষকে অবহিত করা হোক মর্মে একটি চিঠি লিখে শিক্ষক মো. আলাউদ্দিন এর কাছে রেখে যায়। বঙ্গবন্ধুর ছবি নিয়ে আবু সালেহ বদরপুর বাসস্ট্যান্ডে পৌঁছালে সেখানে ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. হক মোল্লার সাথে দেখা হয়। তখন প্রধান শিক্ষক তাকে বঙ্গবন্ধুর ছবি ফেরত দেয়ার অনুরোধ জানায় এবং খালেদা জিয়ার ছবি তৈরি করতে দেয়া হয়েছে বিকেলে বিদ্যালয়ে টানানো হবে বলে অবহিত করে।

কিন্তু আবু সালেহ প্রধান শিক্ষককে বঙ্গবন্ধুর ছবি ফেরত দিতে অস্বীকৃতি জানায়। একপর্যায়ে প্রধান শিক্ষক সাথে বাকবিতন্ডায় জড়িয়ে তাকে লাঞ্চিত করার চেষ্টা করে আবু সালেহ এবং বঙ্গবন্ধুর ছবি রাস্তায় ফেলে ভেঙ্গে ফেলে। পরে ওইদিন বিকেলেই প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার ছবি বিদ্যালয়ে টানানো হয়।

এঘটনার পরবর্তীতে ততকালীন সময়ের শিক্ষা কর্মকর্তা বিদ্যালয় পরিদর্শন করে খালেদা জিয়ার ছবি টানানো অবস্থায় পাওয়ায় কোনোমতে চাকুরি বেঁচে যায় প্রধান শিক্ষক মো. হক মোল্লার।

এ ঘটনার দীর্ঘ ২১ বছর পেরিয়ে গেলেও বহাল তবিয়তে আছেন বিএনপি নেতা আবু সালেহ। বর্তমানেও সে অনেক প্রভাবশালী ব্যক্তি ও একটি মাদ্রাসার সুপার পদে দায়িত্ব পালন করছে।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী তৎকালীন একজন ইউপি মেম্বার নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, সেদিন সকালে বদরপুর বাসস্ট্যান্ডে চা খাচ্ছিলাম। হঠাৎ প্রধান শিক্ষক হক মোল্লার ডাক-চিৎকার শুনতে পাই। তখন জানতে পারি সালাম তালুকদারের ফার্মেসির সামনে বঙ্গবন্ধুর ছবি ভেঙ্গেছে আবু সালেহ মাওলানা৷

ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা করেছি৷ পরবর্তীতে হক মোল্লা বিষয়টি নিয়ে অনেক দৌড়াদৌড়ি করেছে কিন্তু বিএনপির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আলতাফ হোসেনের ক্ষমতার সামনে টিকতে পারে নাই।

উত্তর বদরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ততকালীন প্রধান শিক্ষক মো. হক মোল্লা বলেন, আমি ঘটনার দিন বিষয়টি নিয়ে থানায় অভিযোগ করতে চেয়ে ব্যর্থ হয়েছিলাম। পরবর্তীতে সেদিন প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা, পটুয়াখালী সদর আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য শাহজাহান মিয়াকে বিষয়টি নিয়ে অভিযোগ করেছিলাম। তিনি বিষয়টি অবগত আছেন।

অভিযোগ অস্বীকার করে আঠারো গাছিয়া দাখিল মাদ্রাসার সুপার আবু সালেহ বলেন, এঘটনা সম্পূর্ণ ভুয়া, এর কোন সত্যতা নেই। চিঠির বিষয়ে প্রশ্ন করলে বলেন, আমি কোনো চিঠিও লেখিনি, এবিষয়েরও কোনো সত্যতা নেই।

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: