‘কুরআন শপথ করে বলব আমরা ডান বাম টাকা খাই না’

ফেনী হাইওয়ে থানা পুলিশের প্রত্যহ চলচে চাঁদাবাজি। প্রতিদিন শনিবার হতে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সকাল ৯.৪০ মিনিট হতে বিকাল ৫.৫০ পর্যন্ত রুটিন মাফিক পালাক্রমে বাস, ট্রাক, মাইক্রো, প্রাইভেট, সিএনজি, মোটরসাইকেলসহ বিভিন্ন যানবাহন চালকদের থামিয়ে রাস্তার পাশে দাঁড়ি করিয়ে গাড়ির কাগজপত্র পরীক্ষার নামে এসব চাঁদাবাজি করা হচ্ছে।
প্রথমে গাড়ি পাশে দাড়িয়ে তারা প্রশ্ন করে গাড়ি কোথায় হতে আসছে? বৈধ না অবৈধ? এরপর পালাক্রমে একাধিক প্রশ্ন করে।তারপর তাদের গাড়ির পিছনে নিয়ে গিয়ে কাগজপত্র ঠিক থাকলেও চা নাস্তার কথা বলে দিয়ে চলাচল করা দূরপাল্লার অনেক পরিবহনের সাথে তারা চাঁদা আদায় করে থাকেন। চাঁদা না দিলে হাইওয়ে পুলিশের মাসিক চুক্তি। যেসব নামে মামলা দেন। এমনকি কাগজপত্র ঠিক থাকার গাড়িতে চুক্তি নেই শুধু সেই গাড়িগুলো আটক করে পর মাদক থাকা কল্পিত অভিযোগ তুলে মোটা অংকের মামলা দিচ্ছেন তারা, এমন অভিযোগ করেছেন টাকা আদায় করা হয় বলেও ইয়াকুব নামে এক চালক জানান।
মহাসড়কে চলাচলকারী হারুন নামে এক ট্রাক চালক হারুন ড্রাইভার বলেন, ঢাকা- চট্টগ্রাম মহাসড়কের একাধিক স্থানে চেকপোস্ট বসিয়ে প্রতিনিয়ত হাইওয়ে পুলিশ উৎকোচ আদায় করছেন।বিশেষত লেমুয়ার পরে হাফেজিয়া রাস্তার বিপরীতে এক বাদামগাছের নিচে একটি নিরাপদ স্পট আছে।সেখানে পুলিশ গাড়ি দাঁড় করিয়ে প্রতিদিন মোটরসাইকেল, সিএনজি,ট্রাক,মিনি ট্রাক,পিক-আপ সহ বিভিন্ন গাড়িগুলোকে জব্দ করছেন।একে একে জব্দকৃত গাড়ির বিভিন্ন কাগজপত্র সহ পুলিশের মান্থলি টোকেন আছে কি না জিজ্ঞেস করেন।তারপর মান্থলি টোকেন না থাকলে ‘চা খরচ কিছু দেন? আমাদের পেট পিট আছে না।এমন প্রশ্ন করেই টাকা দাবি করেন।তারপর হাজার খানিক টাকা দিলেই দ্রুত চলে যান বলে ছেড়ে দেন।এভাবে রাস্তায় গাড়ি দাঁড় করানোর ফলে কৃত্রিম জ্যামের সৃষ্টি হয়। গাড়ির মালিকরাও অতিষ্ঠ হয়ে গেছে।
কুমিল্লা থেকে সবজি ক্রয় করে ফেনী ও নোয়াখালীত ট্রাকযোগে নিয়ে নিয়মিত ব্যবসা করেন সবুজ ও করিম। তারা বলেন, মহাসড়কের স্টার লাইন পাম্প সংলগ্ন এলাকায় নিয়মিত হাইওয়ে পুলিশ চেকপোস্ট বসিয়ে অবৈধ মালামাল ও কাগজপত্র চেকিংয়ের নামে কাঁচামাল ও বিভিন্ন পণ্য বোঝাই ট্রাক, পিকআপ থেকে টাকা আদায় করে থাকে। টাকার অংক ২শ’ থেকে শুরু করে ২ হাজার ক্ষেত্রভেদে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত গিয়ে ঠেকে। এ পরিস্থিতির নিয়মিত শিকার হচ্ছেন অনেকে। অভিযোগ করে হয়রানির শিকার হতে হবে এমন আশংকার কথা জানিয়ে তারা জানান, ‘সাংবাদিকদের রিপোর্টের কারণে পুলিশের হয়রানি আরও বেড়ে যায়। নীরবে সহ্য করা ছাড়া কোনও উপায় নেই।’ অবৈধ মোটরসাইকেল, নসিমন, মাইক্রোবাস থেকে
২শ’ থেকে শুরু করে ২ হাজার থেকে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত আদায় করে থাকে পুলিশ। পরিবহন চালকরা চাহিদামাফিক উৎকোচ দিতে অপারগতা জানালে ঠুকে দেওয়া হয় বিভিন্ন হয়রানিমূলক মামলা।
তিসান নামের একজন মোটর বাইক চালক জানান, সপ্তাহ খানেক আগে মাথায় হেলমেট দিয়ে লালপোল হতে আসছিলাম।এমন সময় সিগন্যাল দেয় প্রশাসনের এক সদস্য। গাড়ি দাঁড় করাতেই বলে চাপান,সাইডে আসুন।তারপর প্রায় ১২ মিনিট সব কাগজ পত্র চেক করেন।এরপর বলেন সিগারেট খাব,টাকা দেন।সব কাগজপত্রের পর আবার টাকা কেন? এমন প্রশ্ন করার সাথে সাথে ই ৩ হাজার টাকার মামলার স্লিপ ধরিয়ে দেন।
সংলিষ্ঠ সূত্রে জানা যায়, বর্তমান ফেনী হাইওয়ে থানার ওসি মোস্তফা কামাল যোগদানের পর থেকে চাঁদাবাজি বেড়ে গেছে। তিনি যখনই আসেন তখনই সব চুষে খায়। উনার পৈত্রিক বাড়ি,ব্যাংক ব্যালেন্স সহ সম্পদের বিশাল সমারোহ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পুলিশের এক সদস্য জানান, ফেনী হাইওয়ে ওসির বিভিন্ন ট্রান্সপোর্টের সাথে মাসিক চুক্তি করা আছে। এর মধ্যে মোটা অংকের টাকা আসে, কেএইচএফ ট্রান্সপোর্ট, আর আর ট্রান্সপোর্ট, নারায়ণগঞ্জ ট্রান্সপোর্ট, কুমিল্লা ট্রান্সপোর্ট, এমএমটি ট্রান্সপোর্ট, সাতক্ষীরা ট্রান্সপোর্ট, জাহাঙ্গীর অনলাইন সিম, খায়ের ট্রান্সপোর্ট, গৌরীপুর ট্রান্সপোর্ট ইত্যাদি। হাইওয়ে দিয়ে চলাচলের সময় এসব ট্রান্সপোর্টের গাড়ি কোন প্রকার হয়রানির মুখে পড়ে না। পুলিশও তাদের কাগজপত্র দেখেনা।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে ওসি কামালকে প্রথমে ফোন দিলে তিনি একটু গরম হয়ে কথা বলেন।এরপর তিনি কল কেটে পুনরায় কল দিয়ে বলেন’ আমাদের মহিপাল হাইওয়ে থানার সকল সদস্য কুরআন শপথ করা আছে।কেউ চাঁদা নেয় না।আমরা ডান বাম টাকা খাই না।
যদি কেউ চাঁদা নেয় তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিব।কামাল আসার পর মামলা ও চাঁদাবাজি হয়রানি বেড়ে গেছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন’ আমি আসার পূর্বে দৈনিক মামলা হত ৪ শত।বর্তমানে হয় ২ শত।তাহলে আমার সময়ে তো হয়রানি কম হচ্ছে।আমি ৩ বছর পূর্বে শহর ফাঁড়ি থানায় ছিলাম।এরপর হাইওয়েতে আসছি।এরপর বদলি হইছে।এখন আবার পদায়ন করছি।
এরপর তিনি আবার বলেন’ পুলিশ নিয়মিত মামলা করবেই।এটা থামবে না।কাগজপত্র না থাকলেই মামলা হবে।গাড়ি দাঁড় করিয়ে কৃত্রিম জ্যামের বিষয়ে তিনি বলেন’ এমনটা করা হয় না।যদি করে থাকে তাহলে তার বিরুদ্ধে এ্যাকশন হবে।
শাকিল/সাএ
বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এডিটর ইন চিফ: আমিরুল ইসলাম আসাদ
বাড়ি#৩৫/১০, রোড#১১, শেখেরটেক, ঢাকা ১২০৭
ই-মেইলঃ [email protected]
ফোনঃ (০২) ৫৮১৫৭৭৪৪
নিউজ রুমঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯১
মফস্বল ডেস্কঃ ০১৫৫২৫৯২৫০২
বার্তা প্রধানঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯০
মার্কেটিং ও সেলসঃ ০৯৬১১১২০৬১২
ইমেইলঃ [email protected]

পাঠকের মন্তব্য: