জীবনের দুটি দুঃখের বিষয় সম্পর্কে জানালেন আইনমন্ত্রী

প্রকাশিত: ২৬ মার্চ ২০২৩, ১০:৫০ পিএম

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অভাবনীয় বিজয়ের পর শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ৪৭ সদস্যের মন্ত্রিসভায় ঠাঁই পেয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যা মামলা ও জাতীয় চার নেতা হত্যা মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান কৌঁসুলি। এছাড়াও বিডিআর বিদ্রোহ ও দুদকের মামলাসহ রাষ্ট্রীয় বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ মামলা পরিচালনা করেছেন বর্তমান আইনমন্ত্রী। তার বাবা প্রয়াত সিরাজুল ইসলামও ছিলেন দেশবরেণ্য রাজনীতিক ও আইনজীবী।

স্বাধীন বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়ণ কমিটির একজন ছিলেন সিরাজুল হক। জন্ম থেকেই মন্ত্রী বাবাকে দেখেছেন বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বিশ্বাসী থেকে কাজ করতে । বড় হয়ে নিজেও একই আদর্শ অনুসরণ করছেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় একবার আগরতলার উদ্দেশে রওনা দিয়েছিলেন, তবে সরাসরি যুদ্ধে অংশ নেওয়ার সুযোগ পাননি। তবে  পরবর্তীতে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলা ও জেলহত্যা মামলায় প্রধান কৌঁসুলি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন ।

সম্প্রতি একটি গণমাধ্যমের কাছে নিজের নানা ভাবনা আর অভিজ্ঞতার অংশবিশেষ তুলে ধরেছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। এসময় জেলহত্যা মামলায় করুণ দৃশ্যপট সম্পর্কে নিজের মনোভাব প্রকাশ করেন মন্ত্রী। আনিসুল হক বলেন, জেলহত্যা মামলার দুটো দিক রয়েছে। একটি হচ্ছে এই হত্যাকাণ্ড যারা ঘটিয়েছে তারাই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ তার পরিবারের ১৭ জন সদস্যকে হত্যা করেছিলেন। তারই ধারাবাহিকতায় এই জেল হত্যাকাণ্ড হয়। যেহেতু বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় তাদের (খুনিদের) ফাঁসি হয় এবং রায় কার্যকর হয়, সেহেতু ধরে নেওয়া হয় জেল হত্যাকাণ্ডের বিচারও সেখানে হয়েছে। কিন্তু দুঃখের কিছু কিছু জিনিস আছে যা আমার কাছে মনে হয়, নতুন প্রজন্ম ও বাংলাদেশের পরবর্তী প্রজন্মকে যদি না জানানো হয়, তবে সেটা অন্যায় হবে এবং বাংলাদেশের ইতিহাসকে বিকৃত করার সুযোগ দেওয়া হবে।

দুঃখের বিষয় দুটো হলো, এক. আমরা যখন বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলা হাইকোর্ট বিভাগে শুনানি করতে যাই তখন সাত জন বিচারপতি এই মামলা শুনতে বিব্রতবোধ করেছিলেন। আমি এখনও তাদের (বিচারপতিদের) এই অবস্থানের নিন্দা জানাই। আমার কথা হচ্ছে- তারা কোনও কারণ দেননি যে তারা কেন এই মামলা শুনতে বিব্রতবোধ করলেন। আইনজীবী হিসেবে আমরা জানি বিব্রতবোধ হওয়ার দুটি কারণ থাকে। তা হলো- যদি কোনও বিচারক সংশ্লিষ্ট মামলায় আইনজীবী হিসেবে কখনও পরিচালনা করে থাকেন বা কোনও আসামি যদি তার আত্মীয় হন, তবেই বিব্রতবোধ করতে পারেন। এখানে আমার বলার বিষয় হচ্ছে- যেই সাত জন বিচারপতি এই বিব্রতবোধ করেছেন তাদের একজনেরও কিন্তু বিচারপতি হওয়ার যোগ্যতা থাকতো না যদি না বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ গড়ে দিতেন। এটি একটি দুঃখের দিক।

দ্বিতীয় দুঃখের বিষয় সম্পর্কে মন্ত্রী বলেন, জেলহত্যা মামলায় হাইকোর্ট বিভাগ একটি পারভার্স জাজমেন্ট (বিকৃত রায়) দিয়েছিল। সব সাক্ষী-সাবুদ থাকা সত্ত্বেও বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি আতাউর রহমান খানের হাইকোর্ট বেঞ্চ মামলাটির রায়ে বললেন, জেল হত্যাকাণ্ড শুধু একজন ঘটিয়েছে, আর কেউ ঘটায়নি। তাই একজনকে দণ্ড দিয়ে বাকি সবাইকে খালাস দিয়ে দিলো। সত্যিই এর থেকে পারভার্স (বিকৃত) জাজমেন্ট খুব একটা হয় না! তারপর আমরা আপিল বিভাগে আপিল করি। তখন আপিল বিভাগ জানতে চান, এভাবে জাজমেন্ট দিলো (হাইকোর্ট) কীভাবে? তখন বিএনপি সরকারে ছিল। কে এম ওবায়দুর রহমান, শাহ মোয়াজ্জেম- এরা বিচারিক আদালতকে যথেষ্ট প্রভাবিত করেছিল। তা সত্ত্বেও বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় আপিল বিভাগ বিচারিক আদালতের রায় বহাল রেখেছিলেন।

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: