ফেনী নদীতে আধিপত্য বিস্তারে গোলাগুলি, বিজিবির ধাওয়ায় অস্ত্রধারীরা পলাতক

প্রকাশিত: ২৮ মার্চ ২০২৩, ০৫:০৫ পিএম

মিরসরাইয়ের করেরহাট এলাকায় ফেনী নদীর পাড়ে বালুঘাটে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। প্রত্যক্ষদর্শী এবং নদীর পাড়স্থ ভাঙ্গনের স্বীকার স্থানীয় ভুক্তভোগী সংখ্যালঘুদের সূত্রে জানা যায়,পার্শ্ববর্তী করেরহাট থেকে সন্ত্রাসীরা এসে এ ঘটনা ঘটায়।রমজানের আগের প্রায় ৩ দিন পূর্ব হতে ১ সপ্তাহ এ গোলাগুলির ঘটনা চলতে থাকে।স্থানীয় মানুষ দেখলে হেলমেট পরিহিত একদল লোক এসে উপরে গুলি ছুড়ে।তখন সংখ্যালঘু হিন্দু পরিবারগুলো জীবনের মায়ায় দৌড়ে পালিয়ে যায়। এরপর তারা ড্রেজার দিয়ে বালি উত্তোলন করতে থাকতে।পরে সীমান্ত এলাকা হওয়ায় বিজিবি অস্ত্রধারীদের ধাওয়া দেয়। এভাবে নিয়মিত লুকোচুরি খেলা চলচে।কখনো বিজিবি ধাওয়া করে। আবার কখনো পুলিশ, কখনো ম্যাজিস্ট্রেট এসে ধাওয়া করে।কিন্তু এরপরও স্থায়ীভাবে কেউ বালি উত্তোলন বন্ধ করে না।

স্থানীয় সনাতন ধর্মাবলম্বী (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) নদী পাড়স্থ এক ভুক্তভোগী জানান' ম্যাজিস্ট্রট এসে বালি উত্তোলন বন্ধ করলে প্রশাসন চলে যাওয়ার ১/দেড় ঘন্টা পর প্রায়ই মুখোশ ও হেলমেট পরে অস্ত্রধারীরা এসে গুলি চালায়। এতে গোলাগুলির ঘটনায় কেউ হতাহত না হলেও এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে। ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

জানা গেছে, বালু উত্তোলনে ফেনী নদীর চট্টগ্রাম অংশ বেশ অনেক আগে দুই ভাগে ইজারা দেন চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক। মিরসরাই উপজেলার অলিনগরের মোল্লাঘাট ইজারা নেয় আবুল হোসেন এন্টারপ্রাইজ। অন্যদিকে করেরহাটের জালিয়াঘাট ইজারা নেন করেরহাট আওয়ামী লীগের সভাপতি সুলতান গিয়াস উদ্দিন। ইজারা নিয়ে তারা নদী ছাড়াও ছাগলনাইয়ার বিভিন্ন ফসলি ও সরকারি জমি থেকে বালু তুলে নেয় বলে অভিযোগ ওঠে, যা নিয়ে ইজারাদারদের সঙ্গে ছাগলনাইয়ার একটি পক্ষের বিরোধ চলছিল।

স্থানীয়রা জানান, মঙ্গলবার দুপুরে করেরহাটে বালুঘাটে আধিপত্য বিস্তার করতে মিরসরাইয়ের ইজারাদারের লোকদের অস্ত্র নিয়ে ধাওয়া করে ছাগলনাইয়ার একটি সন্ত্রাসী গ্রুপ। গোলাগুলির শব্দ শুনে পার্শ্ববর্তী অলিনগর ক্যাম্পের বিজিবি সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে অস্ত্রধারীদের ধাওয়া দেন। পরে খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে আসে। এর মধ্যেই সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যায়।

এবিষয়ে জানতে স্থানীয় ইউপি সদস্য পলাশ মেম্বার জানান' করেরহাটের ইজারাদার প্রতিষ্ঠানের মালিক আবুল হোসেন ও তাঁর পার্টনার স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা কামরুল ইসলাম তাদের বৈধ ইজারাদার নদীর অংশ ছাড়াও আশেপাশের বিভিন্ন অবৈধ জায়গা যেখানে বালু উত্তোলনের বৈধতা নেই এই সকল স্থান হতে বালু উত্তোলন করে।এতে তার একদল পেটুয়া বাহিনী রয়েছে।এরা প্রশাসন দেখলে পালিয়ে যায় আবার প্রশাসন চলে গেলে ফাঁকা গুলি চালিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করে। তাদের গুলির শব্দ শুনে অলিনগর ক্যাম্পের সুবেদার সহিদুল ইসলামের নেতৃত্বে বিজিবি সদস্যরা এসে শ্রমিকদের নিরাপদ স্থানে নিয়ে যান এবং অস্ত্রধারীদের ধাওয়া দেন। পলাশ মেম্বার নিজে বাদী হয়ে কামরুল ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে ৪/৫ মাস আগে ইউএনও অফিস,এসিল্যান্ড অফিস,ডিসি অফিস সহ একাধিক স্থানে মামলা করেন বলে জানান তিনি।

এ বিষয়ে অলিনগর বিজিবি ক্যাম্পের সুবেদার সহিদুল ইসলাম জানান, তাদের ধাওয়া খেয়ে অস্ত্রধারীরা পালিয়ে যায়। তবে তিনি কোনো সন্ত্রাসীকে শনাক্ত করতে পারেননি বলে জানান।

এ বিষয়ে জানতে আওয়ামী লীগ নেতা ও বালু উত্তোলনকারী কামরুল কে মুঠোফোনে কল করলে তিনি জানান' তার কোন অস্ত্রধারী ক্যাডার নেই।তবে যে বা যারা তার নামে এ সকল কথা বলচে তারা ভুল বলচে এবং মিথ্যা অপপ্রচার চালাচ্ছে। দলীয় গ্রুপি হতে এই অপপ্রচার কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে কামরুল বলেন' দলীয় ভাবে আমি চেয়ারম্যান ইলেকশন করতে চাওয়ার পর হতে আমার পিছনে লেগেছে কিছু দলে অনুপ্রবেশকারী।তবে প্রকাশ বিরোধিতায় কেউ নেই।'

এ বিষয়ে ছাগলনাইয়ার উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নাম্বারে বারবার ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেন নি।

ছাগলনাইয়া থানার ওসি সুদীপ রায় পলাশ বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠিয়েছি। তবে ঘটনাটি মিরসরাইয়ের করেরহাট অংশে হওয়ায় ছাগলনাইয়া থানা পুলিশের এখতিয়ারে ছিল না। তাই তারা কোনো অ্যাকশনে যেতে পারেননি। তবে অস্ত্রধারীরা বিজিবির ধাওয়া খেয়ে ছাগলনাইয়ার শুভপুরে পালিয়ে যায় বলে যে অভিযোগ এসেছে, এর সত্যতা পেলে সন্ত্রাসীদের আটকে অভিযান চালানো হবে।

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: