‘আমার বাজানের খোঁজ আইন্না দাও, ওরে আমি দেখতে চাই’

মাত্র সাত মাস আগেই পরিবারের সুখের আশায় সৌদি আরব পাড়ি জমিয়েছিলেন মাদারীপুরের রুহুল আমীন। নিজের অভাব অনাটনের সংসারে ধার-দেনা করেই বিদেশ যান তিনি। কিন্তু সেই ঋণ শোধ করার আগেই সৌদিতে বাস দুঘর্টনায় মারা গেছেন রুহুল আমীন। এতে রুহুলের পরিবারে নেমে আসে শোকের ছায়া। দুই সন্তান, স্ত্রী আর বিধবা মায়ের আহাজারিতে ভারী হয়ে উঠছে পুরো এলাকা।
এখন তার পরিবারের একটাই দাবি, সরকারী সহযোগিতায় যেন রুহুলের মৃতদেহ দেশের মাটিতে দাফন হয়। সেই সাথে ঋণ পরিশোধে সাহায্য কামনা পরিবারটির। প্রশাসনও বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখছেন। সোমবার (২৭ মার্চ) সৌদি আরবের আসির প্রদেশের আবহা এলাকায় ব্রেক ফেল করে সেতুর সঙ্গে ধাক্কা লেগে যাত্রীবাহী বাস উল্টে যায়। এতে বাসটিতে আগুন ধরে হতাহতের ঘটনা ঘটে। এতে রুহুল আমীন মারা যায়। প্রথমে পরিবার বিষয়টি না জানলেও (২৯ মার্চ) গণমাধ্যমে রুহুলের নাম দেখে খোঁজ পান তারা।
পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, অটোবাইক চালিয়ে সংসার চালাতো মাদারীপুর সদর উপজেলার কুনিয়া ইউনিয়নের দিয়াপাড়া গ্রামের রুহুল আমীন মাতুব্বর (৩৪)। একটু সুখের আশায় ধার-দেনা আর জমানো কিছু টাকা মিলিয়ে সাড়ে ৪ লাখ টাকার বিনিময় গত বছরের ২ জুলাই সৌদি যান তিনি। সেখানে আবহা জেলার খামিজ শহরের একটি ভাতের হোটেলে ২৮ হাজার টাকা বেতনে কাজ করতেন। কিন্তু এখনও ঋণের টাকা পরিশোধ করতে পারেনি।
অপরে সেখান থেকে সোমবার (২৭ মার্চ) সকালে রুহুল ওমরা হজ্জ পালনের উদ্দেশে রওনা হয়। পরে সৌদির আসির প্রদেশের আবহা এলাকায় ব্রেক ফেল করে সেতুর সঙ্গে ধাক্কা লেগে যাত্রীবাহী সেই বাসটি উল্টে যায়। এতে বাসটিতে আগুন ধরে হতাহতের ঘটনা ঘটে। এতে রুহুল আমীন মারা যায়। প্রথমে পরিবার বিষয়টি না জানলেও গণমাধ্যমে রুহুলের নাম দেখে খোঁজ নেয় পরিবার। পরে পরিবার নিশ্চিত হয় রুহুল আমীন মারা গেছেন। এরপর থেকে তার পরিবারের কান্না থামছেই না
এখনো বাড়ির উঠান ভর্তি মানুষ। চলছে স্বজনদের আহাজারি। মা রাবেয়া বেগম আর বোন রুনা আক্তার, বড় ভাই রফিক মাতুব্বর কান্নায় ভেঙে পড়ছিলেন। পাশে সাত বছর বয়সী ছেলে তাসরিফ ও ৪ বছর বয়সী মেয়ে তাসপিয়া নিরব চোখে তাকিয়ে আছে। প্রতিবেশীরা অনেকেই ছুটে এসেছেন রুহুলের পরিবারকে সান্ত্বনা দিতে। রুহুল আমিনের মা রাবেয়া বেগম বলেন, ‘আমার বাজান অনেক ভালো ছিলো। কখনো নিজের কষ্টর কথা আমাগো কইতো না। আমাগো ৫টা মানুষের ভরসা ছিলো। আইজ আল্লা আমার বাজানরে কই রাখছে জানি না। তোমরা আমার বাজানরে খোঁজ আইন্না দাও। ওরে আমি দেখতে চাই। আর মারা গেলে লাশটা আমাকে দেখাও।’
রুহুল আমিনের স্ত্রী আসমা বেগম বলেন, আমার স্বামী কাজ থেকে ওমরাহ করতে গিয়েছিলেন। তারপর থেকে তিনি নিখোঁজ রয়েছেন। আমরা জানি না উনার লাশ কোথায় আছেন। দুইটা ছোট ছোট ছেলে-মেয়ে, শাশুড়ি, ননদ লইয়া কই যামু আমি। সরকারের কাছে আমাদের আবেদন আমার স্বামীর লাশ যেনো দ্রুত খুঁজে বের করা হয়।’
মাদারীপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মাইনউদ্দিন জানান, আমরা ইউপি চেয়ারম্যানের মাধ্যমে নিশ্চিত হয়েছি রুহুল মারা গেছেন। তারপরেও আমরা প্রবাসী মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে চেষ্টা করছি তার খোজ নিতে। মারা গেলে অবশ্যই মৃতদেহ দেশে আনার বিষয় আমরা চেষ্টা করবো। আর অসহায় পরিবারের পাশে থাকার চেষ্টা করবো।
রেজানুল/সা.এ
বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এডিটর ইন চিফ: আমিরুল ইসলাম আসাদ
বাড়ি#৩৫/১০, রোড#১১, শেখেরটেক, ঢাকা ১২০৭
ই-মেইলঃ [email protected]
ফোনঃ (০২) ৫৮১৫৭৭৪৪
নিউজ রুমঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯১
মফস্বল ডেস্কঃ ০১৫৫২৫৯২৫০২
বার্তা প্রধানঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯০
মার্কেটিং ও সেলসঃ ০৯৬১১১২০৬১২
ইমেইলঃ [email protected]

পাঠকের মন্তব্য: