কক্সবাজার জেলা ছাত্রলীগের কমিটি বাণিজ্য

প্রকাশিত: ০১ এপ্রিল ২০২৩, ১১:২৬ এএম

আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন ছাত্রলীগের বিভিন্ন স্তরের কমিটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে ঘোষণা করে আসছে কক্সবাজার জেলা ছাত্রলীগ। এরকম কমিটি ঘোষণা নিয়ে বিভিন্ন সময় আর্থিক লেনদেনের অভিযোগ ওঠে। এ অভিযোগ মূলত মেয়াদোত্তীর্ণ কক্সবাজার জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি এস এম সাদ্দাম হোসেন ও মারুফ আদনানের বিরুদ্ধে উঠছে। অভিযোগ রয়েছে, তাদের কমিটির মেয়াদ না থাকায় পদ বিক্রির ব্যাপারটিতে সাদ্দাম-মারুফ আগের চেয়ে বেশি জোর দিয়েছেন। ছাত্রলীগের অন্তত এক ডজন নেতার সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।

তৃনমূল নেতাকর্মীরা বলছেন, সাদ্দাম- মারুফের পদবাণিজ্যের একটি চক্র রয়েছে। তাদের পরিবারের সদস্যসহ এ চক্রের সদস্যরা আর্থিক লেনদেন করে।

তাদের অভিযোগ, উখিয়া, টেকনাফ ও কুতুবদিয়াসহ বিভিন্ন উপজেলা কমিটিতে পদ পেতে ৫ থেকে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত দিতে হয়। কারণ যেসব এলাকায় মাদক ও সরকারের উন্নয়নকাজ বেশি সে কমিটির দাম অনেক। এ কারণে সেখানে চাঁদাবাজি ও টেন্ডার বাণিজ্যও হয় বেশি। এসব নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে স্থানীয় নেতারা আর্থিকভাবে বেশি লাভবান হন। টাকা নিয়ে পদ ভাগিয়ে যে কেউ ছাত্রলীগ নেতা হওয়ায় এ নিয়ে ব্যাপক হাসিঠাট্টা হয়।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ৩১ মার্চ ১০ সদস্যবিশিষ্ট কুতুবদিয়া উপজেলা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করেছে কক্সবাজার জেলা ছাত্রলীগ। কমিটিতে একজনকে আহ্বায়ক, সাতজনকে যুগ্ম-আহ্বায়ক ও ২ জনকে সদস্য করা হয়েছে।

এরমধ্যে আহ্বায়ক মহিদুল হাসান হান্নানের ছাত্রলীগ করার নির্ধারিত বয়স পেরিয়ে গেছে অনেক আগেই। তার বর্তমান বয়স ৩৬। বিয়েও করেছেন ৫ বছর আগে। নেই ছাত্রত্ব। সাবেক ছাত্রলীগ নেতা এরশাদুল হাবীব রুবেল হত্যা মামামলার এজাহার ভূক্ত আসামী তিনি। ওপেল শরীফের পিতা কুতুবদিয়া উপজেলা বিএনপির অর্থ সম্পাদক।

এত অভিযোগ থাকা সত্বেও মোটা অংকের টাকা নিয়ে শুক্রবার মধ্যরাতে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে কুতুবদিয়া উপজেলা ছাত্রলীগের কমিটি অনুমোদন দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে কক্সবাজার জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে।

এছাড়াও টাকার বিনিময়ে ছাত্রত্ব না থাকা ও ছাত্রলীগ করার নির্ধারিত বয়স সীমা পেরিয়ে যাওয়াদের নিয়ে নবঘোষিত কমিটি করা হয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছেন খোদ ওই কমিটির একজন যুগ্ন-আহবায়ক। তার দাবী কমিটিতে অছাত্র, মামলার আসামি ও বিবাহিতদের রাখা হয়েছে। যোগ্য অনেকের জায়গা হয়নি। ত্যাগীদের অবমূল্যায়ন করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

জানা গেছে, কুতুবদিয়া উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ও চট্টগ্রামের ওমরগণি এমইএস কলেজ ছাত্র সংসদের সদস্য এরশাদুল হাবীব রুবেলকে ২০০৬ সালের ১৫ অক্টোবর গুলি করে ও কুপিয়ে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। ঘটনার দুদিন পর ১৭ অক্টোবর তার মা মমতাজ সুফিয়া আক্তার বাদী হয়ে ১৮ জনকে আসামি করে হত্যা মামলা করেন। দুই বছর তদন্তের পর ২০০৮ সালে কুতুবদিয়া থানা পুলিশ আদালতে ৮ জনকে আসামি করে অভিযোগপত্র জমা দেয়। সেই অভিযোগপত্রে ৬নং আসামী করা হয় মুহিদুল হাসান হান্নানকে।

শুধু হত্যা মামলার আসামী নয় সে ২০১৭ সালের ১২ ডিসেম্বর ঢাকার আজিমপুরের জাহাঙ্গীর আহমেদের কন্যা উম্মে মিথিলা তাসনীম কে বিয়ে করেন কুতুবদিয়ার বড়ঘোপ ইউনিয়নের আবু ইউসুফের ছেলে হান্নান। সে ২০০৩ সালে এসএসসি পাশ করেছে। বর্তমানে তার ছাত্রত্ব নেই। জাতীয় পরিচয় পত্র অনুযায়ী তার বয়স বর্তমানে ৩৬। কমিটি অনুমোদনের পরপরই হানানের বিয়ের নিকাহনামা, আন্টি পড়ানোর ছবি ও হত্যা মামলার এজাহারের ছবি ভাইরাল হয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।

কমিটির সদস্য পদ পেয়েছেন ওপেল শরীফ। তার পিতা কুতুবদিয়া উপজেলা বিএনপির অর্থ সম্পাদক। এছাড়াও অছাত্র ও ছাত্রলীগ করার বয়সসীমা শেষ হওয়া অনেকেই সদ্যঘোষিত কমিটিতে স্থান দখল করে নিয়েছেন বলে অভিযোগ তুলেছেন পদ বঞ্চিতরা।

ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্র মতে, ফৌজদারী মামলার আসামী, বিবাহিত, ছাত্রত্ব না থাকা ও বয়স ঊনত্রিশ এর উর্ধ্বে হলে কেউ ছাত্রলীগের পদ-পদবীতে আসতে পারে না। তবুও মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে কমিটি বাগিয়ে নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন পদপ্রত্যাশী নেতাকর্মীরা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ছাত্রলীগ নেতা বলেন, এত অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও মহিদুল হাসান হান্নান কিভাবে আহবায়ক হলো বুঝতে পারছিনা। নিশ্চয়ই এখানে কোন কালো টাকা ও ক্ষমতার প্রভাব আছে। গঠনতন্ত্র না মেনে বিতর্কিত এমন একজনকে নেতা বানানোকে কেন্দ্র করে কুতুবদিয়া উপজেলা ছাত্রলীগের তৃণমুলের নেতাকর্মীদের মাঝে ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে বলে জানান তিনি।

যদিও এসব অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে দাবি করে মহিদুল হাসান হান্নান জানান, প্রতিপক্ষরা তার বিরুদ্ধে এসব ষড়যন্ত্র করছেন বলে জানিয়ে আর কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি তিনি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ছাত্রলীগের সাবেক ও বর্তমান কয়েকজ নেতা বলেন, এক সময় সাদ্দামের ঠিক মতো খরচের টাকাও তার ছিল না। সহজ-সরল জীবনযাপন ছিল তার। কিন্তু মাত্র কয়েক বছরের ব্যবধানে শুধু পদ-বাণিজ্য ও কমিশন, পাহাড় কেটে, টেন্ডার-তদবির করেই তিনি আজ কোটি কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন। হাঁকিয়ে বেড়ান অর্ধ কোটি টাকার দামি ব্যাক্তিগত গাড়ি। করেছেন নামে-বেনামে কয়েকটি ফ্ল্যাট। ক্রয় করেছেন একাধিক জমি। দলের পদ-বাণিজ্য করতে গিয়ে গঠনতন্ত্রের তোয়াক্কা না করে নিজের ইচ্ছামতো পদ দিয়েছেন যাকে তাকে। উপজেলা থেকে শুরু করে ইউনিয়ন কমিটি গঠনেও নিয়েছেন লাখ লাখ টাকা। ফলে খুব অল্প সময়ে এখন তিনি কোটি কোটি টাকার মালিক।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেলা ছাত্রলীগের এক নেতা বলেন, তারা (সাদ্দাম-মারুফ) গঠনতন্ত্রকে বুঁড়ো আঙুল দেখিয়ে বিভিন্ন উপজেলা ও পৌর কমিটির অনুমোদন দিচ্ছেন নিয়মিত। সেখানে কোনো ধরণের সম্মেলন তো দূরে থাক, গভীর রাতে ফেসবুকে প্রেস রিলিজ ছেড়ে দিয়ে দায়সারাভাবে সংগঠন চালাচ্ছেন।

এ বিষয়ে জানতে কক্সবাজার জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি এস এম সাদ্দাম হোসেনের সাথে যোগাযোগ করা হলে ফোন রিসিভ না করায় তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। পরবর্তীতে কক্সবাজার জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মারুফ আদনানের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও ফোন রিসিভ না করায় বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: