সূর্যমুখীর হাসিতে স্বপ্নে বিভোর চাষি

প্রকাশিত: ০১ এপ্রিল ২০২৩, ০১:৪৬ পিএম

রাঙ্গামাটির নানিয়ারচর উপজেলায় বাণিজ্যিকভাবে প্রথমবারের মতো চাষ হচ্ছে সূর্যমুখী ফুলের। সূর্যমুখীর হাসিতে অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতার স্বপ্নে বিভোর চাষি। বাম্পার ফলনের ফুল ফোঁটায় সফলতার আলো দেখছেন তারা। প্রথম বছরেই ফুলের চাষ করে সফলতার সম্ভাবনা দেখায় তাদের মুখে সূর্যমুখী ফুলের হাসি ফুটেছে। ভোজ্যতেলের সংকটকালে এই তেলজাতীয় উদ্ভিদ সূযমুখী চাষ চাষিদের মাঝে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, প্রকৃতির এক অসাধারণ রূপবান উদ্ভিদ সূর্যমুখী। সূর্যের ঝলকানিতে হলুদ রঙে ঝলমল করছে চারপাশ। সূর্যের দিকে মুখ করে আছে ফুল, সকালে পূর্ব দিকে তাকিয়ে হাসলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সূর্যের আবর্তনে তার দিক পরিবর্তন হয়। বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে এ যেন সবুজের মাঝে হলুদের সমাহার। সূর্যের দিকে মুখ করে হাসছে সূর্যমুখী। আর এমন মনোরম দৃশ্য দেখতে প্রতিদিনই মানুষ ভিড় করছেন সূর্যমুখী বাগানের সৌন্দর্য দেখতে। মনোরম সুন্দর পরিবেশ, উন্নত যাতায়াত ব্যবস্থা ও শহরের নিকটবর্তী হওয়ায় এমন দৃশ্য দেখাকে হাতছাড়া করতে চাইছেন না অনেকেই। সেইসঙ্গে সেলফি ও গ্রুপ ছবি তো আছেই। ফুলে ফুলে ভরে গেছে সূর্যমুখী ক্ষেত। সবুজ মাঠের এই হলুদ রঙ ছবিতে এনে দিচ্ছে নতুন মাত্রা। এমনই চিত্র উপজেলার ভূইঁয়া আদাম এলাকায়।

সূর্যের দিকে মুখ করে থাকে বলে এই ফুলকে সূর্যমুখী বলা হয়। সূর্যমুখীর ক্ষেতে একবার চোখ পড়লে তা ফেরানো কঠিন। বিজ্ঞানীদের অক্লান্ত প্রচেষ্টায় উদ্ভাবিত এই ফুলের তেলজাতীয় ফসল সূর্যমুখী হাইসান-৩৬ জাতের ফুল চাষ করে আশার আলো দেখছেন চাষিরা।

পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, রাঙ্গামাটি, বান্দরবান এবং খাগড়াছড়ি তিন পার্বত্য জেলায় বাণিজ্যিকভাবে প্রথমবারের মতো তেলজাতীয় উদ্ভিদ সূর্যমুখী ফুলের চাষ হয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের উদ্যোগে পার্বত্য এলাকার দারিদ্রতা হ্রাসকরণ কর্মসূচি হিসেবে সূর্যমুখী চাষের জন্য ২৫ লক্ষ টাকার একটি পাইলট প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। তিন পার্বত্য জেলায় সূর্যমুখী ফুলের চাষ হয়েছে প্রায় ১৮ হেক্টর জমিতে। সূত্রে আরো জানা গেছে, তিন পার্বত্য জেলায় ২০ জন করে মোট ৬০ জন চাষী সূর্যমুখী ফুলের চাষ করেছেন। তিন পার্বত্য জেলার মধ্যে সূর্যমুখী ফুলের চাষ হয়েছে,রাঙ্গামাটির নানিয়ারচর

উপজেলায়, বান্দরবান সদর উপজেলায় এবং খাগড়াছড়ির সদর উপজেলায়। নানিয়ারচর উপজেলার ৪নং ঘিলাছড়ি ইউনিয়নের পুকুরছড়ি এলাকা চাষি লিপন চাকমা জানান, চলতি মৌসুমে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের সার্বিক সহযোগিতা নিয়ে তিনি এক একর জমিতে সূর্যমুখী ফুলের চাষ করেছেন। সফলতার মুখও দেখছেন। আগামী দিনে এই চাষ আরও বাড়াবেন বলে তিনি জানান।

একই উপজেলার ভূঁইয়া আদাম ইউনিয়নের চাষি ত্রিজীবন চাকমা জানান, আগে তার জমিতে ধানের চাষ করা হতো। এই প্রথম অনেকটাই শখের বশে তেলের জন্য তিনি সূর্যমুখী
ফুলের চাষ করেছেন। বাম্পার ফলনের আশাও করছেন। আগামী দিনে আরও বেশি জমিতে সূর্যমুখী ফুল চাষ করবেন।

ভূঁইয়া আদাম ইউনিয়নের সাবেক সদস্য প্রীতি চাকমা জানান, এবার প্রথম তাঁর ইউনিয়নে সূর্যমুখী ফুলের চাষ হয়েছে। তিনি আশা করছেন, ধানের চেয়ে সূর্যমুখী ফুল চাষে চাষিরা বেশি লাভবান হবেন।

পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের প্রকল্প পরিচালক মোঃ জসীম উদ্দিন জানান, দেশীয় ঘানি ব্যবহার করে পরিপক্ক সূর্যমুখী ফুলের বীজ থকে তেল ভাঙানো যায়। স্বাস্থ্য ঝুঁকিও কম এই তেলে। পার্বত্য অঞ্চলে প্রথমবারের মতো এই তেলজাতীয় ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি প্রকল্পের আওতায় তিন পার্বত্য জেলায় তেলজাতীয় ফসল সূর্যমূখী হাইসেন-৩৬ জাতের চাষ করেছেন চাষিরা। এতে বাম্পার ফলনের আশা করছেন তারা। বাস্পার ফলনের ফুল ফোঁটায় সফলতার আলো দেখছেন তারা। প্রথম বছরেই ফুলের চাষ করে সফলতার সম্ভাবনা দেখায় তাদের মুখে সূর্যমুখী ফুলের হাসি ফুটেছে। তিনি আরো জানান, উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে চাষিদের বীজ, সারসহ প্রযুক্তিগত সব ধরনের সহায়তা দেয়া হচ্ছে। এবার প্রতি হেক্টর জমিতে দুই থেকে আড়াই মন বীজ উৎপাদন হবে বলে তিনি ধারণা করছেন।

এবিষয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান নিখিল কুমার চাকমা জানান, সারা বাংলাদেশে আমাদের যে ভোজ্য তেলের একটি ঘাটতি বাইরে থেকে আমাদের আমদানি করতে হয়। সেই জন্যই সূর্যমুখী ফুল চাষের মাধ্যমে একটু হলেও ভোজ্য তেলের চাহিদা মিটাতে পারি এবং এই চাহিদা মিটানোর জন্য এ প্রকল্প নেয়া হয়েছে।

তিনি আরো জানান, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন এবং নির্দেশনা দিয়েছেন দেশের এক ইঞ্চি পতিত জায়গা খালি রাখা যাবে না। সেক্ষেত্রে আমরা চাচ্ছি যে, চাষিদের সূর্যমুখী চাষে উৎসাহিত করার জন্য এবং তারা এই চাষে লাভবান হলে আগামীতে আরো বেশি করে সূর্যমুখী ফুলের চাষ করেবেন। তখন এই পাইলট প্রকল্পটি বৃহৎ আকারে নেয়া হবে বলে তিনি জানান।

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: