১৪ ব্যক্তি প্রতিষ্ঠানকে ‘চেতনায় চাটমোহর পদক’ প্রদান

প্রকাশিত: ০২ এপ্রিল ২০২৩, ১২:০৯ এএম

পাবনার চাটমোহর উপজেলায় বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদান রাখা ১৪ ব্যক্তি প্রতিষ্ঠানকে ‘চেতনায় চাটমোহর পদক’ এবং সম্মাননাপত্র তুলে দেয়া হয়েছে। শনিবার (১ এপ্রিল) দুপুরে চিত্রগৃহ চাটমোহর মিলনায়তনে পদক ও সম্মাননা জানানোর আয়োজন করে ফেসবুক গ্রুপ ও স্বেচ্ছাসেবী সামাজিক সংগঠন ‘চেতনায় চাটমোহর’। সংগঠনটির ৯ বছরে পদার্পণ উপলক্ষ্যে চাটমোহরে প্রথমবারের মতো এই পদক ও সম্মাননা জানানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

অনুষ্ঠানে শিশু শিক্ষার্থীদের হাত দিয়ে ১০ জন ব্যক্তি ও ৪টি প্রতিষ্ঠানকে পদক এবং সম্মাননাপত্র তুলে দেয়া হয়। এর আগে চাটমোহর বিষয়ক প্রতিযোগীতায় চারটি বিভাগে সেরা ১৪ জন শিশু শিক্ষার্থী বাছাই এবং তাদের পুরষ্কৃত করা হয়। সেই পুরস্কারপ্রাপ্ত ১২ জন শিশুর হাত দিয়ে গুনীজনদের হাতে তুলে দেয়া হয় ‘চেতনায় চাটমোহর পদক’।

এ সময় নাট্য ব্যক্তিত্ব আসাদুজ্জামান দুলাল, হরিপুর ইউপি চেয়ারম্যান মকবুল হোসেন, অংকন শিক্ষক মিলন রব, এলডিওর নির্বাহী পরিচালক নুরে আলম মঞ্জু, জিডিএস এর সভাপতি মনিরুল ইসলাম মনির, উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক রাজিব কুমার বিশ্বাস রাজু, চেতনায় চাটমোহরের চেয়ারম্যান জেমান আসাদ, সাংবাদিক শাহীন রহমান, আব্দুল লতিফ রঞ্জু সহ শিক্ষার্থী, অভিভাবকরা উপস্থিত ছিলেন।

পদকপ্রাপ্তদের মধ্যে নাট্যকার আসাদুজ্জামান দুলাল বলেন, কোনো অতিথি নয়, শিশু শিক্ষার্থীদের হাত থেকে পদক গ্রহণ একটা ব্যতিক্রমী ও চমৎকার ঘটনা। এমন আয়োজনে আমি মুগ্ধ। আমি থিয়েটারকে প্রাণের চেয়ে বেশি ভালবাসি। বাকি জীবন থিয়েটারকে বাঁচিয়ে রাখতে কাজ করবো।

মরনোত্তর পদকপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা আতাউর রহমান রানা মাস্টারের সন্তান এলডিওর নির্বাহী পরিচালক নুরে আলম মঞ্জু বলেন, আমার পিতা আমৃত্যু ভূমিহীন মানুষের জন্য কাজ করে গেছেন। তাকে দেয়া সম্মান আমি নিতে পেরে নিজেকে গর্বিত মনে হয়েছে। আয়োজকদের সাধুবাদ জানাই।

আয়োজক চেতনায় চাটমোহরের চেয়ারম্যান জেমান আসাদ জানান, সমাজে ভালো কাজের মূল্যায়ন, শিশুদের ভালো কাজে অনুপ্রানিত করতে চেতনায় চাটমোহর গুনী ব্যক্তিদের কাজকে স্মরণ করে শিশুদের হাত দিয়ে এ পদক ও সম্মাননাপত্র তুলে দিয়েছে।

যারা পেলেন চেতনায় চাটমোহর পদক:-

শিক্ষাক্ষেত্রে: আলহাজ্ব ফসি উদ্দিন আহম্মদ। ভূতপূর্ব রাজা চন্দ্রনাথ ও বাবু শম্ভুনাথ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের সর্বজন শ্রদ্ধেয় প্রধান শিক্ষক।

সংস্কৃতিতে (নাটক): আসাদুজ্জামান দুলাল। যিনি জীবনটাকেই ব্যায় করেছেন নাটকের জন্য অনন্য নিবেদনে।

সমাজসেবায়: মো. আয়ূব হোসেন। ভূতপূর্ব রাজা চন্দ্রনাথ ও বাবু শম্ভুনাথ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক। তিনি গত ৩৭ বছর ধরে একটি দাতব্য প্রতিষ্ঠান চালান। প্রতি শুক্রবার যেখানে বিনামূল্যে রোগী দেখা এবং ওষুধ দেয়া হয়।

চিকিৎসা সেবায়: ইসরাইল হোসেন (মরণোত্তর)। চাটমোহর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সহকারী সেবক হিসাবে করোনাকালে টিকা প্রদান সহ, সেই ভয়ংকর সময়ে অনেকের বাড়িতে গিয়ে সেবা দিয়েছেন। এমনকি তিনি মারা গেছেন ডিউটিরত অবস্থায় অসুস্থ হয়ে।

কৃষিতে: হায়দার আলী। একজন প্রান্তিক কৃষক হিসাবে পেঁয়াজের ফুলকা থেকে বীজ উৎপাদন করে অসংখ্য কৃষকের পেঁয়াজ চাষে ভূমিকা রেখেছেন।

তরুন: খন্দকার আব্দুস সোয়াদ। ব্যাডমিন্টনে জাতীয় চ্যাম্পিয়ন। একের পর এক জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পুরস্কার যার ঝুলিতে।

সৃজনশীলতা: চড়কবাড়ি জাগতিক, বোঁথড়। বিগত বছরগুলোতে ধারাবাহিকভাবে স্বরসতী পূজার নান্দনিক সেট নির্মাণ করেছে, যা শুধু চাটমোহরই নয় বরং জাতীয় পর্যায়ের কাজ।

সৃজনশীলতা (অনলাইন): মিজানুর রহমান। মাছ ধরার ভিডিও থেকে ‘ভলেজ লাইফ’ নামক চ্যানেলে বিভিন্ন কনটেন্ট তৈরী করে দেশব্যাপী সমাদৃত হয়েছেন।

উদ্যোক্তা: হাসি-খুশী দুই বোন। পরচুলা তৈরীর কারখানা করে সফলতা এবং অসংখ্য নারীর কর্মসংস্থান তৈরী করেছেন।

ক্রীড়া: জিন্নাহ স্মৃতি ক্লাব। দীর্ঘ ১৮ বছর ধরে সফলতার সাথে হরিপুরে মরহুম আলী আজগর চেয়ারম্যান স্মৃতি ফুটবল টুর্নামেন্ট আয়োজন করে আসছেন। যা স্থানীয় খেলাধুলায় অসাধারণ অবদান রেখে চলেছে।

সংগঠন: বিডি ক্লিন চাটমোহর ইউনিট। পরিচ্ছন্নতার বার্তা ছড়িয়ে দিতে প্রতি সপ্তাহে পরিচ্ছন্নতার ইভেন্ট বাস্তবায়নের পাশাপাশি হার্টে ছিদ্র মীমের অপারেশনের জন্য দ্বারে দ্বারে গিয়ে টাকা সংগ্রহ করেছে। মীম এখন সুস্থ্য। হাজারো কাজের চেয়েও সেরা কাজ অন্তত একটা জীবন বাঁচাতে ভূমিকা রাখা।

উদ্যোগ: জিডিএস’র বৃক্ষরোপন কর্মসূচি-২০২২। কুঠিপাড়া থেকে ভাটোপাড়া পর্যন্ত ৪ দশমিক ২ কিলোমিটার রাস্তায় কৃষ্ণচূড়া ও বিভিন্ন ফুল গাছের চারা রোপন। যা আগামী কয়েক বছরের মধ্য সে সড়ককে দর্শনীয় স্থানে পরিনত করবে।

স্মরণ ও স্বীকৃতি (মরণোত্তর): বীর মুক্তিযোদ্ধা আতাউর রহমান রানা মাস্টার ও ডা. অঞ্জন ভট্টাচার্য্য। আন্দোলনের মাধ্যমে আমৃত্যু ভূমিহীনদের খাসজমি বন্দোবস্ত প্রদানে সফল নায়ক আতাউর রহমান রানা মাস্টার। বড়াল রক্ষা আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক ও চিকিৎসায় অসংখ্য মানুষকে সেবা দেয়া ডা. অঞ্জন ভট্টাচার্য্য।

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: