বেঁচে থাকার লড়াইয়ে শিক্ষায় পিছিয়ে চা বাগানের শিশুরা

প্রকাশিত: ২৬ মে ২০২৩, ০৪:৩০ পিএম

চায়ের রাজধানী শ্রীমঙ্গলের মনোরম চা বাগান। বাগানের পাশ দিয়ে হাঁটতে গিয়ে দেখা হয় মায়াবী এক শিশুর। শিশু অন্তরা বললো পেটে তীব্র ক্ষুধার কামড় বিষধর সাপের কামড়ের চেয়েও ভয়ংকর। আসলে কেমন আছে বাংলাদেশের চিরসবুজ চা বাগানের শিশুরা? সেই বিষয়ে সরজমিনে চা বাগানের অধিকার ও মানবাধিকার বঞ্চিত শিশুদের সাথে কথা হয়। সবুজের হাত ছানি চারিদিকে, শিশুরা সেই পরিবেশে বড় হলেও শিক্ষা ও অধিকার হারাচ্ছেন প্রতিনিয়ত। চা বাগানের শিশুরা জড়িয়ে পড়ছেন বাগানের শ্রমের কাজে। কেন চা বাগানের শিশুরা অকালে ঝরে পড়ছে ও অধিকার বঞ্চিত হচ্ছে।

পড়াশোনা শুরুর পর চা-বাগানের শিক্ষার্থীরা আটকে যায় ভাষাগত কারণে। চা-বাগানের শিশুরা নিজ নিজ জাতিগোষ্ঠীর ভাষা পরিবারে শেখে এবং দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহার করে। প্রাথমিক বিদ্যালয় পেরোলেই ঝরে পড়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়তে থাকে। প্রধানত দারিদ্র্যের কারণে বেশির ভাগ ছেলে-মেয়েকেই জীবনসংগ্রামে জড়িয়ে পড়তে হয়ে। এ লড়াই বেঁচে থাকার।

নবীগঞ্জ উপজেলার ঈমাম বাওয়ানী চা বাগানের শ্রমিক নেতা রুপক চাকমা বলেন, দারিদ্র্যসীমার নিচে চা শ্রমিক জনগোষ্ঠীর বসবাস। দুবেলা খাবার জোগাড় করার জন্য রোদ-বৃষ্টিতে ভিজে রুগ্ন শরীর নিয়ে চা-বাগানে কাজ করতে হয় তাঁদের। থাকা-খাওয়ার অনিশ্চয়তার মধ্যে যেখানে প্রাথমিক শিক্ষা অর্জন করতে পারে না ৫০ শতাংশ চা শ্রমিকের সন্তান, সেখানে উচ্চশিক্ষা শুধুই বিলাসিতা বললেই চলে। দেশের ১৬৩টি চা-বাগানে প্রায় ১০ লাখ চা শ্রমিকের মধ্যে শিক্ষার হার খুবই সামান্য। এর পরও চা শ্রমিকদের সন্তানদের মধ্যে অদম্য কিছু শিক্ষার্থীর দেখা মেলে মাঝেমধ্যে। যাঁরা ১০ লাখ চা শ্রমিকের সন্তানদের স্বপ্ন দেখান, বেঁচে থাকার জন্য সংগ্রামের কথা জানান এবং লড়াইয়ের বীজ বুনে দেন।

বাংলাদেশের অর্থনীতিতে চা শিল্পের অবদান অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। মৌলভীবাজার, সিলেট, হবিগঞ্জসহ সারাদেশে প্রায় ১৬৭টি চা বাগান আছে। এখানে প্রায় ১৩ লাখ শ্রমিক তাদের অক্লান্ত পরিশ্রমে চা শিল্পকে বাঁচিয়ে রেখেছে। মালিকরা এখানে সব কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করে, সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার আছে সীমিত প্রবেশাধিকার। ফলে চা শিল্পের সঙ্গে জড়িত শ্রমিক ও তাদের শিশুরা সরকারি-বেসরকারি অধিকাংশ সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে। আধুনিকতা ও তথ্যপ্রযুক্তির এই যুগে চা বাগানের বাইরের বিশ্ব চা শিল্পের সঙ্গে জড়িত শ্রমিকদের অজানা। তারা এখনো মৌলিক ও মানবাধিকারের জন্য সংগ্রাম করে যাচ্ছে।

শৈশবে বেড়ে উঠার উপর নির্ভর করে আগামী। সুন্দর সেই আগামীর জন্য প্রয়োজন নিরাপত্তাও। শিশু যতো সুন্দর পরিবেশে বড় হবে, তার ভবিষ্যৎ ততোই সৌন্দর্য ও সুভাস ছড়াবে। তিক্ত হলেও সত্য, দেশের অনেক শিশুই বেড়ে উঠছে অনিরাপদ পরিবেশে। বঞ্চিত হচ্ছে অধিকার থেকেও। বিষয়টি সমাজের জন্য যেমন ক্ষতিকর তেমনি রাষ্ট্রের আর্থ সামাজিক উন্নয়নের বাধা বলেও মনে করছেন মানবাধিকার কর্মীরা।

স্কুলগামী হতে পারছে না শিশুরা মৌলিক অধিকারের অন্যতম একটি শিক্ষা। করোনার শিক্ষা থেকে ঝড়ে পরেছে অসংখ্য শিশু। শিক্ষা বঞ্চিত বেদে শিশুদের সংখ্যাটাও বেশ বড়। যাযাবর জীবনযাপনের ফলে বেদে জনগোষ্ঠীর শিশুরা পড়াশোনা করতে পারে না। ফলে শিক্ষা অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে তারা। এমনকি দেশের চা বাগান অঞ্চলে শিক্ষার পরিবেশ ও স্কুল না থাকায়ও শিক্ষার মতো মৌলক অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে শিশুরা। এছাড়া চা বাগান গুলোতে এখনও বাল্যবিয়ের প্রবণতা আছে ব্যপক ফলে এসএসসি পাসের আগেই মেয়ের বিয়ে হয়ে যাচ্ছে, পরে স্কুলগামী হতে পারে না তারা।

কিন্তু প্রতিযোগিতামূলক উচ্চশিক্ষায় ঝরে পড়ার হার অনেক বেশি। কারণ স্কুল পেরিয়ে অনেককেই সংসারের হাল ধরতে হয়। ফলে আর পড়াশোনা হয় না। যারা অবশিষ্ট থাকে তারা সরকারি কলেজগুলোতে পড়ে। আর সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে কোটা সুবিধা না পাওয়া, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকে ভালো ফল না করা, আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তিতে প্রস্তুতি নিতে না পারা এই শিক্ষার্থীরা নানাবিধ প্রতিবন্ধকতার শিকার হয়ে তবু থেমে থাকে না।

চা শ্রমিকরা সবচেয়ে বেশি বঞ্চিত হচ্ছেন ভূমির অধিকার থেকে। চা শ্রমিকরা চা-বাগান কর্তৃপক্ষের নির্ধারিত একচালা আধা কাঁচা ঘরে থাকেন। বসবাস অযোগ্য এসব ঘরে গবাদি পশুসহ রান্নার কাজও চালিয়ে নিতে হয়। প্রতিকূল আবহাওয়ায় অবস্থা আরো খারাপ হয়। তবে বাগান কর্তৃপক্ষ বছরে একবার মেরামত সহায়তা দিলেও তা নিতান্তই অপ্রতুল। আর পয়োনিষ্কাশন এবং স্যানিটেশন পরিস্থিতি আরো খারাপ। দেশে ১৬৬টি চা-বাগানের মধ্যে মৌলভীবাজারে ৯২টি, সিলেটে ১৯টি, হবিগঞ্জে ২৩টি চা-বাগান। বিভিন্ন ব্যক্তিমালিকানাধীন চা-বাগান হলেও এসব চা-বাগানের ভূমির মালিক রাষ্ট্র। উৎপাদন আর ব্যবস্থাপনার দিক বিবেচনা করে এসব চা-বাগান বিভিন্ন মেয়াদে ইজারা দেওয়া হয়।

পিছিয়ে পড়া দরিদ্র চা শ্রমিকদের সন্তানদের জীবনমান উন্নয়ন ও স্বাস্থ্যসচেতনতায় সমাজের সবার বিশেষ দৃষ্টি প্রদান করা প্রয়োজন। চা-বাগানের শিক্ষার্থীদের প্রযুক্তিজ্ঞান খুবই কম। তাদের আইটি স্কিল ডেভেলপমেন্ট করা প্রয়োজন, কিন্তু সুযোগের অভাবে হাজারো শিক্ষার্থী পিছিয়ে রয়েছে এ ধরনের উন্নয়নের ক্ষেত্র থেকে। যদি একটা আইসিটি ল্যাব তৈরি করার ব্যবস্থা করা যায়, তাহলে সবাই পারবে বিভিন্ন ধরনের স্কিল ডেভেলপমেন্ট করে নিজের উন্নয়নের পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের ফ্রিল্যান্সিং কাজ করতে। চা-বাগানের ছাত্র-ছাত্রীদের পড়াশোনা ভালোভাবে চালিয়ে যেতে প্রয়োজন একটা সুন্দর মুহূর্তের, যা ছাত্র-ছাত্রীরা একটা পাঠাগারের মাধ্যমে পেতে পারে। বিভিন্ন ধরনের রেফারেন্সের জন্য একাডেমিক বইয়ের প্রয়োজন হয়ে থাকে, যা একটা লাইব্রেরি বা পাঠাগারের মাধ্যমে পেয়ে থাকে ছাত্র-ছাত্রীরা। এই সুবিধা থেকে চা-বাগানের ছাত্র-ছাত্রীরা বঞ্চিত। এই উন্নয়নের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে চা-বাগানে একটা লাইব্রেরি স্থাপন করা জরুরি প্রয়োজন।

চা-বাগানের উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনে সমাজের বিশিষ্ট ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে এগিয়ে আসতে হবে, যাদের মাধ্যমে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর উন্নয়নের মাধ্যমে উন্নয়নশীল দেশের সাধারণ নাগরিক হিসেবে পরিচিতি লাভ করতে পারবে চা-বাগানের মানুষ। বাংলাদেশের প্রচলিত শ্রম আইন অনুযায়ী কোনো চা-বাগানে মোট ২৫ জন শিক্ষার্থী থাকলেই সেই বাগান কর্তৃপক্ষকে সেখানে স্কুল প্রতিষ্ঠা করতে হবে এমন নিয়ম থাকলেও চায়ের রাজধানীখ্যাত জেলা সিলেট বিভাগে বেশির ভাগ চা-বাগানেই মালিকপক্ষ মানছে না সেই আইন। সরকারিভাবে এখানকার চা-বাগানগুলোতে স্কুল তৈরি করা হলেও জনসংখ্যার অনুপাতে তা একেবারেই অপ্রতুল। আবার স্কুলগুলোর শিক্ষার মান নিয়েও রয়েছে নানা প্রশ্ন। মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে পিছিয়ে পড়া চা জনগোষ্ঠীর সন্তানদের শিক্ষার সুযোগ বৃদ্ধির লক্ষ্যে ১৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ১৯টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবকাঠামো উন্নয়ন ও নতুন ভবন নির্মাণ করা হয়।

চা-বাগানের শিশুরাও এ দেশের উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারবে। চা শ্রমিকের পরিবারের আমানত শূন্যের কাছাকাছি। কারণ তাঁরা তাঁদের সন্তানের পড়াশোনা করানোর জন্য ভালো প্রাইমারি স্কুল পাচ্ছেন না। ভালো ভালো স্কুলগুলো শহরের ভেতরে, যাতে পড়াশোনার খরচ অনেক, একজন চা-বাগানের মা-বাবার পক্ষে খরচ চালানো অসম্ভব। তাই এই সুন্দর ভবিষ্যৎ গড়ে তোলার জন্য সমাজের বিত্তশালীদের এগিয়ে আসতে হবে এবং সরকার এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারে।
একজন চা শ্রমিক দৈনিক মজুরি পান মাত্র ১২০ টাকা। এই মজুরি দিয়ে দুবেলা খাবারই জোগাড় হয় না, আর সন্তানের শিক্ষার আয়োজন করা তা প্রায় অসম্ভব।

এ ধরনের পরিস্থিতিতে স্কুলের মাসিক বেতন, বিভিন্ন ফি, বাধ্যতামূলক কোচিং, শিক্ষা উপকরণ ইত্যাদি আয়োজন নিশ্চিত করে বাগানের শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবন চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হয় না। আবার যে অল্পসংখ্যক শিক্ষার্থী স্কুলের সীমা অতিক্রম করে, তারাও আর্থিক অসংগতি, নানা সীমাবদ্ধতার কারণে বেশিদূর এগোতে পারে না। ফলে যুগ যুগ থেকে চা জনগোষ্ঠী সমাজ সভ্যতা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে আছে। তাই চা-বাগানে শিক্ষার ন্যূনতম আয়োজন আজ পর্যন্ত নিশ্চিত হলো না, কেন হলো না এর উত্তর নেই? গত দেড় শ বছরে অনেক কিছু পাল্টালেও চা জনগোষ্ঠীর এই জীবন আজও পাল্টায়নি চা বাগানে অভাবের তাড়নায় ঝুকিঁপূর্ণ শ্রমে যাচ্ছে শিশুরা এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সরকার শিশুশ্রম নিরসনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, ২০২১ সালের মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রম ও ২০২৫ সালের মধ্যে সব ধরনের শিশুশ্রম বন্ধের পরিকল্পনা সরকারের থাকলেও ২০২৩ সালে এর বাস্তবতা একদম ভিন্ন, দেশের জাতীয় শ্রম আইন-২০১৬ (সংশোধিত ২০১৮) অনুযায়ী ১৪ বছরের কম বয়সী শিশুদের কোনো প্রকার কাজে নিযুক্ত করা যাবে না, যদি কেউ শিশুশ্রমিক নিয়োগ করে, তাকে পাঁচ হাজার টাকা অর্থদন্ড করা হবে, ১৪ থেকে ১৮ বছর বয়স পর্যন্ত কিশোরদের হালকা কাজ করার কথা উল্লেখ থাকলেও দেশের চা বাগান গুলোর চিত্র ও বাস্তবতা ভয়াবহ।

সিলেট অঞ্চলে সবগুলো চা বাগানের মধ্যে অপ্রাপ্তবয়স্ক শিশু কিশোরদের কাজে লাগানো হচ্ছে। গ্যারেজ, ওয়ার্কশপের দোকান, মিল কারখানা, সিগারেট বিক্রি, ফুল বিক্রি, ফুটপাতে পানি বিক্রি, বাদাম বিক্রি ও হোটেল রেস্টুরেন্টের কর্মচারী এবং চা বাগানের নতুন কুড়ি তোলার কাজে এখন বেশির ভাগ শিশু কিশোর জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছে। এমনকি বহুতল ভবন নির্মাণের কাজেও ব্যবহার করা হচ্ছে শিশুদের।

মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম বলেন, শিশুদের জন্য আলাদা মন্ত্রণালয় অবশ্যই প্রয়োজন। মন্ত্রণালয় না হলে অন্তত শিশু বিষয়ক অধিদপ্তর হওয়া উচিত। আমরা বিষয়টি নিয়ে অনেকবার কথা বলেছি। অনেকদূর এগিয়েছিল। একটি কমিটিও গঠন করা হয়েছিল সেখানে মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনও ছিল। সেটি স্থগিত হয়ে গেছে এবং এখন এই বিষয় নিয়ে কোনো কথা হচ্ছে না। আলাদা একটা অধিদপ্তর না হওয়ার কারণে শিশুদের বিষয়গুলো চার পাঁচটা মন্ত্রণালয়ে ছড়ানো। শিশুদের কার্যক্রম বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সংযুক্ত, শ্রম মন্ত্রণালয়, সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয় ইত্যাদি। আমি মনে করি নারী ও শিশুদের উন্নয়নের জন্য আলাদা মনিটরিং করা প্রয়োজন ছিল।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সালমা আক্তার বলেন, শিশুদের জন্য আলাদা মন্ত্রণালয় হলে সবচেয়ে বেশি ভালো হয়। এতে শিশুরা তাদের নিরাপত্তা ও ন্যায্য অধিকার পাবে। মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় দুটি এক হওয়াতে নারীরাও পর্যাপ্ত সহযোগিতা পাচ্ছেন না আবার শিশুরাও পাচ্ছে না। আলাদাভাবে শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় হলে অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সমন্বয় করে শিশুদের যাবতীয় অধিকার বাস্তবায়ন সম্ভব। আমি মনে করি দুটো কারণে মন্ত্রণালয় প্রয়োজন প্রথমত নারী ও শিশুকে এক জায়গায় করে দেওয়া হয়েছে। দুটোই কিন্তু বিশাল জনগোষ্ঠী, নারীরাও শিশুরাও। একসঙ্গে যখন বাজেটটা দিয়ে দেওয়া হয় তখন শিশুরা কতটা পাবে, নারীদের জন্য কতটুকু থাকবে সেটা কিন্তু সমন্বয় করা কঠিন হয়।

মাদকের সঙ্গে শিশুর পরিচয় চা বাগান গুলোতে একসঙ্গে জড়ো হয়ে কয়েজন শিশু পলিথিন ফুকঁছে, দেখে মনে হতে পারে তারা খেলা করছে। তবে এটা খেলা নয়! ড্যান্ডি নামক নেশা নিচ্ছে। বিভিন্ন চা বাগান এলাকায় অসংখ্য পথ শিশুর নেশার আরেক জগত ড্যান্ডি। এই নেশায় আসক্ত শিশুদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, জুতা-স্যান্ডেল তৈরি ফোমে ব্যবহৃত সলিশন বা স্যান্ডেল জোড়া লাগানোর কাজে ব্যবহৃত আইকা ও গাম হলো ড্যান্ডি নেশা তৈরির উপকরণ। দীর্ঘক্ষণ নাকে মুখে শ্বাস নিলে মাথা ঝিমঝিম করতে থাকে, নেশা হয়। পেটের ক্ষুধা দূর হয়।

বিষয়টি নিয়ে কথা হয় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহা পরিচালক মোঃ আজিজুল ইসামের সঙ্গে। তিনি বলেন, আমরা শিশুদের এই মাদক নিয়ন্ত্রণে কাজ করি। বিভিন্ন বাগান এলাকার শিশুদের এই মাদকের প্রবণতা আছে। যদিও এটা পুরোপুরি মাদক না, তবে মাদক হিসেবেই আমরা বিবেচনা করি। এই মাদক নিয়ন্ত্রণে সচেতনার লক্ষ্যে প্রচার প্রচারণাও করি।

বাগানের শিশুরা শ্রমের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ার পাশাপাশি অপরাধমূলক কাজের সঙ্গে জড়াচ্ছে। মাদক বহনের মতো অপরাধমূলক কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে শিশুদের। এবছর দেশের ৬টি শিল্প খাতকে ‘শিশুশ্রম মুক্ত’ ঘোষণা করেছে সরকার। খাতগুলো হলো রেশম, ট্যানারি, সিরামিক, গ্যাস, জাহাজ প্রক্রিয়াজাতকরণ, রপ্তানিমুখী চামড়াজাত দ্রব্য ও পাদুকা শিল্প। শিশুশ্রম নিয়ে অনুসন্ধান করে দেখা যায়, শিশুদের ৬ খাতের শ্রম থেকে মুক্ত করলেও শিশুরা শ্রমে জড়িয়ে পড়ছে ভিন্নখাতে। যার প্রধান কারণ দারিদ্র্যতা।সিলেট হবিগঞ্জ ও মৌলভীবাজারের চা বাগান গুলোতে কখনও শিশু শ্রম আইন মানা হচ্ছে না।

চা বাগানে ধর্ষণ, অপহরণ, হত্যা ও আত্মহত্যায় বিপন্ন শিশুদের জীবন এ বছর ২৪ জানুয়ারি মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন ‘শিশু পরিস্থিতি প্রতিবেদন ২০২২’ উপস্থাপন করে। প্রতিবেদনটির তথ্যানুসারে, গত এক বছরে ১২টি ক্ষেত্রে ক্ষতিগ্রস্ত শিশুর সংখ্যা বেড়েছে প্রায় ২৮ শতাংশ। সেগুলো হলো যৌন নির্যাতন, ধর্ষণ, ধর্ষণচেষ্টা, সড়ক দুর্ঘটনা, অন্যান্য দুর্ঘটনা, অপহরণ, হত্যা, নির্যাতন, আত্মহত্যা, অপরাধে সংশ্লিষ্ট শিশু, নিখোঁজ ও পানিতে ডুবে মৃত্যু। এসব ক্ষেত্রে ২০২১ সালে ক্ষতিগ্রস্ত শিশুর সংখ্যা ছিল ২ হাজার ৪২৬। ২০২২ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৩ হাজার ৯৪ অর্থাৎ এক বছরে ক্ষতিগ্রস্ত শিশুর হার বেড়েছে প্রায় ২৮ শতাংশ।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ২০২২ সালে সড়ক দুর্ঘটনার বাইরে ৩১১টি শিশু অন্যান্য দুর্ঘটনার শিকার হয়েছে। এই বছরে ৫৬০ শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে, যা আগের বছরের (২০২১) তুলনায় প্রায় ৩২ শতাংশ কম। ২০২২ সালে ধর্ষণচেষ্টার শিকার হয়েছে ৯৮ শিশু, যা আগের তুলনায় কিছুটা বেশি। এছাড়া ২০২২ সালে ৯৬ শিশু যৌন নির্যাতনের শিকার, ৩০ শিশু অপহরণ, ৬৮ শিশু নির্যাতন, ৩৩ শিশু নিখোঁজ ও ৯টি শিশুর বিভিন্ন অপরাধে সংশ্লিষ্ট হয়েছে।

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: