‘আমরা পরীক্ষা দিমু কি দিয়া, আর চাকুরী করমু কি দিয়া’

প্রকাশিত: ২৯ মে ২০২৩, ০৮:৪৯ পিএম

“বই, খাতাসহ মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার সার্টিফিকেটসহ মূল্যমান কাগজপত্র সব পুড়ে ছাই । আমরা পরীক্ষা দিমু কি দিয়া, আর চাকুরী করমু কি দিয়া,আগামী মাসে মাস্টারি পরীক্ষা দিতে পারমু না কাগজের লাগি” এই বলে হাউ মাউ করে কাঁদছিলেন সিলেট এম.সি কলেজের মাস্টার্স ১ম বর্ষের ছাত্রী জুবলী রাণী দাশ।

নবীগঞ্জ কলেজের দ্বাদশ প্রথম বর্ষে ছাত্রী পিংকি তালুকদার বলেন, আমার জেএসসি,এসএসসি, সব সার্টিফিকেট, বই, পুড়ে গেছে। আমি কি দিয়ে লেখা পড়া করমু আর পুড়ে যাওয়া কাগজ পত্র কি করে তুলমু।

বিবিবিয়ানা উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেনীর ছাত্রী রিথি তালুকদার বলেন, আমার পরিবারের সাখে আমার লেখা পড়ার স্বপ্ন আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। খাতা কলম বই সব শেষ হয়েগেছে। কেউ যদি বই কিনে দেন তাহলে পড়তাম আর নাইলে ঘরে বসে থাকমু।

উল্লেখ্য যে, নবীগঞ্জ উপজেলা বড় ভাকৈর (পশ্চিম) ইউনিয়নের হলিমপুর নয়াহাটি গ্রামে বৃহস্পতিবার (২৫) ভোরে হঠাৎ করে ইন্দ্রজিত দাশের ঘর থেকে বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট থেকে অগ্নিকা-ের সূত্রপাত হয়। ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে  ১২টি পরিবারের বসতঘর এর সাথে পুড়ে ছাই সব কিছু পুড়ে ছাই হয়ে যায়। অগ্নিকান্ডে ১২টি গবাদি পশু, নগদ টাকা, জমির দলিলপত্র, স্কুল কলেজের সার্টিফিকেট, বই, খাতাসহ প্রায় এক হাজার মন ধান, ১৫টি বসত ঘর, ১০টি গোয়ালঘর সহ সবকিছু পুড়ে যায়। বইপত্র ও

সাটিফিকেট পুড়ে গেলে শিক্ষার্থীদের অনাগত ভবিষ্যত নিয়ে চরম হতাশায় শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। তাদের স্বপ্ন ছিল ছেলে-মেয়েদের উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করে সরকারী কোন চাকুরী নিবে। এখন সব স্বপ্ন পুড়ে ছাই। কৃষক পরিবার গুলো এখন পথে বসেছে।৬দিন ধরে পরিবার গুলো খোলা আকাশের নীচে বসবাস করছে। তারা এখনো কোন ঘর নির্মান করতে পারে নাই। নিঃস্ব হয়েগেছে ১২ পরিবারের ৫২ জন নারী পুরুষ। গত বৃহস্পতিবার (২৫ মে) ভোর রাতে উপজেলার বড় ভাকৈর পশ্চিম ইউনিয়নের হলিমপুর নয়াহাটি এলাকায় এ অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে।

মুহুর্তের মধ্যে আগুন আশপাশের বাড়িঘরে ছড়িয়ে পড়ে। আগুন আতংকে শুধু পড়নের কাপড় ব্যতিত আর কোন কিছুই বের করতে পারেন নি তারা। আগুলের লিলিহাল শিখা চতুর দিকে ছড়িয়ে পড়লে ঘুমন্ত লোকজন ছুটে এসে আগুন নিয়ন্ত্রনের প্রাণপন চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়। পরে ফায়ার সার্ভিসের লোকজন গিয়ে কয়েক ঘন্টা চেষ্টার পর আগুন নিয়ন্ত্রনে আনেন। অগ্নিকান্ডে জগৎজোতি দাশ, জগদীশ চন্দ্র দাশ,

রনবির চন্দ্র দাশ, রতন চন্দ্র দাশ, নিগন দাশ, লিটন কুমার দাশ, ইন্দ্রোমনি দাশ, কলাবাত দাশ, সন্তোশ দাশ, প্রেমতোষ দাশ, কাজল দাশের মালিকানাধীন বসতঘরসহ ১২টি ঘর সম্পুর্ণ পুড়ে ছাই হয়ে যায়। জগদীশ চন্দ্র দাশ বলেন, ঘটনার ৬ দিন ধরে
ক্ষতিগ্রস্থ পরিবার গুলো তাদের পরিবার পরিজন নিয়ে প্রতিবেশী আত্মীয় স্বজনদের বাড়িতে আশ্রয় নেন। অন্যের বাড়িতে থাকা যে, কি কষ্টের তা বলা মুশকিল। অনেকটা মানবেতর জীবন যাপন করছেন তারা। জগদীশ তালুকদারের মেয়ে পিংকি তালুকদার বলেন, আমাদের বাসস্থানের ব্যবস্থা করার জন্য সরকারের প্রতি দাবী জানাই। তাদের সার্টিফিকেট, বই, পুড়ে যাওয়ায় ভবিষ্যত নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। বর্তমানে প্রতিবেশী ও আত্বীয় স্বজনের বাড়িতে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। খবর পেয়ে প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ ঘটনাস্থল গিয়ে পরিদর্শনসহ ক্ষতিগ্রস্থদের প্রতি সমবেদনা জানান ।

নবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইমরান শাহরিয়ার বলেন, প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রতিটি পরিবারকে দুই বান্ডিল টেউটিন,নগদ ৬ হাজার টাকা, ৩টি কম্বল ও ৩ কেজি করে চাল দেয়া হয়েছে এবং স্থানীয় এমপির পক্ষ থেকে প্রতিটি পরিবারকে ৩ হাজার টাকা,দুই বান্ডিল টেউটিন, তোশক বালিশ ও ৫টি করে লুঙ্গি শাড়ি দেয়া হয়েছে। আরও বরাদ্ধের জন্য উপরে চিঠি দেয়া হয়েছে।

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: