ফেনীতে বন্ধ হচ্ছে একের পর এক বেকারি কারখানা। উৎপাদন সামগ্রীর মূল্য বৃদ্ধি, অধিক ভ্যাট-ট্যাক্সের প্রভাবে মালিকানা পরিবর্তন,পেশা পরিবর্তন সহ একাধিক কারন দেখিয়ে এ কারখানা বন্ধ করছেন অনেকে। আবার কারিগর সংকটে ও কেউ কেউ ছেড়ে দিচ্ছেন প্রতিষ্ঠান। তবে বেকারি কারখানা অধিকাংশ মালিকরা জানান, উৎপাদন সামগ্রীর দাম বৃদ্ধির প্রভাবেই কারখানা ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন অনেকে।
জেলা কারখানা পরিদর্শন বিভাগের তথ্য মতে, ফেনীতে অনুমোধিত ক্ষুদ্র ও মাঝারি বেকারির সংখ্যা ৪৫ টি হলেও সারা জেলায় ছোট বড় বৃহৎ আকারে প্রায় ২০০ বেকারি রয়েছে। প্রতিদিন বেকারি কারখানায় সংখ্যা বেধে লাখ হতে হাজার টাকা বিক্রি হত। আবার উৎপাদন ও হত অনেক। গেল বছর হতে অর্থনৈতিক ধাক্কায় একেবারেই মাঝা ভাঙ্গার মতই পরিস্থিতি সৃষ্টি হয় অনেকের।যেমন ডিম,তেল,ঘি,ময়দা, ক্রিম সহ সংলিষ্ট দ্রব্যের দাম হু হু করে বেড়েছে। খোলা ময়দা একসময় ৩৫ টাকা করে বিক্রি হলেও এখন তার দাম ৭৩ টাকা। ফলে উৎপাদন ব্যয় বেড়েছে ১০৬ শতাংশ। আবার, তেলের দাম বেড়েছে দ্বিগুণ। এভাবে বেড়েছে প্রতিটি পন্যের দাম।কমেনি কোন উৎপাদন পন্য। এতে ব্যবসাসম্প্রসারণ বা পরিচালনা করা পুরোই শূন্যেন কোটায় লাভ ঠেকেছে অনেকের।
গ্রামীণ পর্যায়ে গড়ে উঠা এ সকল প্রতিষ্ঠানের নেই কোন সংগঠন। ফলে এদের পক্ষে দাঁড়ানো বা কথা বলার মতো তেমন কোন প্রতিষ্ঠান নাই। এতে এ লোকসানের কথা তারা জনসম্মুখে সম্মিলিত ভাবে বলতেও পারচেন না।
বন্ধকৃত বেকারি সমূহের নাম হল: সোনাগাজি বেকার্স, তাকিয়া বাজার। আলাওল মাতৃভান্ডার, ফাজিলপুর, সদর। সোনালি মাতৃছায়া, ফরহাদ নগর, সদর। হাসান বেকারি (আংশিক বন্ধ) ভোরবাজার। আনন্দপুর বেকার্স, ফুলগাজি সহ প্রমুখ।
ফেনীতে বেকারি ব্যবসার সঙ্গে জড়িতদের কোনো সংগঠন না থাকায় দায়িত্বশীল কারো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে খাতসংশ্লিষ্ট উদ্যোক্তারা বলেন, ফেনীতে টানা লোকসানের ভার সইতে না পেরে এরই মধ্যে নিবন্ধিত ও স্বনামধন্য কয়েকটি বেকারি বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ফেনী শহরের শান্তি কোম্পানি সড়কের একরামুল হকের মালিকানাধীন গ্র্যান্ড ফুড, ফেনী-নোয়াখালী আঞ্চলিক সড়কের তেমুহনীতে নুরুল হকের মালিকানাধীন চিটাগাং বেকারি, শহরের ছাড়িপুর এলাকার পোড়া মসজিদের দক্ষিণ পাশে চৌ-রাস্তার মোড়সংলগ্ন আশরাব মিয়ার গ্রামীণ ফুড, পুলিশ কোয়ার্টার এলাকার আমবালা বেকারি। এছাড়া শহরের বাইরে গ্রামেগঞ্জে ও উপজেলা শহরে গড়ে ওঠা অন্তত শতাধিক বেকারির উৎপাদন বন্ধ করে মালিক-শ্রমিকরা পেশা পাল্টাতে বাধ্য হয়েছেন।
ফেনী সদর উপজেলার বৃহত্তর ও প্রাচীন প্রতিষ্ঠান লেমুয়া বেকারির পরিচালক মামুন বলেন' আটা-ময়দার দাম বৃদ্ধির ফলে আমরা একসময় পাউরুটি বিক্রি করতাম ২৫ টাকা।এরপর ৩০ টাকা দিয়ে কিছুদিন চালিয়েছি।ডেকোরেশন খরচ বৃদ্ধির প্রভাবে গ্রাহকের চাহিদা মোতাবেক আবার ৫ টাকা বৃদ্ধি করি।বর্তমানে ৪০ টাকা ধরে বিক্রি করছি।সাইজে ২৫ টাকার চাইতেও বেশ ছোট এ পাউরুটি। এরপরও আমরা পোষাতে পারচি না।
ময়দার দাম বৃদ্ধির প্রভাবে বেড়েছে রুটি,পরটার দাম। ৫ টাকার রুটি এখন ১০ টাকা।৭ টাকার পরটা এখন ১০ টাকা ধরে বিক্রি চলচে। এছাড়াও কেক, বিস্কুট সব পন্যে বেড়েছে ১৫-৩০ টাকা। যাহ মানুষের ক্রয়ক্ষমতাকে রীতিমতো প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।
এ বিষয়ে ফেনী চেম্বার অব কমার্স সভাপতি আইনুল কবির শামীম জানান' বেকারী প্রতিষ্ঠান সমূহে প্রথম ধাক্কা লেগেছিল করোনাকালীন সময়ে। তাই এসব প্রতিষ্ঠান কে ক্ষুদ্র ও মাঝারি ধরনের প্রণোদনা প্রদান করা দরকার। ফলে তারা এই প্রণোদনা পেলে নিজেদের প্রতিষ্ঠান কে দাঁড় করাতে সক্ষম হবে। পাশাপাশি দ্রব্য মূল্যের ক্রয় ক্ষমতা স্বাভাবিক রাখতে হবে।
শাকিল/সাএ
সর্বশেষ খবর