সময় যতটা এগিয়ে যাচ্ছে, মানুষ ততই যন্ত্রের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে। পিছিয়ে পরিনি আমরা বাঙালিরাও। পশ্চিমা সংস্কৃতিকে লালন করতে গিয়ে ভুলতে বসেছি নিজেদের ঐতিহ্য, ইতিহাস, সংস্কৃতিকে। পহেলা বৈশাখে পান্তা ইলিশ আর মঙ্গল শোভাযাত্রা করে নিজেদের বাঙালি পরিচয় দেয়ার মধ্যে কোন গর্ব খুঁজে পাইনি। বরং এটাকে মনে হয়েছে সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের অপমান।
বাঙালি ঐতিহ্য/সংস্কৃতি বলতে আমরা কি বুঝি?
বাঙ্গালি সংস্কৃতি বলতে সাধারণত বোঝানো হয় বিশেষ সমাজের সাহিত্য, সংগীত, ললিত কলা, ক্রীড়া, মানবিকতা, জ্ঞানের উৎকর্ষ এবং বাংলার শান্তি ও সৌন্দর্যের সমাহার। চর্যাপদকে বাংলার নিদর্শন হিসেবে গণ্য করা হলে বাংলা সাহিত্যের ঐশ্বর্যমন্ডিত ঐতিহ্য প্রায় হাজার বছরের।
বাংলা সংস্কৃতির মধ্যে আরও আছে বাউল গান, ভাটিয়ালি, ভাওয়াইয়া, কবিগান, জারিগান ইত্যাদি৷ সাথে বাংলার সমৃদ্ধ ও ঐতিহ্য ভান্ডারে রয়েছে নকশিকাঁথা, নকশি পাখা, পুতুল নাচ, শখের হাঁড়ি, শীতলপাটি, বাঁশ, বেত, কাঁসা ও পিতলের তৈরি বিভিন্ন সামগ্রীসহ আলপনা দেওয়ার প্রচলন।
বাঙ্গালীর অনেক ঐতিহ্যবাহী খাবার সম্পর্কেও আমাদের অনেকের সুস্পষ্ট ধারণা নেই। যেমন বালিশ মিষ্টি, বিবিখানা পিঠা, হিল জুস, তিলের খাঁজা, খই, সাতকড়ার আচার, ডোমারের সন্দেশ, কাঁচাগোল্লা, পানিতোয়াসহ আমাদের অজানা অনেক খাবার রয়েছে যা বাঙ্গালীর ঐতিহ্যেরই অংশ।
নগরায়ন ও পশ্চিমা সংস্কৃতির প্রভাবে বাঙ্গালির এইসব ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি বর্তমান প্রজন্মের কাছে সুপরিচিত নয়। এমনকি পশ্চিমা সংস্কৃতির প্রাদুর্ভাব এর কারণে বাঙ্গালীর বিভিন্ন অঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী নাচও (যেমন- জারি, ঝুমুর নৃত্য, ধুপ নৃত্য, বল নৃত্য) বিলুপ্তির পথে। একে একে হারিয়ে যাচ্ছে আমাদের সকল ঐতিহ্য।
কেউ কেউ চেষ্টা করছে ঐতিহ্য বাঁচাতে!
বাংলা সংস্কৃতি ও ইতিহাসকে ভুলে না যাওয়া এবং নতুন প্রজন্মের কাছে তার আপন সংস্কৃতিকে পরিচয় করিয়ে দেয়ার জন্য কালচারাল ক্লাসিসিস্ট এর উদ্যোগে শুরু হচ্ছে 'বাংলার প্রাঙ্গন'। যা কিনা এক নতুন সূচনা।
মূলত, বাঙালি যেন তার ভুলতে বসা ঐতিহ্যকে যেন একদমই বিলীন করে না ফেলে সেদিকে খেয়াল রেখেই তাদের এ উদ্যোগ। সাথে তরুণ প্রজন্ম যেন তার ঐতিহ্যকে সঠিকভাবে চিনতে পারে সেদিকেও খেয়াল রাখবে 'বাংলার প্রাঙ্গন'। পাশাপাশি পুরো বিশ্বের সাথে বাংলা সংস্কৃতির পরিচয় করিয়ে দিতে চায় তারা। যেখানে চর্চা হবে বাঙালিয়ানার, বাঙালির ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির।
শাকিল/সাএ
সর্বশেষ খবর