পাঁচ বছরের ছেলে ও নয় বছরের মেয়েকে নিয়ে রাজধানীর ধোলাইখালে গরুর হাটে এসেছিলেন মো. নুরুজ্জামান (৩৮) নামের এক যুবক। এক সময় ভালো বেতনে চাকরি করলেও করোনাকালে সেই চাকরিটা হারিয়েছেন। বাধ্য হয়েই এখন একটা দোকানের সেলসম্যান হিসেবে কাজ করেন। বেতন যা পান সেটা দিয়ে সংসার চালানো দুর্বিষহ হয়ে উঠে।
সোমবার (২৬ জুন) একটি সংবাদমাধ্যমের সাথে কথা বলেন নুরুজ্জামান। গরু কিনতে এসেছেন সাংবাদিকের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি জবাব দিলেন, ‘গরু কেনার সামর্থ্য নেই। এদিকে বাচ্চারা বায়না ধরেছে হাটে আসবে গরু দেখবে। তাই উপায় না দেখে বাচ্চাদের গরু দেখাতে হাটে নিয়ে আসছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘গরু বাজারে আসলে মানুষের গরু কেনা দেখলে নিজের কাছে খারাপ লাগে। গতবার মেয়েটা বলেই উঠছে, আব্বু সবাই গরু কিনতেছে আমাদের গরু কিনবা না? মেয়ের সেই প্রশ্নের জবাব দিতে পারি নাই। বাড়িওয়ালা কোরবানির গোশত পাঠাইছে। সেটা দিয়ে ওর মা কোনও রকম ওরে বুঝিয়েছে। এবার হাটে আসতে ইচ্ছে করছিলো না। ভাবলাম লক্ষ্মীবাজার থেকে ওদের নতুন জামাকাপড় কিনে দেই। খুশি হবে। সেদিকে যাওয়ার পথে ওরা হাটে গরু দেখবে জেদ করতেছিল। তাই বাধ্য হয়ে হাটে নিয়ে আসছি।’
নুরুজ্জামানের মতো আরও অনেকেই পরিবার নিয়ে হাটে এসেছেন গরু দেখতে। তাদের মধ্যে একজন শাহাবুদ্দিন আহমেদ (৪৬)। দীর্ঘদিন ধরে তিনি রাজধানীর একটি বেসরকারি স্কুলের দেখাশোনা করছেন। তিনি বলেন, ‘আমি যা আয় করি তা বেহিসেবি খরচ করার সুযোগ নাই। বাড়ি ভাড়া আর নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনতেই দম ফুরিয়ে যায়। এক কেজি গরুর মাংস কেনার কথা দশ বার ভাবতে হয়। সেখানে কোরবানি কীভাবে দেবো? হাটে এসেছি স্ত্রী আর কন্যাকে গরু দেখাতে। প্রথম ভেবেছিলাম আসবো না। পরে মেয়ের মা বলল, কোরবানি দিতে না পারি গরু দেখতে তো সমস্যা নাই। তাই বিকেল বেলা হাঁটতে হাঁটতে হাটে আসলাম।’
এদিকে ধীরে ধীরে জমে উঠেছে পুরান ঢাকার গরুর হাট গুলো। শেষ মুহূর্তে গরু কেনায় ব্যস্ত সময় পার করছেন পুরান ঢাকার বাসিন্দারা। পুরান ঢাকার স্থানীয় বাসিন্দা হাজী মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন বলেন, গরু বাজারে ভিড় আছে। হাতে আরও দুই দিন সময় আছে। গতকাল হাটে আসছি গরু কিনতে। মন মতো গরু পাইনি। আমি প্রতি বার তিন-চারটা গরু কোরবানি দেই। এবারও দেবো। আমার বাসার ভাড়াটিয়া, আশেপাশের সবাইরে নিয়া আমি ঈদ উদযাপন করি। সবার তো গরু কেনার সামর্থ্য নাই। তো আমি আমার সামর্থ্য অনুযায়ী যে কয়টা পারি গরু কোরবানি দেই। এজন্য দেখে দেখে গরু কিনছি।’
আশরাফুল/সা.এ.
সর্বশেষ খবর