• ঢাকা
  • ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪
  • শেষ আপডেট ১২ মিনিট পূর্বে
মোঃ শাহিন আলম
কু.বি. প্রতিনিধি
প্রকাশিত : ৩০ জুলাই, ২০২৩, ০৪:৩৫ দুপুর
bd24live style=

ছুটে চলা এক দিগন্তের পথে

ছবি: প্রতিনিধি

ছুটি মানেই ঘোরাঘুরি। আর তা যদি জলপ্রপাত, পাহাড়, সমুদ্রতটে হয়, তাহলে তো কথা নাই। এমন মোক্ষম সুযোগ কেউ হাত ছাড়া করবে না। আমিও তার বিপরীত না। ছুটির দিন মানে আমাদের জন্য ভ্রমণের দিন। ঠিক তেমনি এই ছুটির দিনে আমরা চলে গিয়েছিলাম মহামায়া লেক, নাপিত্তাছড়া ঝর্ণা আর গুলিয়াখালি সি-বীচের বুকে। ঘড়ির কাঁটা ভোর ৪ টা ছুঁই ছুঁই। চোখের ঘুম যেন আজকে কেউ কেড়ে নিয়ে দিয়ে গেল। সূর্য মামা এখনও নিজের অবস্থান জানান দেয় নি। আমরা ছুটে চললাম ঢাকা-চট্রগ্রাম হাইওয়ের দিকে। অনেকের এখনও ঘুমের রেশ কাটে নাই। আমরা চলতে লাগলাম এক দিগন্তের পথ ধরে শান্তির খোঁজে।

গাড়ি চলতে চলতে থেমে গেল এক লেকের পাশে এসে। সবাই গাড়ি থেমে নেমে যাওয়ার জন্য তাড়াহুড়ো করছে। গাড়ি থেমে নামার পর দেখলাম চারদিক এখনও নীরব। পাশে ছুটে চলছে ঢাকাগামী কর্ণফুলি ট্রেন। এই এলাকার মানুষরা নিজেদের কাজে যাওয়ার জন্য ব্যস্ত, কেউ নৌকা নিয়ে যাচ্ছে পাহাড়ে, আর কেউ দোকানে ওলট খুলছে এবং অনেকে চলছে নিজের গন্তব্যে দিকে।

এরই মাঝে জানতে পারলাম, আমাদের এখন অবস্থান মহামায়া লেকে। সকাল সকাল প্রকৃতির নিচে নাস্তা করা এটা তো কল্পনার বাহিরে ছিল। লেকের পাড়ে গিয়ে দেখলাম শুধু পানি আর পানি। পানির মাঝে মাঝে দাঁড়িয়ে আছে পাহাড়। সেই পাহাড়ে মানুষ যাচ্ছে বিভিন্ন কাজে। আমরা দুইটি নৌকা নিলাম এই লেকের আশেপাশে দেখার জন্য, কি প্রকৃতির সৌন্দর্য সেটা না ঘুরলে বুঝা যায় না। তাই কবি জীবনানন্দ দাশ এই জন্য বলেছেন, “আমি বাংলার মুখ দেখিয়েছি, তাই আর পৃথিবীর রূপ খুঁজিতে যায় না আর”। প্রায় অনেকক্ষণ ঘুরার পর ফিরে এলাম পাড়ে। এখন আমাদের গন্তব্য এক গহিন পাহাড়ের দিকে।

বাংলাদেশের চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ের পাহাড়ের দিকে চলছে আমাদের গাড়ি। আঁকাবাঁকা রাস্তায় দেখা যায় বিভিন্ন পেশার মানুষ। কেউ গরু নিয়ে যাচ্ছে মাঠে, কেউ কাঁচি ও দা নিয়ে যাচ্ছে পাহাড়ে গাছ কাঁটতে। মাঝেমধ্যে দেখা যায় কিছু বৃদ্ধ লোক কাঁধে গাছ নিয়ে নামছেন গহিন পাহাড় থেকে। ছোট ছোট উপজাতির ছেলে মেয়েরা স্কুলের ব্যাগ এক পাশে রেখে খেলছেন ঝর্ণার থেকে আসা পানিতে। কেউবা মানুষ দেখলে খাবার খোঁজে কেউবা দেখলে কথা বলে।

আমরা গহিন পথ ধরেই চলতে লাগলাম, মাঝে মধ্যে অনেক বাঁধা বিপত্তিও দেখা যায়। কিন্তু কোনো বাঁধা কাউকে থেমে দিতে পারছে না। পাহাড়ের আঁকাবাঁকা পথ এবং প্রচণ্ড গরম আমাদের কিছুটা ক্লান্ত করছে। তবে যত যাচ্ছি প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য দেখে মন জুড়িয়ে যাচ্ছে। বড় বড় পাথর আর পানি তো আছেই। সঙ্গে আছে পাহাড়ের বিশাল বিশাল খাদ। ভয়ংকর কিন্তু অসম্ভব সুন্দর। দুই পাশে পাহাড় আর মাঝখানে সরু রাস্তা। রাস্তা বলতে এটা সহজ রাস্তা নয়। কখনও বড় বড় পাথর পাড়ি দিতে হবে, কখনও ছোট ছোট পানির গর্ত পাড়ি দিতে হবে আবার কখনও উঠতে হবে পাহাড়ে।

এছাড়া, বিভিন্ন প্রজাতির পাখির দেখা মিলবে এ পথে যাওয়ার সময়। তবে ঝরনায় যাওয়ার এ রাস্তাটির প্রতিটি অংশই অদ্ভুত রকমের। এই রাস্তায় মাঝে মাঝে দেখা মিলবে ভয়ংকর অন্ধকার। একলা এগিয়ে যাওয়ার অসম্ভব। কিন্তু আমাদের সামনে ছিলেন শামীম স্যার। তার নেতৃত্ব এগিয়ে চললাম এই গহিন রাস্তায়। তিনি সকল বাঁধা পেরিয়ে সবার আগে চলে যাচ্ছেন। তিনি খুবই উত্তেজিত এই ঝর্ণা দেখার জন্য। ওনার পিছনে আমরা ছিলাম কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আগত একঝাঁক তরুণ ক্যাডেটরা। যারা দেশে কান্তি লগ্ন সময়ে কাজ করছেন। যারা দেশের স্বার্থে বিলিয়ে দিচ্ছেন নিজের সময় ও পরিশ্রম। পরিশেষে, দেখা মিললো সেই কাঙ্ক্ষিত ঝর্ণা। এখানে মূলত তিনটি রয়েছে ঝর্ণা। এগুলো হলো কুপিকাটাকুম, মিঠাছড়ি এবং বান্দরকুম বা বান্দরিছড়া। আর ঝর্ণাগুলোতে যাওয়ার যে ঝিরিপথ রয়েছে সেটাকে নাপিত্তাছড়া ট্রেইল বলে।

প্রায় এক ঘণ্টা খানিক হাঁটার পরে পরিশ্রম সার্থক হলো, এখানে নিজেদের আনন্দে মেতে উঠছে প্রিয় ক্যাডেটরা। সাথে রয়েছেন আমাদের প্লাটুনের সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট বিএনসিসিও অধ্যাপক ড. মো. শামীমুল ইসলাম। এখানের সময়গুলো কীভাবে শেষ হয়ে যায় তা কেউ টের পায়নি। এরপর চলতে লাগলাম আরেক গন্তব্যের ছুটে। তবে পথে দেখা হলো কিছু ছোট শিশুর সাথে। যারা স্কুল পালিয়ে ঝর্ণার পানিতে গোসল করছে। তারা নিজেকে ইচ্ছেমতো ভিজিয়ে নিচ্ছে। আমাদের দেখে তারা চিৎকার করতে লাগল। এই দৃশ্য দেখে ফিরে পেলাম আমার শিশুকাল। তবে এখানে তারা আবদ্ধ হয়ে বসবাস করলেও তাদের রয়েছে হাজারো সীমাবদ্ধতা। যা পাওয়া তাদের জন্য কল্পনার বাহিরে। 
 
এখন আমাদের উদ্দেশ্য গুলিয়াখালি সি-বীচ। বিকাল ৪ টায় পৌঁছে গেলাম। কিন্তু আমরা যেতে না যেতে শুরু হলো প্রকৃতির কান্না। হঠাৎ এক বৃষ্টি এসে সব কিছু নীরব করে দিল। সবাই ছুটে চলছে নিজ নিজ আশ্রয়স্থলে। সবাই এদিক সেদিক দৌড়াদৌড়ি করছেন। এমন সময় এক বাবা তার সন্তানকে নিয়ে বৃষ্টিতে দৌড়াদৌড়ি করছেন আর খেলছেন। পাশে কয়েকজন ছেলে-মেয়ে সাগরে সাঁতার কাটছে। আরও কয়েকজন এই বৃষ্টিতে দোলনায় দুলছে। একঝাকঁ তরুণ ছেলেরা সাগর পাড়ে ফুটবল খেলছেন। আর এদিকে এক বাবা দোকান সামলাচ্ছে, তার ছেলে চা বিক্রি করছে। তাদের এই সংগ্রাম যেন প্রকৃতির বিরুদ্ধে। চারপাশ যেন খালি মনে হচ্ছে। 
 
এরপর এই বৃষ্টি বাদলের দিনে চা খাওয়াতো মিস করা যায় না। তখন আমরা চা পান করলাম। কিন্তু আমাদের শামীম স্যার ছাতা নিয়ে ঘুরছেন এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে। সমুদ্র পাড়ে সবুজ গালিচা বিছানো এক বিস্ময়কর স্থান গুলিয়াখালী সী-বিচ। চারপাশে বিস্তৃত জলরাশি। অন্যদিকে কেওড়া বন। কেওড়াা বনের মাঝ দিয়ে বয়ে যাওয়া ছোট ছোট খালের চারদিকে কেওড়া গাছের শ্বাসম‚ল বেড়িয়ে আছে। এই কেওড়া বন সমুদ্রের অনেকটা গভীর পর্যন্ত চলে গেছে। দ‚র থেকে দেখলে মনে হবে, সৈকত জুড়ে সবুজ গালিচা বিছানো। সমুদ্র পাড়ের এই মনোরম সৌন্দর্য বোধ হয় অন্য কোথায় দেখতে পাবেন না!

এই দীর্ঘ ভ্রমণে সবচেয়ে বেশি মন কেড়ে নিয়েছে গুলিয়াখালি সী-বিচের দৃশ্যটি। সাগর পাড়ে দাঁড়িয়ে রয়েছি জোয়ারের অপেক্ষায়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তার দেখা হলো না। আমরা ফিরে এলাম নিজেদের বাসস্থলে। এভাবে অটুট থাকবে আমাদের সম্পর্ক। এই যেন এক অচেনা শহর থেকে ফিরে এলাম।

সালাউদ্দিন/সাএ

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
পাঠকের মন্তব্য:

BD24LIVE.COM
bd24live.com is not only a online news portal. We are a family and work together for giving the better news around the world. We are here to give a nice and colorful media for Bangladesh and for the world. We are always going fast and get the live news from every each corner of the country. What ever the news we reached there and with our correspondents go there who are worked for bd24live.com.
BD24Live.com © ২০২০ | নিবন্ধন নং- ৩২
Developed by | EMPERORSOFT
এডিটর ইন চিফ: আমিরুল ইসলাম আসাদ
বাড়ি#৩৫/১০, রোড#১১, শেখেরটেক, ঢাকা ১২০৭
ই-মেইলঃ [email protected]
ফোনঃ (০২) ৫৮১৫৭৭৪৪
নিউজ রুমঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯১
মফস্বল ডেস্কঃ ০১৫৫২৫৯২৫০২
বার্তা প্রধানঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯০
ইমেইলঃ [email protected]