চোখ ধাঁধানো আকাশচুম্বী অট্টালিকা আর স্বপ্নের খোঁজে ইউরোপ বা মধ্যপ্রাচ্যে ছুটে যান বহু তরুণ। ভাগ্যবদলের আশায় ভূ-মধ্যসাগরে ঝূঁকিপূর্ণ ভ্রমণও যেনো মেনে নিতে রাজি। যদিও শেষ পর্যন্ত বেশিরভাগকেই সবচেয়ে করুণ পরিণতি মেনে নিতে হয়। এভাবে ভাগ্য বদলাতে গিয়ে জীবনটাকেই ঝুঁকিতে ফেলেছেন শরীয়তপুরের অনেক যুবক। বাংলাদেশ থেকে এসে দুবাই কিংবা লিবিয়ায় পাচারকারীদের কাছে আটকা পড়েছেন অনেকে। বিভিন্ন সময়ে নির্যাতন আর মুক্তিপণে নাজেহাল সবাই।
এই যেমন শরীয়তপুরের জাকির সমুদ্রপথ পাড়ি দিয়ে প্রবেশ করেছিলেন লিবিয়ায়। কিন্তু আটকা পড়েন পাচারকারীদের ফাঁদে। কয়েকমাস ধরে খোঁজ নেই তার। এখন ছেলের সন্ধানে পাগল প্রায় মা। একই পরিস্থিতির শিকার ধানকাঠির আলি আকবরও। দালাল ধরে লিবিয়ায় পৌঁছানোর দুমাসের মাথায় আটকা পড়েন মাফিয়াদের হাতে। এরপর থেকে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন।
অনুসন্ধানে মিলেছে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত শরীয়তপুরের তিন উপজেলায় সাগরপথে বিদেশযাত্রায় নিখোঁজ হয়েছেন অন্তত ৯ জন। যারা বেঁচেছেন তাদের মুখেও ভয়ঙ্কর সব গল্প।
লিবিয়া থেকে ভুক্তভোগী রাজন জানান, লিবিয়া যাওয়ার ১৭ দিন পর আমাদের প্রায় চার ঘণ্টা হাঁটার পথ পাড়ি দিতে হয়েছে। তারপর সেখান থেকে ৫ মিটারের একটা বোটে ওঠানো হয় যা পাঁচ কিলোমিটার যাওয়ার পর ডুবে যায়। ওইখান থেকে দাললরা আমাদের মাফিয়াদের কাছে বিক্রি করে দেয়। এরপর ২১দিন পর পাঁচ লাখ টাকা মুক্তিপণ দিয়ে ওদের হাত থেকে মুক্তি পাই।
এদিকে মানবপাচার বন্ধে কারিগরি প্রশিক্ষণ নিয়ে বৈধ পথে বিদেশ যাত্রার পরামর্শ দিচ্ছেন স্থানীয় প্রশাসন ও বিশ্লেষকরা।
শরীয়তপুর কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের অধ্যক্ষ জাহাঙ্গীর আখতার জানান, প্রশিক্ষণ নিয়ে আমাদের রিকুটিং এজেন্সীর মাধ্যমে বৈধ পথে বিদেশ গেলে তারা অনেকগুলো সুবিধা পায়।
শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক মো. নিজাম উদ্দিন আহমেদ জানান, ভুক্তভোগীদের পরিবারগুলো যদি আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাহলে তাদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী আমরা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে আমাদের এ্যাম্বাসিগুলোতে যোগাযোগ করতে পারি।
জানা গেছে, এসব ঘটনায় বেশিরভাগ স্বজনই দালালদের ভয়ে নিখোঁজদের খোঁজে যান না থানায়।
সালাউদ্দিন/সাএ
সর্বশেষ খবর
প্রবাসে বাংলা এর সর্বশেষ খবর