• ঢাকা
  • ঢাকা, শুক্রবার, ০৯ মে, ২০২৫
  • শেষ আপডেট ৪৭ মিনিট পূর্বে
প্রকাশিত : ০৪ নভেম্বর, ২০২৩, ০৭:৫৬ বিকাল

ডোম পেশাজীবী মানুষদের নিয়ে সবারই বেশ কৌতূহল, অনেকেই দেখেন ভয়ের চোখে

শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গ। ছবি : শাহারিয়ার কাবির

শাহরিয়ার কবিরঃ লাশকাটা ঘর এবং লাশ কাটেন যারা তাদের নিয়ে সবারই বেশ কৌতূহল রয়েছে। এ পেশায় যারা নিয়োজিত তাদেরকে সমাজের অনেকেই দেখেন ভয়ের চোখে। এই পেশার মানুষদের পেশাগত নাম ডোম। রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গ। জনসাধারণের কাছে  রহস্যময় ও আতঙ্কে ঘেরা একটি কক্ষ। বাইরে কতগুলো কাঠের কফিন। ভিতরে সারি সারি মৃতদেহের মিছিল। পাশেই ফ্রিজযুক্ত একটি কেবিন। শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গের ভেতরের চিত্র এটি।

এখানেই ডোমের পেশায় জীবন কাটিয়ে দিচ্ছেন চিত্রকুমার যতন। বয়সের ছোঁয়া লেগেছে শরীরে। হালকা গড়নের শ্যাম বর্ণ দেহ, হাসি-খুশি মুখ। বংশপরম্পরায় এই পেশায় এসেছেন তিনি। শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এখন তিনিই একমাত্র সরকারি নিয়োগ প্রাপ্ত ডোম।

তার মতে, সমাজের প্রচলিত চিন্তাভাবনার কাঠামোতে চিত্রকুমারদের বেঁচে থাকতে হয় অনেকটা যুদ্ধ করেই।ডোম পেশার কারণেই সমাজ কিছুটা এড়িয়ে চলতে চায় তাদেরকে। তাদের পরিবার পরিজনদের স্বীকার হতে হয় নানান বিড়াম্বনার।

চিত্তরঞ্জন কুমার যতন

এ বিষয়ে তার সাথে আলাপ কালে তিনি বলেন, “চাকরি শুরু ১৯৯২ সাল থেকে। আর আমি এই মর্গের দায়িত্ব পাই ২০১৭ সালে। ডোম পেশায় চাকরীর আমার ৩০ বছর রানিং। সরকারি রুলস অনুযায়ী সেলারি পাই, তবে তা পর্যাপ্ত না, তাই একটু কষ্ট-মষ্ট করে চলি তবে দিনশেষে এই পেশায় আল্লাহ্ আমাকে ভালো রাখছে।“

অনেকটা হতাশা নিয়ে তিনি আরও বলেন ‘আগে মানুষ বুঝতো না তবে এখন মানুষ অনেক সচেতন। আগে এই পেশাকে মানুষ অনেক ঘৃণা করত। মানুষ ভাবে আমরা মদ গাজা খাই, নেশা করি। আমার পেশায় আমি আলাদা আমি মদ গাজা খাই না। আজ থেকে ২০ বছর আগে যারা ছিল তারা এগুলো খাইতো এখনো খায়, আসলে জিনিসটা মফাস্বলে বেশি হয়। আমি পড়াশোনা করছি, আমার ছেলে ডিগ্রী পাস করছে। আমি সামাজিকতা বুঝার চেষ্টা করি, যে একটা মানুষের সাথে কিভাবে কথা বলতে হবে।‘

ঔ হাসপাতালের অরেকজন ডোম মোঃ হায়দার আলী মন্ডল। ডোমের কাজ করার জন্য তাকে সমাজে নানা রকম বিড়ম্বনা পোহাতে হয় নিয়মিত। পাশাপাশি আর্থিক অনটন তো আছেই।  তিনি জানান, ‘আমি এই পেশার সাথে গত পাঁচ বছর যাবত জড়িত আছি। আমরা ডোমের কাজ করি, তাই সমাজ আমাকে বেশি মূল্যায়ন করেনা।‘

‘আমাদের কাজ কামও কম, বেশি আসে না অল্প যায় আসে এতে আমাদের সংসার চলে না। তাছাড়া আমি বুড়া হয়ে গেছি কাজ কামও করতে পারি না, রিকশাও চালাতে পারি না। এই কারণে সরকারের কাছে একটু দাবি যে যদি আমাদের একটু সাহায্য সহযোগিতা করতো।‘ 

কিন্তু কেন সমাজ তাদেরকে ভিন্ন দৃষ্টিতে দেখে। জানতে চাইলে হায়দার আলী বলেন, ‘মানুষ আমাদেরকে ভয় পায়। পরিবার থেকে বিধি-নিষেধ আসে যে এরকম কাজ করো না। আমি বুড়া মানুষ রিকশা চালাতে পারিনা, কাজ করতে পারি না এ কারণে কিছু তো একটা করতে হবে।‘

সমাজের বিভিন্ন পেশাজীবীদের সাথে কথা বলেও পাওয়া যায় অনেকটা একই রকম চিত্র। খালেকুজ্জামান খালেক নামে একজন ব্যবসায়ী বলেন, ‘সাধারণ মানুষ হিসেবে আমার ধারণাটা হচ্ছে, যারা লাশ কাটা-ছেঁড়া করে তাদের প্রতি আমাদের নজরদারিটা অন্যরকম। ভয়-ভীতিটা থাকে আমাদের বেশি। যেহেতু তারা লাশ কাটা-ছেঁড়া করে সেখানে ঢুকতেও আমাদের ভয় লাগে। তবে দিনশেষে তাঁরাও মানুষ, তাদেরও পরিবার পরিজন আছে, আমাদের সকলের উচিত তাদের প্রতি আরও সদয় হওয়া।‘

শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ডা. সেলিম রেজা বলেন, “আমাদেরতো আসলে ডোম একটা। সারা বাংলাদেশে আমাদের ৬৪ টা জেলা আছে যার মধ্যে ৬৪ জন ডোমই কাজ করেন। যেখানে আমাদের মর্গ আছে সেখানে কাজটা হয় এবং সেখানে ডোমরা থাকে। কিছু কিছু ডোমের ক্ষেত্রে এদের সরকারি কোনো নিয়োগ নেই, এরা বংশ পরম্পরায় সমাজের দায়বদ্ধতা হিসেবে তারা এই কাজগুলো করে।“

আর সহকারী ডোমদের ক্ষেত্রে বলব যে, তাদের পারিশ্রমিক আসলে হয় না, সরকার থেকেও ওভাবে কোন নির্ধারিত নেই। ওদের আসলে কেউ যদি তাদের পারিশ্রমিক খুশি হয়ে দেয় তাহলে হয়তোবা তারা কিছু টাকা পায়। তাদের পেট চলে খুব কষ্টে, তারা খুব পরিশ্রম করে এবং তাদের খুব কষ্ট হয় জীবন চালাতে।‘

‘আর হাসপাতালগুলোতে সরকারকর্তৃক নির্ধারিত বিভিন্ন জেলা মেডিকেলগুলোতে যে ডোমগুলো থাকেন তারা নিজেদের গুটিয়ে নিচ্ছে এটার কারণ হলো যে, এই পেশাটাকে মানুষ অনেক ছোট করে দেখে। ডোমরা লাশ কাটলেও তারা দিনের পর দিন যে সেবা দিয়ে যাচ্ছে অক্লান্তভাবে এই জিনিসটা কিন্তু মানুষ স্মরণে রাখে না।‘ 

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
পাঠকের মন্তব্য:

BD24LIVE.COM
bd24live.com is not only a online news portal. We are a family and work together for giving the better news around the world. We are here to give a nice and colorful media for Bangladesh and for the world. We are always going fast and get the live news from every each corner of the country. What ever the news we reached there and with our correspondents go there who are worked for bd24live.com.
BD24Live.com © ২০২০ | নিবন্ধন নং- ৩২
Developed by | EMPERORSOFT
এডিটর ইন চিফ: আমিরুল ইসলাম আসাদ
বাড়ি#৩৫/১০, রোড#১১, শেখেরটেক, ঢাকা ১২০৭
ই-মেইলঃ info@bd24live.com
ফোনঃ (০২) ৫৮১৫৭৭৪৪
নিউজ রুমঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯১
মফস্বল ডেস্কঃ ০১৫৫২৫৯২৫০২
বার্তা প্রধানঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯০
ইমেইলঃ office.bd24live@gmail.com