ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) দুর্নীতিবিরোধী অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা পুরস্কার ২০২৩ পেয়েছেন কালের কণ্ঠের সাভার প্রতিনিধি জাহিদ হাসান সাকিল। গত বছরের ১১ মে কালের কণ্ঠে প্রকাশিত ‘মামলার ধরন বদলে যায় আশুলিয়া থানায়’ শিরোনামে প্রকাশিত অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের জন্য জাতীয় সংবাদপত্র বিভাগে তিনি এই পুরস্কার অর্জন করেছেন।
শনিবার (৯ ডিসেম্বর) রাজধানীর ধানমণ্ডিতে টিআইবির কার্যালয়ে এ পুরস্কার দেওয়া হয়। এ বছর বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে জাহিদ হাসান সাকিলসহ তিনজন সাংবাদিক ও একটি প্রামাণ্য অনুষ্ঠানকে দুর্নীতিবিরোধী অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা পুরস্কার দেওয়া হয়।
আঞ্চলিক সংবাদপত্র বিভাগে বিজয়ী হয়েছেন চট্টগ্রামের ‘একুশে পত্রিকা ডট কম’-এর প্রধান প্রতিবেদক শরীফুল ইসলাম (শরীফুল রুকন)। টেলিভিশন বিভাগে বিজয়ী হয়েছেন ইন্ডিপেন্ডেন্ট টেলিভিশনের সিনিয়র রিপোর্টার হাসান মিসবাহ। টেলিভিশন (প্রামাণ্য অনুষ্ঠান) বিভাগে বিজয়ী হয়েছে ইন্ডিপেন্ডেন্ট টেলিভিশনের প্রামাণ্য অনুষ্ঠান ‘তালাশ’।
বিজয়ীদের প্রত্যেককে সম্মাননাপত্র, ক্রেস্ট ও এক লাখ ২৫ হাজার টাকা পুরস্কার দেওয়া হয়েছে। বিজয়ী প্রামাণ্য অনুষ্ঠানটির জন্য সম্মাননাপত্র, ক্রেস্ট এবং এক লাখ ৫০ হাজার টাকার পুরস্কার দেওয়া হচ্ছে।
টিআইবির সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, জাহিদ হাসান সাকিল ‘মামলার ধরন বদলে যায় আশুলিয়া থানায়’ শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনে দেখান, আশুলিয়া থানায় বিভিন্ন অপরাধের ক্ষেত্রে দায়ের করা মামলাগুলো প্রকৃত অপরাধের বিবেচনায় দুর্বল করে দেখানো হয়। যেমন ছিনতাইয়ের ঘটনায় মৃত্যুর মামলাকে সড়ক দুর্ঘটনা, ডাকাতির মামলাকে দস্যুতা বা চুরি হিসেবে নথিবদ্ধ করা হয়।
কখনো কখনো ভুক্তভোগী মামলা দায়েরের পর প্রতিবেদন দেওয়ার সময় থানা থেকে মামলার ধরন বদলে ফেলা হয়। এতে ভুক্তভোগী যেমন প্রকৃত বিচার পান না, তেমনি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সংশ্লিষ্ট সদস্যরাও মামলার ধরন নিয়ে দর-কষাকষির সুযোগ নেন।
চট্টগ্রামের ‘একুশে পত্রিকা ডট কম’-এর প্রধান প্রতিবেদক শরীফুল ইসলাম (শরীফুল রুকন) গত বছরের ২৫ আগস্ট ২০২২ ‘নকল ওষুধ চক্রের কাছে অসহায় কোম্পানিগুলো’, ‘ওষুধ পরীক্ষার নামে প্রহসন!’, ‘ঔষধ প্রশাসন ও পুলিশের যোগসাজশে ‘নকলবাজদের’ মুক্তি!’ শিরোনামে তিন পর্বের ধারাবাহিক প্রতিবেদনের জন্য আঞ্চলিক সংবাদপত্র বিভাগে পুরস্কার অর্জন করেন। প্রতিবেদনগুলোতে শরীফুল চট্টগ্রাম অঞ্চলে, বিশেষ করে চট্টগ্রাম সিটিতে নিবন্ধনবিহীন নকল ওষুধের অবাধ উৎপাদন ও রমরমা বেচাকেনা এবং নকলবাজদের বিরুদ্ধে প্রকৃত কম্পানিগুলোর অসহায়ত্ব, প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণে অনিচ্ছা ও দুর্বলতা, নকল ওষুধ পরীক্ষার ক্ষেত্রে বিধির দুর্বলতা ও ইচ্ছাকৃত অনীহা, যেসব নকল ওষুধ প্রস্তুতকারীর বিরুদ্ধে মামলা হয় তাদের ক্ষেত্রে ঔষধ প্রশাসন ও থানা পুলিশের যোগসাজশে দায়মুক্তি এবং যারা হাতেনাতে ধরা পড়েন তাদের বিরুদ্ধেও অভিযোগ দায়ের না করার বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন।
ইন্ডিপেন্ডেন্ট টেলিভিশনের সিনিয়র রিপোর্টার হাসান মিসবাহ গত বছরের ৮ সেপ্টেম্বর ‘এসপিএ মেডিকেলের প্রতারণা’ শিরোনামে প্রচারিত প্রতিবেদনের জন্য টেলিভিশন বিভাগে পুরস্কার অর্জন করেন।
প্রতিবেদনটিতে তিনি দেখান যে, মানবিক বিভাগ থেকে এইচএসসি পাস করে, অন্য আরেকজন ডাক্তারের বিএমডিসির নিবন্ধন নম্বর দেখিয়ে, নিজের নাম পাল্টিয়ে এসপিএ মেডিক্যাল সেন্টারের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বনে গেছেন জনৈক কামাল হোসেন। আবার রীতিমতো মেডিসিন বিশেষজ্ঞ হিসেবে নিয়মিত রোগীও দেখেন তিনি। সাক্ষাৎকারের প্রথম পর্যায়ে, এমনকি প্রকৃত বিএমডিসি নম্বরধারী ডাক্তারের বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা গ্রহণের কথাও বলেন তিনি। একপর্যায়ে সব কিছু স্বীকার করে নেন এই ভুয়া ডাক্তার। কিন্তু এসপিএ মেডিক্যালের মালিককে এই ভুয়া ডাক্তার নিয়োগের বিষয়ে জিজ্ঞাসা করতে গেলে প্রতিবেদক ও চিত্রগ্রাহকের ওপর হামলা করে তার সন্ত্রাসী বাহিনী। এরপর তার বিরুদ্ধে হত্যা চেষ্টা মামলা হলে তাকে চার সহযোগীসহ গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
টেলিভিশন (প্রামাণ্য অনুষ্ঠান) বিভাগে বিজয়ী হয়েছে ইন্ডিপেন্ডেন্ট টেলিভিশনের প্রামাণ্য অনুষ্ঠান ‘তালাশ’। ২০২২ সালের ২৭ মে ‘শ্রম ভবনে ঘুষের বাণিজ্য’ শিরোনামে প্রচারিত প্রামাণ্য অনুষ্ঠানের জন্য তালাশ টিম এ বছর এই পুরস্কার অর্জন করে। প্রচারিত প্রামাণ্য অনুষ্ঠানটিতে দেখানো হয়, শ্রমিকদের ট্রেড ইউনিয়ন গঠনের অধিকার রক্ষার জন্য শ্রম অধিদপ্তরে ট্রেড ইউনিয়ন বিভাগ আছে। কিন্তু সেখানে শ্রমিকদের স্বার্থ রক্ষা না করে, মালিকদের কাছ থেকে ঘুষ নিয়ে মালিকপক্ষের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। শ্রমিক হয়রানি, চাকুরিচ্যুতি ইত্যাদি বিষয়েও শ্রমিকরা পান না প্রতিকার। মালিকপক্ষের সঙ্গে যোগসজশে সব উল্টে যায়, লেনদেন হয় লাখ লাখ টাকা। এমনকি কোনো কারখানার শ্রমিকদের পক্ষ থেকে ট্রেড ইউনিয়ন গঠনের আবেদন জমা পড়লেই, সে খবর মালিকের কাছে পৌঁছে দেন দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। ফাইল আটকে রেখে মালিক-শ্রমিক উভয় পক্ষের কাছ থেকেই ঘুষ আদায় করেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। আর এর সঙ্গে সরাসরি যুক্ত ট্রেড ইউনিয়ন বিভাগের পরিচালক ও সহকারী পরিচালকরা। তাদের সঙ্গে আছেন বেশ কয়েকজন কর্মচারীও। প্রামাণ্য অনুষ্ঠানটিতে এই পুরো বিষয়টি সবিস্তারে তুলে ধরা হয়।
এদিকে জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ে দুর্নীতিবিরোধী বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে প্রতিবছরের মতো এবারও আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবস উদযাপন করছে টিআইবি। ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে একসাথে’ এই প্রতিপাদ্যে দিবসটি উদযাপনে জাতীয় পর্যায়ে দুর্নীতিবিরোধী অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা এবং কার্টুন প্রতিযোগিতার পুরস্কার ঘোষণা ও প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে। এ ছাড়া দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) আয়োজিত মানববন্ধনে ঢাকাসহ সারা দেশের ৪৫টি অঞ্চলের সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক), অ্যাকটিভ সিটিজেনস গ্রুপ (এসিজি), ইয়ুথ এনগেজমেন্ট অ্যান্ড সাপোর্ট (ইয়েস) গ্রুপের সদস্যবৃন্দ অংশগ্রহণ করে। পাশাপাশি দেশব্যাপী সনাক, এসিজি, ইয়েস গ্রুপের আয়োজনে র্যালি, আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ নানা কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়।
জাতীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে আজ সকাল ১০টায় টিআইবির ধানমণ্ডির কার্যালয়ে ‘গণমাধ্যম, বাকস্বাধীনতা ও অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা: প্রেক্ষিত বাংলাদেশ’ শীর্ষক একটি আলোচনা এবং দুর্নীতিবিরোধী অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা পুরস্কার ২০২৩ ঘোষণা করা হয়। অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন টিআইবির আউটরিচ অ্যান্ড কমিউনিকেশন বিভাগের অ্যাসিস্ট্যান্ট কোঅর্ডিনেটর জাফর সাদিক। প্রবন্ধের ওপর আলোচনায় অংশ নেন ঢাকা ট্রিবিউনের নির্বাহী সম্পাদক রিয়াজ আহমেদ, বৈশাখী টেলিভিশনের প্ল্যানিং কনসালট্যান্ট জুলফিকার আলি মাণিক, নিউজটোয়েন্টিফোরের প্রধান বার্তা সম্পাদক শাহনাজ মুন্নী, অনুসন্ধানী সাংবাদিক ও প্রশিক্ষক মোহাম্মদ বদরুদ্দোজা, ইন্ডিপেন্ডেন্ট টেলিভিশনের বার্তা প্রধান আশীষ সৈকত। টিআইবির ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারপারসন অ্যাডভোকেট সুলতানা কামালও আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন। টিআইবির আউটরিচ ও কমিউনিকেশন বিভাগের পরিচালক শেখ মনজুর-ই-আলমের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান।
বাংলাদেশে ক্ষমতাবানদের ‘শ্যুট দ্য মেসেঞ্জার’ মানসিকতার উল্লেখ করে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, সমালোচক মাত্রই শত্রু―অবস্থান থেকে তাদের স্তব্ধ করে দেওয়ার প্রবণতা দেখা যায় এবং ফলে ভয়ের সংস্কৃতি আরো ঘনীরভূত হচ্ছে। গণমাধ্যম, নাগরিক সমাজের ওপর এর প্রভাবের কারণে, চাপে পড়ে সাংবাদিক ও উন্নয়নকর্মীরা পেশা পরিবর্তন করছেন, সেল্ফ সেন্সরশিপের চর্চা করতে বাধ্য হচ্ছেন। ফলে গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ, জবাবদিহিমূলক সরকার ব্যবস্থার সম্ভাবনা নিয়ে উৎকণ্ঠিত হওয়ার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। ইউএনসিএসি-এর ১৩ নম্বর অনুচ্ছেদে দুর্নীতির বিরুদ্ধে নাগরিক বিশেষ করে, গণমাধ্যম ও নাগরিক সমাজের অংশগ্রহণের সুযোগ সৃষ্টির যে অঙ্গীকার করা আছে, তার উপযুক্ত পরিবেশ সরকারকেই নিশ্চিত করতে হবে। ‘আগে উন্নয়ন পরে গণতন্ত্র’-এর অন্তর্নিহিত এজেন্ডা হলো কখনোই গণতন্ত্র নয়। জনমুখী উন্নয়নকে নিশ্চিত করতে হলে আগে চাই গণতন্ত্র বিশেষ করে বাকস্বাধীনতা, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি। তাহলেই উন্নয়ন অর্থবহ হবে।’
টিআইবির ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারপারসন অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল বলেন, “আগে সংবাদ রাজনৈতিক দল বা নেতার বিপক্ষে গেলে সাংবাদিকের ওপর চাপ সৃষ্টি হতো। আর এখন কোনো সংবাদ ব্যবসায়ী, আমলা বা অন্য কোনো গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে সাংবাদিক হত্যার ঘটনাও ঘটে। সাংবাদিকরা দুর্নীতিকে উন্মোচন করেন বলেই তাদের ওপর চাপ বেশি থাকে। আমরা দেখছি, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বা সাইবার নিরাপত্তা আইনের মতো বিভিন্ন নিপীড়নমূলক আইন সাংবাদিকদের ওপরই বেশি ব্যবহৃত হয়েছে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে আমাদের মনোভাব শূন্য সহনশীলতা থেকে ক্রমান্বয়ে ‘সহনশীল’ হয়েছে এবং এখন তা একপ্রকার খোলাখুলিভাবে ‘প্রশ্রয়’ দেওয়া হচ্ছে।”
একই দিন বিকেল ৩টায় ‘দুর্নীতিবিরোধী কার্টুন প্রতিযোগিতা ২০২৩’-এর পুরস্কার ঘোষণা এবং ১৫ দিনব্যাপী কার্টুন প্রদর্শনী এবং ভার্চুয়াল গ্যালারির উদ্বোধন করা হয়। অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত সুইডেনের রাষ্ট্রদূত আলেক্সান্দ্রা বার্গ ফন লিন্ডে, সুইজারল্যান্ডের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত কোরিন হেনচজ পিগনানি, ব্রিটিশ ডেপুটি হাই কমিশনার ম্যাট ক্যানেল, ইউএসএআইডির মিশন ডিরেক্টর রিড এশলিম্যান, দুর্নীতিবিরোধী কার্টুন প্রতিযোগিতার বিচারক কার্টুনিস্ট ও উন্মাদ পত্রিকার সম্পাদক আহসান হাবিব। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন টিআইবির ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারপারসন অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল এবং স্বাগত বক্তব্য দেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান।
১৮তম বছরের মতো দুর্নীতিবিরোধী কার্টুন প্রতিযোগিতা আয়োজনের জন্য টিআইবির প্রশংসা করেন আমন্ত্রিত অতিথিরা। দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলনের শক্তিশালী হাতিয়ার হিসেবে কার্টুনের ব্যবহারকে উৎসাহ দিয়ে সুইডেনের রাষ্ট্রদূত আলেক্সান্দ্রা বার্গ ফন লিন্ডে বলেন, ‘সমাজের জটিল সব সংকট কার্টুন একদিকে যেমন সহজভাবে ফুটিয়ে তোলে, তেমনি দুর্নীতির বিরুদ্ধে সচেতনতা সৃষ্টির কাজেও গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার হিসেবে কাজ করে। ক্ষমতাধরদের স্বেচ্ছাচারিতাকে জবাবদিহিতার মুখোমুখি দাঁড় করানোর পাশাপাশি মত প্রকাশের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হিসেবে কার্টুন কাজ করে।’
ব্রিটিশ ডেপুটি হাইকমিশনার ম্যাট ক্যানেল বলেন, ‘ঘুষ, অনিয়ম, দুর্নীতির বিভিন্ন ছোট ছোট গল্প সমাজের সামনে তুলে এনে এর বিরুদ্ধে সচেতনতা গড়ে তুলতে কার্টুন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আমি সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতা পালন করা এই সব তরুণ কার্টুনিস্টদের অভিবাদন জানাই।’
ইউএসএআইডির মিশন ডিরেক্টর রিড এশলিম্যান বলেন, ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সমাজের সবার এগিয়ে আসা প্রয়োজন―সরকার, সুশীল সমাজ, বেসরকারি খাত, গণমাধ্যম এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সাধারণ নাগরিকগণ। দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশের গঠনের প্রয়াসে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হতে আহ্বান জানাই। চলুন এমন একটি বিশ্ব গড়ে তুলতে একসঙ্গে কাজ করে যাই যেখানে ন্যায়বিচার, স্বচ্ছতা ও সততা আমাদের ভবিষ্যতের পথ দেখায়।’
‘দুর্নীতি, দারিদ্র্য ও অবিচার’ বিষয়ে আয়োজিত ১৮তম কার্টুন প্রতিযোগিতায় ‘ক’ বিভাগে (১৩-১৮বছর) প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থান অধিকার করেন যথাক্রমে সরকারি সুন্দরবন আদর্শ কলেজের মুগ্ধ রায় নিবিড়, বরিশাল ক্যাডেট কলেজের ইশতিয়াক আহমেদ তৌফিক এবং শান্তিপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের মো. তাহসিন বিন ইব্রাহিম। ‘খ’ বিভাগে (১৯-২৫ বছর) প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থান অধিকার করেন যথাক্রমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তানভীর মালেক, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের দেবাদৃতা হালদার এবং ইম্পেরিয়াল কলেজের এইচএসসি পরীক্ষার্থী মো. আবদুর রহমান তালুকদার। উভয় গ্রুপের বিজয়ী তিনজনকে যথাক্রমে ৭৫ হাজার, ৫০ হাজার ও ৪০ হাজার টাকা, ক্রেস্ট ও সনদ দেওয়া হয়। এ ছাড়া দুটি বিভাগ থেকে মোট ২৩ জন কার্টুনিস্টকে বিশেষ মনোনয়ন দেওয়া হয়।
এ বছর দুটি বিভাগে ১১০ জন কার্টুনিস্টের আঁকা মোট ২২৯টি কার্টুন জমা পড়ে। কার্টুন প্রতিযোগিতার বিজয়ী ও বিশেষ মনোনয়ন প্রাপ্ত ২৯ জন কার্টুনিস্টের মোট ৪৮টি কার্টুন নিয়ে আজ থেকে ১৫ দিনব্যাপী সাধারণের জন্য উন্মুক্ত প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে। টিআইবির ধানমণ্ডির কার্যালয়ের লেভেল ৫-এ ২৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত এই প্রদর্শনী রোজ দুপুর ১২টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত চলবে। পাশাপাশি, ভার্চুয়াল গ্যালারিতেও (https://www.ti-bangladesh.org/cartoon-competition) এই প্রদর্শনী দেখা যাবে।
সালাউদ্দিন/সাএ
সর্বশেষ খবর