উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রদত্ত ভোটের ১৫ শতাংশ ভোট না পেলে জামানত হারাবে প্রার্থীরা। বিধিমালায় নতুন এ আইন যুক্ত করে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন বিধিমালা ২০২৪" নির্বাচন কমিশন ইসি থেকে পাঠানো প্রস্তাবিত সংশোধন অনুমোদন দিয়েছে আইন মন্ত্রণালয়।
নির্বাচন কমিশন সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
নতুন বিধিমালায় নির্বাচনে অংশ নেওয়া প্রার্থীদের জামানতের হার বাড়ানো হয়েছে ১০ গুণ। বিধিমালা ২০১৩ অনুযায়ী চেয়ারম্যান প্রার্থীর জামানত ১০ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে নতুন বিধিমালায় করা হয়েছে ১ লাখ টাকা, ভাইস চেয়ারম্যানের জামানত ১০ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ৭৫ হাজার টাকা করা হয়েছে। একই সাথে নির্বাচনে প্রার্থী প্রদত্ত ভোটের শতকরা ১৫ ভাগ অপেক্ষা কম ভোট পেলে প্রার্থীর জামানত বাজেয়াপ্তের প্রস্তাব সম্মতি দিয়েছে মন্ত্রণালয়। সেই সাথে অনলাইনে মনোনয়নপত্র দাখিল বাধ্যতামূলক করা হয়েছে নতুন বিধিমালায়।
উপজেলা নির্বাচন বিধিমালার পাশাপাশি আচরণবিধিতে একাধিক বিষয়ে পরিবর্তন করেছে নির্বাচন কমিশন ইসি। এবারের নির্বাচনে প্রার্থীরা সাধাকালো পোস্টারের সাথে রঙিন পোস্টার ব্যবহারের অনুমতি পাবে। নির্বাচনে প্রচারের জন্য চাইলেই যত্রতত্র ক্যাম্প স্থাপন করা যাবেনা। নতুন বিধিমালায় প্রতি ইউনিয়নে একটি এবং পৌরসভার প্রতি তিনটি ওয়ার্ডে একটির বেশি নির্বাচনী ক্যাম্প বা অফিস স্থাপন করা যাবে না।
এর আগে উপজেলা নির্বাচন বিধিমালা সংশোধনী আনতে আইন ও বিধিমালা সংস্কার কমিটি গঠন করেছে ইসি। কমিটির সভাপতি করা হয়েছিলো নির্বাচন কমিশনার রাশেদা সুলতানাকে। সেই সময় কমিটি দুই দফা বৈঠকে একটি খসড়া তালিকা প্রস্তুত করে। পরবর্তীতে কমিশন সভায় আচরণ বিধিমালায় আটটি সংশোধন ও স্থানীয় সরকার আচরণবিধিমালা ১০ টি সংশোধনের প্রস্তাব অনুমোদন দিয়ে আইন মন্ত্রণালয়ে ভেটিং জন্য পাঠানো হয়। মন্ত্রণালয় পরবর্তীতে বিধিমালা গুলো পর্যালোচনা করে অনুমোদন দেয়।
ইসি থেকে পাঠানো যেসব প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে আইনমন্ত্রণালয়
১. পোস্টার, ব্যানার সাদা-কালো অথবা রঙিন করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
২. প্রতীক বরাদ্দের আগে জনসংযোগ এবং ডিজিটাল মাধ্যমে নির্বাচনী প্রচারণার প্রস্তাব করা হয়।
৩. পাঁচ জনের বেশি কর্মী বা সমর্থককে নিয়ে জনসংযোগ করা যাবে না।
৪. প্রতি ইউনিয়নে একটি এবং পৌরসভার প্রতি তিনটি ওয়ার্ডে একটির বেশি নির্বাচনী ক্যাম্প বা অফিস স্থাপন করা যাবে না।
৫. নির্বাচনী ক্যাম্প বা অফিসের আয়তন ৬০০ বর্গফুটের বেশি হতে পারবে না।৬. নির্বাচনী প্রচারণায় একটির বেশি শব্দযন্ত্র (হর্ন) বা জনসভায় চারটির বেশি শব্দযন্ত্র (হর্ন) ব্যবহার করা যাবে না।৭. শব্দদূষণ প্রতিরোধে শব্দ বর্ধনকারী যন্ত্রের শব্দের মান মাত্রা ৬০ ডেসিবলের বেশি হতে পারবে না।
৮. প্রচারণায় পোস্টার বা ব্যানারে পলিথিনের ব্যবহার না করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
৯. স্বতন্ত্র প্রার্থীর ক্ষেত্রে ভোটারের সমর্থনেরযুক্ত তালিকা দাখিলের বিধান বিলুপ্ত করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
১০. অনলাইনে মনোনয়নপত্র দাখিল বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
১১. চেয়ারম্যানের ক্ষেত্রে জামানত এক লাখ টাকা, ভাইস চেয়ারম্যানের ক্ষেত্রে ৭৫ হাজার টাকা এবং নারী সদস্যের ক্ষেত্রে পাঁচ হাজার টাকার প্রস্তাব করা হয়েছে।
১২. সমভোটের ক্ষেত্রে লটারির মাধ্যমে ফলাফল নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়।
১৩. প্রদত্ত ভোটের শতকরা ১৫ ভাগ অপেক্ষা কম ভোট পেলে জামানত বাজেয়াপ্তের প্রস্তাব করা হয়েছে।
১৪. চেয়ারম্যান এবং ভাইস চেয়ারম্যানের নির্বাচনী ব্যয় ২৫ লাখ টাকা এবং নারী সদস্যদের এক লাখ টাকার প্রস্তাব করা হয়েছে।
১৫. মনোনয়নপত্রে লিঙ্গ হিসেবে হিজড়াদের অন্তর্ভুক্তির প্রস্তাব করা হয়।
১৬. নির্বাচনের ফলাফল স্থগিত ও পুনরায় ভোটগ্রহণে কমিশনের ক্ষমতার বিষয়ে প্রস্তাব করা হয়েছে।
১৭. মনিটরিং কমিটি গঠনের প্রস্তাব করা হয়েছে।
১৮. নতুন রাজনৈতিক দল নিবন্ধিত হওয়ায় প্রতীক অন্তর্ভুক্তি বা সংশোধনের প্রস্তাব করা হয়েছে।
আইনমন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের বিষয়ে ইসি অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ বলেন,উপজেলা নির্বাচনে বিধিমালায় আমরা বেশকিছু বিষয় সংশোধনের জন্য আইনমন্ত্রাণালয়ে ভেটিং জন্য পাঠিয়েছি। বিধিমালাগুলো মন্ত্রণালয় ভেটিং শেষে অনুমোদন দিয়ে আজকে কমিশনে পাঠিয়েছে। আমরা এইগুলো দেখে আবার আইনমন্ত্রণালয়ে পাঠাবো। মন্ত্রণালয় পরবর্তীতে প্রজ্ঞাপন জারি করবে।
এদিকে আসন্ন ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচন চারটি ধাপে করার জন্য তারিখ ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন ইসি। আগামী ৪, ১১, ১৮ ও ২৫ মে চার ধাপে দেশের ৪৮১টি উপজেলা পরিষদের ভোটগ্রহণ করবে ইসি। দেশে ৪৯৫টি উপজেলা রয়েছে।
ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ জানিয়েছেন, আগামী দু'এক সপ্তাহের মধ্যেই পূর্ণাঙ্গ তফসিল ঘোষণা করা হবে।
সর্বশেষ খবর
জাতীয় এর সর্বশেষ খবর