কালবর্ণ চেহারা। মুখে খোঁচা খোঁচা দাঁড়ি। গায়ে তিন পকেট বিশিষ্ট হাফশার্ট। পরনে কালো রঙের ঢিলেঢালা প্যান্ট। পায়ে ছেঁড়া—ফাটা স্যান্ডেল। ঘাড়ে গামছা ও মাথায় সাদা টুপি। হাতে ঝোলানো ব্যাগ। দোকান দোকান ঘুরছেন। হাত বাড়িয়ে সালাম দিচ্ছেন। প্রথমে দেখে মনে হবে সাহায্য প্রার্থী। কিন্তু না! সাহায্যের জন্য হাত বাড়াচ্ছেন না।
মঙ্গলবার বিকালে নাটোরের বাগাতিপাড়া উপজেলার মালি বাজারে এমনই এক ব্যক্তির দেখা মেলে। জানা যায় নাম তার মাহাতাব আলী (৬১)। তিনি বাগাতিপাড়া উপজেলার পাঁকা ইউনিয়নের চকমাহাপুর গ্রামের মৃত আহাদ আলীর ছেলে। মাহাতাব আলী পেশায় ছিলেন ওয়াচম্যান (প্রহরী)। দৈনিক মুজুরীতে কাজ করতেন নর্থ বেঙ্গল সুগার মিলের কৃষ্ণা খামারে। তবে বয়সের ভারে তাও এখন আর করতে পারেনা। তাই নিজের সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হয় প্রতিনিয়ত। তবে সব সমস্যা ফেলে রমজান মাস এলেই দীর্ঘ ৩৩ বছর যাবৎ রোজদারদের খেদমতে বিনামূল্যে বিলি করছেন মেসওয়াক (দাঁতন)।
এ সম্পর্কে মাহাতাব আলী বলেন, দারিদ্রের কষাঘাতে তাঁর ভাগ্যে পড়ালেখা জোটেনি। সেই ছোটবেলা থেকে রমজান মাসে বাড়ির পাশের বাজারে গিয়ে বসে থাকতেন। বিকেল হলেই সবাই তাঁকে মেসওয়াক (দাঁতন) নিয়ে আসতে হুকুম করতেন। সেই থেকে মানব সেবার অদ্ভুত এক নেশা পেয়ে বসে তাঁকে। তিনি মনে করেন, কেউ হুকুম করার আগেই যদি তার মেসওয়াকটা হাতের কাছে এনে দেওয়া যেত, তাহলে লোকটি বোধ হয় আরো বেশি খুশি হবেন। সেই ভাবনা থেকেই তার মেসওয়াক বিতরণ শুরু।
এরপর ৩৩ বছর ধরে রমজান মাসে মেসওয়াকের ব্যাগ নিয়ে ঘুরে বেড়ান বাগাতিপাড়া উপজেলার সকল প্রান্ত সহ দেশের বিভিন্ন অ লের হাটে—বাজারে, মসজিদের সামনে। আর বিতরণ করেন বিনামূল্যে এসব মেসওয়াক। এতেই তাঁর আনন্দ। তিনি আরো বলেন, সেহেরী খাওয়ার পর থেকে সারা সকাল মেসওয়াক বানিয়ে দুপুরের পরই বেরিয়ে পড়েন বিতরণ করতে।
এ কাজে তাঁর স্ত্রী ও সন্তানরা তাঁকে সহযোগিতা করেন। মূলত তিনি নিম গাছের ডাল দিয়ে মেসওয়াক বানান। একাজের জন্য নিম গাছের মালিকরা তাকে দাওয়াত করে ডেকে নিয়ে যান। তাছাড়া বিশিষ্ট ব্যক্তিদের জন্য ঔষধি গাছ আপাংয়ের ডালের বিশেষ মেসওয়াক তৈরি করেন তিনি। আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায় রোজাদারদের মাঝে মেসওয়াক বিতরণ করছেন বলেও জানান তিনি। তিনি যেন সুস্থ থেকে দীর্ঘ দিন যাবৎ এভাবেই সকলের মাঝে মেসওয়াক বিতরণ করতে পারেন সেজন্য দেশবাসীর কাছে দোয়াও চেয়েছেন। ব্যক্তি জীবনে তিনি স্ত্রী সহ তিন সন্তানের জনক। পৌর এলাকার বাসিন্দা রেজাউন্নবী বলেন, দীর্ঘ দিন থেকে দেখছি পুরো রমজান মাস মাহাতাব রোজাদারদের বিনামূল্যে মেসওয়াক দিয়ে খেদমত করেন। এই বয়সে বিনা টাকায় সেবাদান নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবিদার।
সালাউদ্দিন/সাএ
সর্বশেষ খবর