উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশ নিতে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মনোনয়নপত্রের সঙ্গে ২৫০ ভোটারের সমর্থনযুক্ত স্বাক্ষর তালিকা জমা দেওয়া একজন প্রর্থীর জন্য কষ্টকর হওয়ায় এ বিধান বাতিল করে জামানতের অর্থ বৃদ্ধি করেছে নির্বাচন কমিশন(ইসি)।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশন(ইসি) অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ বলেছেন,আড়াইশো জনের সমর্থন সূচক স্বাক্ষর নেওয়ার বিধান ছিল যা একজন প্রর্থীর জন্য কষ্টকর বিষয় হয়ে যায়।আমরা জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দেখেছি এক শতাংশের যে স্বাক্ষর সেটি নিতে গিয়ে ডান হাত বাম হাত দিয়ে স্বাক্ষর করে দেয় পরবর্তীতে যাচাই করার সময় মেলেনা।অনেকের স্বাক্ষর দিতে চাই না।যার কারনে এ বিধানটা প্রতিপালন করা কষ্টকর ছিল। সার্বিক বিষয়ে বিবেচনা করে কমিশন এটাকে উঠিয়ে দেওয়ার জন্য প্রস্তাব করলে আইন মন্ত্রণালয় তা অনুমোদন দেয়।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন,যেকোনো ব্যক্তি নির্বাচন করতে পারবে সেটা না।নির্বাচন করার জন্য ওটা উঠিয়ে দিয়ে এখন জামানত বৃদ্ধি করা হয়েছে।এক লক্ষ টাকা জমানোর দেওয়া হয়েছে প্রদত্ত ভোটে নির্দিষ্ট সংখ্যক ভোট না পায় তাহলে জামানত বাজেয়াপ্ত হয়ে যায়। আর সে যদি ভোট পায় তাহলে সে জামানত ফেরত পেয়ে যাবে।
নির্বাচন প্রচারণায় রঙিন পোস্টারে রঙিন পোস্টার ব্যবহারে দায় বৃদ্ধি পাবে এ নিয়ে আপনাদের ভাবনা কি?জানতে চাইলে তিনি বলে, র নির্বাচন করতে গেলে কম ব্যয় নির্বাচন করা যায় না এখন সাদা কালো পোস্টার ছাপানোবেশি কষ্টকর।আজ থেকে পনেরো বছর আগে এই আইনটা করা হয়েছিল তখন রঙিন পোস্টার ছাপানো ছিল কষ্টকর। আর এখন সাদাকালো পোস্টার ছাপাতে গেলে বেশি সমস্যা হচ্ছ। কারণ অনেক প্রেসে সাদা কালো পোস্টার ছাপানোর ব্যবস্থা থাকে না রঙিনই ছাপানোর ব্যবস্থা থাকে।এসব বিষয় বিবেচনা করে রঙিন পোস্টার ব্যবহারের অনুমতি দেয়া হয়েছে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কারণে পারিবারিক গিয়ে ভোটার হালনাগাদ করা সম্ভব হয়নি এবারও কি হালনাগাদ করবেন কি না? এ বিষয়ে তিনি বলেন,বাড়ি বাড়ি যেয়ে হালনাগাদ সিদ্ধান্ত এখনো হয়নি কারণ হলো ০১-০১-২০০৭ সালের আগ পর্যন্ত কিন্তু আমরা তথ্য নিয়ে রেখেছি যারা ২৫ সালের মার্চ মাসে ভোটার হিসাবে অন্তর্ভুক্ত হবে এ বছর হওয়ার সম্ভাবনা কম এরপরও কমিশন সিদ্ধান্ত নেবেন এ বিষয়ে।কিন্তু আমার মনে হয় যে এ বছর বাড়ি বাড়ি গিয়ে হালনাগাদ করা হবে না।
ইসির যেসব প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে আইনমন্ত্রণালয়-
১. পোস্টার, ব্যানার সাদা-কালো অথবা রঙিন করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
২. প্রতীক বরাদ্দের আগে জনসংযোগ এবং ডিজিটাল মাধ্যমে নির্বাচনী প্রচারণার প্রস্তাব করা হয়।
৩. পাঁচ জনের বেশি কর্মী বা সমর্থককে নিয়ে জনসংযোগ করা যাবে না।
৪. প্রতি ইউনিয়নে একটি এবং পৌরসভার প্রতি তিনটি ওয়ার্ডে একটির বেশি নির্বাচনী ক্যাম্প বা অফিস স্থাপন করা যাবে না।
৫. নির্বাচনী ক্যাম্প বা অফিসের আয়তন ৬০০ বর্গফুটের বেশি হতে পারবে না।৬. নির্বাচনী প্রচারণায় একটির বেশি শব্দযন্ত্র (হর্ন) বা জনসভায় চারটির বেশি শব্দযন্ত্র (হর্ন) ব্যবহার করা যাবে না।৭. শব্দদূষণ প্রতিরোধে শব্দ বর্ধনকারী যন্ত্রের শব্দের মান মাত্রা ৬০ ডেসিবলের বেশি হতে পারবে না।
৮. প্রচারণায় পোস্টার বা ব্যানারে পলিথিনের ব্যবহার না করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
৯. স্বতন্ত্র প্রার্থীর ক্ষেত্রে ভোটারের সমর্থনেরযুক্ত তালিকা দাখিলের বিধান বিলুপ্ত করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
১০. অনলাইনে মনোনয়নপত্র দাখিল বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
১১. চেয়ারম্যানের ক্ষেত্রে জামানত এক লাখ টাকা, ভাইস চেয়ারম্যানের ক্ষেত্রে ৭৫ হাজার টাকা এবং নারী সদস্যের ক্ষেত্রে পাঁচ হাজার টাকার প্রস্তাব করা হয়েছে।
১২. সমভোটের ক্ষেত্রে লটারির মাধ্যমে ফলাফল নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়।
১৩. প্রদত্ত ভোটের শতকরা ১৫ ভাগ অপেক্ষা কম ভোট পেলে জামানত বাজেয়াপ্তের প্রস্তাব করা হয়েছে।
১৪. চেয়ারম্যান এবং ভাইস চেয়ারম্যানের নির্বাচনী ব্যয় ২৫ লাখ টাকা এবং নারী সদস্যদের এক লাখ টাকার প্রস্তাব করা হয়েছে।
১৫. মনোনয়নপত্রে লিঙ্গ হিসেবে হিজড়াদের অন্তর্ভুক্তির প্রস্তাব করা হয়।
১৬. নির্বাচনের ফলাফল স্থগিত ও পুনরায় ভোটগ্রহণে কমিশনের ক্ষমতার বিষয়ে প্রস্তাব করা হয়েছে।
১৭. মনিটরিং কমিটি গঠনের প্রস্তাব করা হয়েছে।
১৮. নতুন রাজনৈতিক দল নিবন্ধিত হওয়ায় প্রতীক অন্তর্ভুক্তি বা সংশোধনের প্রস্তাব করা হয়েছে।
আগামী ৮ মে দেশের ১৫২টি উপজেলায় প্রথম ধাপের নির্বাচন হবে। তফসিল অনুযায়ী, মনোনয়নপত্র জমার শেষ সময় ১৫ এপ্রিল, বাছাই ১৭ এপ্রিল। রিটার্নিং কর্মকর্তার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল ১৮ থেকে ২০ এপ্রিল। আপিল নিষ্পত্তি ২১ এপ্রিল , প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় ২২ এপ্রিল। প্রতীক বরাদ্দ ২৩ এপ্রিল, আর ভোটগ্রহণ হবে ৮ মে।
নির্বাচনে রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও সহকারি রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তাদের নিয়োগ করা হয়েছে। রিটার্নিং কর্মকর্তার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে দায়ের করা আপিল আবেদন নিষ্পত্তি করবেন আপিল কর্তৃপক্ষ হিসেবে জেলা প্রশাসক।
মোট চার ধাপে অনুষ্ঠেয় ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের পরবর্তীতে তিন ধাপের ভোট ২৩ ও ২৯ মে এবং ৫ জুন অনুষ্ঠিত হবে। দেশে মোট উপজেলার সংখ্যা ৪৯৫টি।
বাঁধন/সিইচা/সাএ
সর্বশেষ খবর