
ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলায় সবজি আবাদের জন্য উর্বরতায় ভরপুর এনায়েতপুর ইউনিয়নের কাহলাগাঁও গ্রাম। কৃষি সমৃদ্ধ লাল মাটিযুক্ত এ গ্রামে ধানের চেয়ে সবজির আবাদই বেশি হয় । এ মাটিতে কৃষকেরা যা রোপন করে তা-ই সোনার ফসলে রূপান্তরিত হয়। কম খরচে বেশি লাভজনক হওয়ায় কৃষকেরা এবার উদ্ভিদ জাতীয় গ্রীষ্মকালীন সবজি কাকরোল চাষে ঝুঁকেছেন। ফলে কাকরোলের আবাদও এবার বেশ বেড়েছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগে অন্যান্য শাকসবজির আবাদ কম হলেও কাকরোলের বাম্পার ফলন হয়েছে। হাইব্রিড জাতের এ কাকরোলের বাজারে ভালো চাহিদা থাকায় ও দাম পাওয়ায় কাকরোল চাষে এ গ্রামের কৃষকেরা বাজিমাত করেছে।
সরেজমিনে কাহালগাঁও এলাকায় দেখা যায়, খেতের চতুর্দিকে মাচায় ঝুলে রয়েছে সবুজ রঙের কাকরোল ও সাদা বর্ণের কাকরোল ফুলের সমারোহ। গাছের ফুলগুলো উঁকি দিচ্ছে রীতিমতো ফলন ফলানোর সম্ভাবনার দিকে । যার দরুন কৃষকদের বেড়েছে পরিচর্যা। ভালো ফলন পেতে এক ফুলের সাথে আরেক ফুলের পরাগায়নে তারা খুবই ব্যস্ত সময় পার করছে। প্রতিনিয়ত খেত পরিচর্যা ও পানি সেচ দেওয়া আবার খেত থেকে কাকরোল তুলতে নারী পুরুষ মিলে দলবেঁধে একত্রেই কাজ করে যাচ্ছেন। যা এখন তাঁদের নৈর্ম্যত্তিক শিডিউলে পরিণত হয়েছে।
আব্দুল মতিন জানান, তিনি প্রতিবছর তার ফসলি জমিতে কাঁকরোলের আবাদ করেন। এতে তিনি আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ায় এবছরও প্রায় ৩ একর জমিতে কাকরোল চাষ করেছেন। সবমিলিয়ে একর প্রতি তার প্রায় ২০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। তিনি বর্তমানে সপ্তাহে তিন দিনে ১০ মণ করে কাকরোল উঠান। যা স্থানীয় বাজারে মন প্রতি ২৮০০ টাকা ধরে বিক্রি করছেন বলে জানান ।
আবেদ আলী বলেন, কাকরোলের যে বাজার পাচ্ছি এ অনুযায়ী এক বিঘা জমিতে খরচ বাদে আমার ৭০-৮০ হাজার টাকা লাভ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সরকারিভাবে বা কৃষি অফিস থেকে সাহায্য সহযোগিতা পেলো তবে অন্যরাও এ সবজি চাষে আরও উদ্বুদ্ধ হতো। কাকরোল বিক্রি করতে বাজারে নিতে হয় না, পাইকাররাই খেত থেকে নিয়ে যায়। কাকরোলের দাম ভালো পাওয়ায় তিনি খুব খুশি।
কাশেম মিয়া জানান, করোনার পর লেবুর দাম কমে যাওয়ায় লেবুতে তেমন লাভ না হওয়ায় লেবু খেত কেটে ফেলেছি । প্রতিবেশীদের দেখে তিনি এবছরই প্রথম ৫ কাঠা জমিতে কাকরোল লাগিয়েছেন। ২ দিন পর পর কাহালগাঁও বাজারে ৩০- ৪০ কেজি করে কাকরোল বিক্রি করেন।
বৈশাখ মাস থেকে কাকরোল উঠানো শুরু হওয়া থেকে প্রতিদিন কাহালগাঁও ও আশপাশের এলাকা থেকে গড়ে প্রায় ১৫ মেট্রিক টন কাকরোল বিক্রি হচ্ছে । পরে এসব কাকরোল পাইকাররা রাজধানীর বাজারসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে রপ্তানি করে থাকেন বলে জানা গেছে।
জুয়েল মিয়া নামের তরুণ কৃষি উদ্যোক্তা বলেন, লেবুর জন্য বিখ্যাত হওয়া এ গ্রামে কাকরোলের জুয়ারে এখন লেবুর চাষ অনেক কমে গেছে। কাকরোল রোপণের দেড়-দুই মাসের মধ্যে ফুল দিতে শুরু করে। পরাগায়নের ২ সপ্তাহের মধ্যে সংগ্রহের উপযোগী হয়। কাকরোল চাষে অন্যান্য ফসলের মতো সার,কীটনাশক লাগেনা শুধু পরাগায়নের ক্ষেত্রে একটু শ্রম বেশি দিতে হয়। অধিক লাভজনক হওয়ায় কৃষকদের কাকরোল চাষে দিন দিন আগ্রহ বাড়ছে। কৃষি অফিসের দিকনির্দেশনা ও সহায়তা পেলে আরও ভাল হবে।
ফুলবাড়িয়া উপজেলা কৃষি অফিসার নূর মোহাম্মদ দৈনিক বাংলা কে জানান, এ বছর কাহালগাঁও ও আস পাশে প্রায় ২০ হেক্টর জমিতে কাকরোল চাষ করা হয়েছে। কৃষকদের আমাদের পক্ষ থেকে বালাই নাশকসহ বিভিন্ন পরামর্শ দেওয়া হয়।
মুনতাসির/সাএ
সর্বশেষ খবর