
‘আমার ছেলে তো কোনো রাজনীতি করত না। আমার সঙ্গেই ঢাকায় থাইকা একটা গার্মেন্টসে চাকরি করত। বাঁচবার লাইগা আমার বাপধন আমার কাছে কতই না আকুতি করছে। কিন্তু আমি তাকে বাঁচাইতে পারলাম না। মাথায় গুলি কইরা ওরা আমার পুলাডারে মারছে।’ এভাবেই কান্নাজড়িত কণ্ঠে কথাগুলো বলছিলেন ঢাকার মিরপুরে সহিংসতায় নিহত আসিফের বাবা আমজাদ হোসেন।
সারাদেশে তাণ্ডবের অংশ হিসেবে গত ১৯ জুলাই রাজধানীর মিরপুরে গুলিতে নিহত হন আসিফুর রহমান (১৭)। নিহত আসিফের গ্রামের বাড়ি শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার রামচন্দ্রকুড়া ইউনিয়নের কেরেঙ্গাপাড়া গ্রামে। ছয় ভাইবোনের মধ্যে আসিফ দ্বিতীয়। আসিফের বড় বোনের বিয়ে হয়েছে ঢাকায়। অন্য ভাই বোনদের নিয়ে তার মা গ্রামের বাড়িতে থাকেন। আসিফের বাবা আমজাদ হোসেন প্রায় ২০ বছর ধরে রাজধানীর মিরপুর এলাকায় পাটের ব্যবসা করছেন।
সুত্র জানায়, ছোটবেলা থেকেই শান্ত স্বভাবের আসিফ বছর খানেক ধরে রাজধানীর মিরপুর এলাকায় একটি পোশাক কারখানায় শ্রমিকের কাজ শুরু করেন। আগামী মাস থেকে বাবার ব্যবসায় সাহায্য করার কথা ছিল তার। কিন্তু গত ১৯ জুলাই সন্ধ্যা ৬টার দিকে মিরপুর এলাকায় সংঘর্ষে আসিফ গুলিবিদ্ধ হলে রাত ৯টার দিকে তার মর্মান্তিক মৃত্যু হয়। পরে ২০ জুলাই দুপুরে গ্রামের বাড়ি নালিতাবাড়ী উপজেলার কেরেঙ্গাপাড়া গ্রামের সামাজিক কবরস্থানে আসিফের মরদেহ দাফন করা হয়। তাকে হারিয়ে দিশেহারা বাবা আমজাদ হোসেন ও মা ফজিলা খাতুন। আসিফের কথা বলতে গিয়ে কাঁদছেন অন্য স্বজনেরাও। সংঘর্ষ চলাকালীন সময়ে কোন পক্ষের গুলিতে আসিফ নিহত হয়েছে তা বলতে পারেনি তার পরিবারের লোকজন। বর্তমানে আসিফের পরিবারে চলছে শোকের মাতম।
আসিফের ছবি দেখিয়ে কাঁদতে কাঁদতে তার বাবা আমজাদ হোসেন বলেন, ‘ওইদিন (১৯ জুলাই) জুম্মার নামাজ পইড়া একসঙ্গে দুপুরের খাবার খাইয়া বাবা ছেলে ঘুমাইতে যাই। বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে পুলাডা কইলো একটু বন্ধুর সঙ্গে দেখা কইরা আসি। সন্ধ্যা ছয়টার দিকে ছেলে ফোন কইরা আমাকে বলে- আব্বু তুমি তাড়াতাড়ি আসো। আমি অ্যাক্সিডেন্টে করছি। খবর পাইয়া আমি দৌড়াইয়া যখন সেখানে যাই তখনো দেখি গুলি চলতেছে। গিয়া দেখি আমার পুলার মাথার ডান পাশে গুলির চিহ্ন লইয়া মিরপুরের আলোক হাসপাতালে পইড়া আছে।’
তিনি আরো বলেন, ‘আলোক হাসপাতাল থাইক্কা রিকশায় কইরা সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে নিয়া যাই। সেখানে মাথায় ব্যান্ডেজ কইরা আমার বাপধনরে নিউরোসাইন্স হাসপাতালে নিতে বলে। রিকশায় কইরা যখন নিউরোসাইন্সে নিয়ে যাই তখন বাপে ব্যথায় কাতরাইয়া বলছিল- আমার ওপর থাইক্কা দাবি ছাইড়া দিয়ো আব্বা। আমি তোমার স্বপ্ন পূরণ করবার পাইলাম না। আমি আর বাঁচবো না। পরে নিউরোসাইন্স হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক আসিফকে মৃত ঘোষণা করেন।’
আসিফের মা ফজিলা খাতুন বলেন, ‘আসিফের শখ ছিল একটা বাইক কিনবে। দুর্ঘটনার ভয়ে আমরা তাকে বাইক কিন্যা দেই নাই। আমার বাপধন তো শেষে গুলি খাইয়া মরল। আমার কলিজার টুকরা তো কোনো রাজনৈতিক দল করত না। কোনো আন্দোলনেও যায় নাই। তাও গুলি কইরা যারা আমার বাপেরে মারছে আল্লাহ তাগো বিচার কইরো।’
আসিফের চাচাতো ভাই শাহাদাত হোসেন বলেন, ঢাকার নিউরোসাইন্স হাসপাতাল থেকে অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করে আসিফের লাশ গ্রামের বাড়িতে এনে দাফন করা হয়েছে। তাদের পরিবারে চলছে এখন শোকের মাতম।
সালাউদ্দিন/সাএ
সর্বশেষ খবর
জেলার খবর এর সর্বশেষ খবর