
উপজেলা পরিষদে কোন পদেই নেই, বেতন নেই, হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর নেই তার পরও বছরের পর বছর উপজেলা পরিষদের গুরুত্বপূর্ণ চেয়ার আঁকড়ে ধরে রয়েছেন পাবনার চাটমোহর উপজেলা পরিষদের সাবেক উপজেলা টেকনিশিয়ান ইকবাল হোসেন। যখন যে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা চাটমোহরে এসেছেন তখনই তাকে ম্যানেজ করে বহাল তবিওতে নিজের চেয়ারটি দখলে রেখেছেন তিনি। আর এ চেয়ারটি দখলে রেখে অবৈধ আয়ের টাকায় বিলাসী জীবন যাপন করছেন। তার বেতনের টাকা কোথা থেকে আসে, কে দেয় তাও অজ্ঞাত।
এমন একজন ব্যক্তি বছরের পর বছর ইউএনও অফিসে থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্যাদি হাতিয়েছেন, দেখভাল করছেন স্বয়ং বর্তমান ইউএনও’র সহযোগী হিসেবে থাকলেও চাটমোহর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাকি কিছুই জানেন না।
জানা গেছে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কার্যালয়ের সাথে সকল মন্ত্রণালয়, বিভাগ, জেলা পর্যায়ের ৫৫ টি এবং উপজেলা পর্যায়ের ৩০টি সরকারী দপ্তরকে একটি অভিন্ন নেটওয়ার্কের আওতায় আনার লক্ষ্যে বিগত শেখ হাসিনা সরকার বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের অধীনে ইনফো সরকার প্রকল্পের আওতায় ন্যাশনাল ব্যাকবোন স্থাপনের কাজ হাতে নেয়।
২০১৪ সালে ইকবাল হোসেন এ প্রকল্পে উপজেলা টেকনিশিয়ান পদে চাকরি পান। ২০১৭ সাল পর্যন্ত চুক্তিভিত্তিক মেয়াদ শেষ হওয়া সত্ত্বেও তার পর থেকে অদ্যাবধি বহাল তবিওতে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে ইকবাল। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাগণ বিষয়টি জানলেও কোন পদক্ষেপ গ্রহণ না করে তাকে দিয়ে সরকারের গুরত্বপূর্ণ গোপনীয় ফাইলসহ সমস্ত কার্যক্রম চালিয়ে নিয়েছেন, এখনো নিচ্ছেন।
ইতিমধ্যে অবৈধ পন্থায় চেয়ার দখলে রাখা এবং ইকবালের দূর্নীতির প্রতিবাদে চাটমোহরে ছাত্র জনতা গত ১৫ আগস্ট পাবনা জেলা প্রশাসক বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দেন। অভিযোগের প্রেক্ষিতে চাটমোহর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে তদন্ত করে তিন কার্য দিবসের মধ্যে প্রতিবেদন প্রেরণের নির্দেশ দেন জেলা প্রশাসক।
এদিকে ছাত্র জনতা গত রবিবার (১৮ আগস্ট) চাটমোহর উপজেলা গেটে দুর্নীতি বিরোধী মানব বন্ধন করেন। এ মানব বন্ধন থেকে ইকবালের সাত বছরের অপকর্ম তদন্ত পূর্বক শাস্তি দাবী করেন। মানব বন্ধনে ছাত্র-জনতার পক্ষে শেখ জাবের আল শিহাব, ওয়াহিদিল সরকার, ফয়সাল কবির, পারভীন সুলতানা মুক্তা, সাজেদুর রহমান সেজান, রাকিবুল ইসলাম হৃদয়, আবু সাঈদ মাসুক প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত ইকবাল হোসেনের বক্তব্যের জন্য অফিসে গিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি। পরে তার মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেন নি।
এ ব্যাপারে চলনবিল রক্ষা আন্দোলন কমিটির সদস্য সচিব ও সমাজ কর্মী এসএম মিজানুর রহমান বলেন, ইকবাল এখানে অবৈধ ভাবে চাকরি করেছে। তাকে আইনের আওতায় নিয়ে আসা দরকার। পাশাপাশি যে-সব ইউএনও তাকে দিয়ে কাজ করিয়েছেন এবং করছেন তারা এ দায় অস্বীকার করতে পারেন না। তাদেরকেও জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রেদুয়ানুল হালিম বলেন, সে এখানে কিভাবে আছে আমারও বিষয়টি জানা ছিল না। কেউ আমাকে তার বিষয়ে কখনও কোন অভিযোগ দেয়নি। বিষয়টি যেহেতু এখন আমি সহ সবার নজরে এসেছে তাকে অবশ্যই এখানে আর থাকতে দেয়া হবেনা।
সালাউদ্দিন/সাএ
সর্বশেষ খবর